আজ রবিবার, ২রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজাদের নয়া কৌশল

স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপির রাজনীতিতে সর্বাধিক আলোচিত সমালোচিত এক নাম নজরুল ইসলাম আজাদ। আড়াইহাজরের বাসিন্দা হলেও তিনি তালুবন্দি করতে চান গোটা নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে। তার বিরুদ্ধে পদ-পদবী ও মনোনয়ন বাণিজ্যের ব্যবসার অভিযোগও বেশ পুরনো। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরীর নেপথ্যেও আজাদের কূটচাল রয়েছে বলে শোনা যায় প্রায় সময়ই। সমালোচিত সেই ব্যক্তিই এবার নিজেকে জাহির করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ছবি তুলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে ছবি ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে দলের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে জাহির করে যাচ্ছেন। ছবি দেখে বিএনপি নেতারা শোলক টেনে বলছেন, ‘এমনিতেই পদ বেপারী, তার উপর যেন ঢোলে বাড়ি!’
জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন। সম্প্রতি বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও আড়াইহাজারের সমালোচিত বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সাথে একত্রে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন প্রচার-মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেছেন, ‘এই ছবির মাধ্যমে আজাদ বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক- এমনটা জাহির করে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালানো হবে কিনা- তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
প্রবীন নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের সাথে হাস্যোজ্জ্বল ছবি ব্যবহার করে নজরুল ইসলাম আজাদ তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে জাহির করলেও বাস্তবতায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। বিএনপিতে যারা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেনি, তাদেরই একজন এই নজরুল ইসলাম আজাদ। তিনি তারেক রহমান বিরোধী বলয়ের নেতা মোসাদ্দেক হোসেন ফালু এবং তারেক রহমানের প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সর্মিলা রহমান সিঁথির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির নেতৃত্ব তারেক রহমানের কাঁধে উঠুক তা সর্মিলা রহমান সিঁথি এবং ফালু সহ নজরুল ইসলাম আজাদ এবং তাদের বলয় কখনই চাননি বলে কথিত আছে। তবে শেষ পর্যন্ত যখন তারেক রহমানই বিএনপির হাল ধরেছেন, তখন বিএনপিতে টিকে থাকতে আনুগত্যের বিকল্প নেই- সেই বাস্তবতায় নজরুল ইসলাম আজাদ তারেক রহমানের প্রতি মুখে আনুগত্য দেখালেও ভেতরে কূটচাল চেলে যাচ্ছে। যার প্রমাণ মিলে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতির দিকে তাকালে।
তথ্য বলছে, বিএনপির রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি করে দলকে তার কুক্ষিগত করার মাধ্যমে দূর্বল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত নজরুল ইসলাম আজাদ। জেলা থেকে শুরু করে মহানগর বিএনপি এবং যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনেও তা পরিলক্ষিত হয়েছে। বিএনপির মধ্যে আলাদা বলয় এবং সত্বা তৈরী করতে বিভিন্ন কমিটির দায়িত্বশীল নেতাকে ইতিমধ্যেই হাত করে ফেলেছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। এবার তারেক রহমানের সাথে ছবি তুলে তার খবরদারীর মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলা হবে বলে গুঞ্জন চলছে তৃণমূলে।
জানা গেছে, স্থানীয় বিএনপি নেতারা নজরুল ইসলাম আজাদকে ‘পদ বেপারী’ হিসেবে চেনেন। আজাদ ইতিপূর্বে যুবদল নেতা থাকাবস্থায় অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়ানোয় তাকে বহিস্কার করেছিলো দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে নজরুল ইসলাম আজাদ জেলা বিএনপির কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়ার কথা বলে সোনারগাঁয়ের আজহারুল ইসলাম মান্নানের কাছ থেকে দশ লাখ টাকার চেক নিয়েছিলেন। যা চেকের ছবিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিলো।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও স্থানীয় পাওনাদারদের হামলার শিকার হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। যদিও তা আওয়ামী লীগের হামলা বলে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করেছিলেন বলে বিএনপি নেতারাই গণমাধ্যমে বক্তব্য রেখেছিলেন।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপিতে কোন পদ-পদবী না থাকলেও বিগত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব খাটিয়ে আসছে নজরুল ইসলাম আজাদ। আড়াইহাজার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অবজ্ঞা করে বহিরাগতদের প্রাধান্য দিয়ে হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন এই নেতা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় গ্রুপিং লবিং আর টাকা খরচ করে মনোনয়নও হাসিল করে নেন আজাদ। তাছাড়া তিনি বিদেশ নেওয়া, সুদের নামে, ব্যবসায় মুনাফা দেওয়া ও পার্টনার করে নেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেন বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে আড়াইহাজারের মানুষের মুখে।
আড়াইহাজার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘একটি মিল কারখানা কিনে দেওয়ার কথা বলে হাজী ওবায়দুল্লাহ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা নিয়েছিল নজরুল ইসলাম আজাদ। কিন্তু টাকা নিলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর কিনে দেয়নি এবং টাকা ফেরত না দিয়েও ঘুরাতে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছিল। আজাদের অতীত রেকর্ড বলে, সে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করে। আর পদপদবী পাইয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠলেও আমার কথা হচ্ছে মানুষ তাকে টাকা দেয় কেন।’
এই বিষয়ে আড়াইহাজারের বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন আনু বলেছিলেন, ‘আজাদ যুবদলে থাকাবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া নিজেই তাকে বহিস্কার করেছিলো। আজাদ স্থানীয় বিএনপির সর্বনাশ ডেকে আনছে। স্থানীয় বিএনপি ধ্বংসের নেপথ্যে রয়েছে সে। তাকে পদ-পদবীর দোকানদার বলেও অনেকে আখ্যায়িত করে থাকে। সে পদ বিক্রি করে বেড়ায়।’

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ