আজ বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এখনও স্বপ্ন দেখেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ছিলেন আওয়ামী পরিবারে। কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতিও হয়েছিলেন। তবে একটু কাৎ হয়ে বিএনপিতে নারায়ণগঞ্জ – ৪ আসনের সংসদ সদস্য হন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তবে অতীতে নড়চড় করে সুবিধা নিতে পারলেও এখন আর সে সুবিধা পাচ্ছেন না তিনি।

ওয়ান ইলেভেনের সময়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে বাদ দিয়ে থার্ড কোন দলকে ক্ষমতায় আনার নানা পরিকল্পনা হয়েছিলো। সেসব দলকে কিংস পার্টি বলে অবহিত করা হয়। তেমনই একটি কল্যাণ পার্টি। রাজনীতির পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ওই পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ হন অঢেল সম্পদের মালিক মোহাম্মদ শাহ আলম। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মূহুর্তে জার্সি বদলের মতো বিএনপিতে এসে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন তিনি। তবে শেষতক নেম প্লেটে সংসদ সদস্য লেখার ভাগ্য জুটেনি তার। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জেলা বিএনপির সহ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

গিয়াসউদ্দিন এমপি হওয়ার পর বিএনপিতে গ্রুপিং সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের। পুরনো অনেককে বাদ দিয়ে নিজের বলয় তৈরী করে সে। তার আমলে এপিএসের হুজুগ তৈরী হয়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন এলাকায় তার এপিএস পরিচয় দিয়ে দাবড়ে বেড়ায়। এরমধ্যে দুইজনকে কেরামন-কাতিমন নামে চেনে মানুষ। দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর অভিযোগ, গিয়াস উদ্দিন নিজের বলয়ে টানতে না পারলে মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীকে শায়েস্তা করতো। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে। বিএনপির অনেক পুরনো নেতাও তার সাথে পেরে উঠতেন না। এক সময়ে বাম পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় স্থানীয়ভাবে তাকে ঝানু রাজনীতিক হিসেবে চেনে সবাই। এছাড়া সুবক্তা হিসেবেও সুনাম রয়েছে। তবে এমপি থাকাকালে নানা দুর্নাম শোনা গেছে তার। এরমধ্যে বিএনপি নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার হুকুমের আসামীও করা হয়েছিলো তাকে। দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান এর সাথে সখ্য ছিলো গিয়াসের।

শাহ আলমদের পরিবার ব্যবসায়ী পরিবার হিসেবে পরিচিত। ফতুল্লায় এ শিল্পপতি পরিবারের তেমন কোন সামাজিক উদ্যোগ নেই। অতীতে শাহ আলম স্থানীয়দের সাথে তেমনভাবে মিশতেনও না। তবে রাজনীতিতে আসার পর কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়েছে। অনেকের মতে, ওয়ান ইলেভেন হওয়ায় রাজনীতিতে  আসে শাহ আলম। তার সুপ্ত ইচ্ছা একবার অন্তত এমপি হওয়ার। ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে কিংস পার্টি ক্ষমতায় আসবে এমনটা ভেবে তিনি কল্যাণ পার্টিতে যোগ দেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় ৯ম সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির টিকেট যোগান এই ধর্নাঢ্য। ফেল করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সাথে। অল্প ভোটের ব্যবধানে হারার ফলে  ভবিষ্যত স্বপ্নের হাতছানিতে রাজনীতির প্রতি মোহ জাগে তার।

তাই নির্বাচনের  পরাজয়ের পর তিনি পদ বাগাতে শুরু করেন। অভিজ্ঞ না হলেও বিএনপি তাকে ফতুল্লার থানা বিএনপির সভাপতি করেন। হন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। এরপর স্বজন-পরিচিতজনকে পদ দেয়া আরম্ভ করেন তিনি। ল্যাং মারতে শুরু করেন সিনিয়র নেতাদের। অন্য এক শিল্পপতি নেতার সাথে মিলে সিন্ডিকেট গড়ে ত্যাগী নেতাকে বাদ দিয়ে কমিটি বাগিয়ে আনার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। কারও কারও মতে, তিনি বিএনপিতে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্ত একটি দলের নেতাকে তার আসনে মনোনয়ন দিলে কিছুটা ক্ষুন্ন হন তিনি। এরপরই জেলা বিএনপি থেকে সরে যান এমনকি ফতুল্লা বিএনপি থেকেও।

তবে জেল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জানান, ফতুল্লা থানা বিএনপি থেকে শাহ আলম পদত্যাগ করেননি। এমনকি কেন্দ্রীয় পদ থেকেও না। শুধুমাত্র জেলা বিএনপির সহ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। আর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।

দলীয় নেতাদের মতে, কিছুটা গোস্যা, কিছুটা কৌশলগত কারনে পদত্যাগ করেছে শাহ আলম। তবে এখনও এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। একই রকম কথা শোনা যায় মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বেলায়ও। গিয়াস অনুসারীদের মতে, তারেক রহমান দায়িত্বে থাকলে নারায়ণগঞ্জে গিয়াস উদ্দিন মনোনয়ন পাবেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ