আজ বৃহস্পতিবার, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে ফসলী জমি জোর পূর্বক ভরাট, কৃষকদের বিক্ষোভ

মাজহারুল ইসলাম, সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার তালতলা বাগবাড়ী এলাকায় কৃষকদের ফসলী জমি জোর পূর্বক অবৈধ ভাবে বালু ভরাটের অভিযোগ উঠেছে একটি কোম্পানীর বিরুদ্ধে। এতে ওই এলাকায় পাঁচ গ্রামের এক হাজার পরিবার এক সপ্তাহ যাবত পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কৃষকদের ফসলী জমি ভরাটের প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে কয়েক গ্রামের কৃষকরা একত্রিত হয়ে বাগবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের তালতলা বাগবাড়ী এলাকায় গ্যাষ্টন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানী কৃষকদের ফসলী জমি ক্রয় না করেই জোর পূর্বক অবৈধ ভাবে বালু ভরাট করে ফেলছেন তারা। অপরিকল্পিত ভাবে বালু ভরাটের ফলে কাউরিয়াপাড়া, বাগবাড়ীয়া, বৈরবেরটেক, ব্রাহ্মনবাওগাসহ প্রায় পাঁচ গ্রামের এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে। চলাচলের রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্কুল মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সহ শত শত এলাকাবাসীরা চলাচলের মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বাড়ীতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। ওই কারখানা বিষাক্ত বর্জ্য ও এসিডের পানি এবং জেনারেটরের বিকট শব্দে শিশু কিশোর সহ অনেকে চর্ম, পানিবাহীত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে কয়েক গ্রামের কৃষকরা একত্রিত হয়ে তাদের জমিতে জোর পূর্বক বালু ভরাট ও দখলের প্রতিবাদে বাগবাড়ি এলাকায় বিভোক্ষ মিছিল করে ইউএনও কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে তালতলা বাগবাড়ি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গ্যাষ্টন নামে একটি কোম্পানীর মালিক ড্রেজার বসিয়ে কৃষকদের ফসলী জমি অবৈধ ভাবে জোর পূর্বক বালু ভরাট করছেন। বালু ভরাটের কাজে সহযোগীতা করছেন জামপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আল আমিন, গোলজার হোসেন, মনির হোসেন, তাইজউদ্দিন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর নূর সহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ক্ষমতাসীন দলের লোকে বালু ভরাটের কাজে সহযোগীতা করায় সাধারণ কৃষকরা তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। অপরিকল্পিত ভাবে বালু ভরাট ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে তালতলা থেকে আমবাগ সড়কটি পানিতে ডুবে গেছে। এতে মহজমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সোনারগাঁ আইডিয়াল কলেজ, মালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কাজীপাড়া মাদ্রাসা ও লালপুরি মাদ্রাসা সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছে।

কাজীপাড়া গ্রামের কৃষক এমরান হোসেন বলেন, আমাদের ৩৮ শতাংশ জমি জোর পূর্বক বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলেছেন কোম্পানীর লোকেরা। আমরা বালু ভরাটে বাধা দিলেও তারা কোন ভাবেই আমাদের বাধা মানছে না।

বৈরভেরটেক গ্রামের কৃষক শরিফ মিয়া বলেন, আমাদের শেষ সম্বল এক বিঘা জমি চাষ করে কোন রকমে বৌ-বাচ্চা নিয়ে ডাল ভাত খেয়ে বেচে আছি। আমার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে জোর পূর্বক আমার জমি বালু ভরাট করে দখল করে নিয়েছে তারা।

বাগবাড়িয়া গ্রামের হযরত আলী ও তোফাজ্জল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি ক্ষমতার জোর দেখিয়ে দখল করে বালু ভরাট করছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা। তাদের ভয়ে আমার মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছি না।

ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন ও বৈরভেরটেক গ্রামের গহন আলী বলেন, আমাদের জমিতে জোর পূর্বক বালু ভরাটের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

মনির হোসেন ও হযরত আলী বলেন, কৃষকদের ফসলী জমি বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় গত ১৫ দিন যাবত আমাদের এলাকার পাঁচ গ্রামের এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে।

আব্দুর জাব্বার ও কেরামত আলী বলেন, গ্যাষ্টন ব্যাটারী কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও এসিডের পানি সাড়া এলাকা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে চর্ম্যরোগ সহ বিভিন্ন পানি বাহীত রোগে কমপক্ষে বিশজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বাগবাড়িয়া জামে মসজিদের সভাপতি আমিন মিয়া বলেন, এই মসজিদের প্রতিদিন শত শত মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। তাদের জেনারেটরের বিকট শব্দ, বিষাক্ত বর্জ্য ও এসিডের পানিতে মসজিদে আসা যাওয়ার পথে মারাত্মক সমস্যায় পরতে হচ্ছে আমাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা আল আমিন, গোলজার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর নূর সহ সকলে একই সুরে বলেন, আমরা অবৈধ ভাবে কৃষকদের বালু ভরাটের সঙ্গে কোন ভাবেই জড়িত নই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্যাষ্টন কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত জামিল বলেন, আমাদের কোম্পানীর ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট করা হচ্ছে। আমরা কারো জমি জোর পূর্বক অবৈধ ভাবে বালু ভরাট করিনি।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহিনুর ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ