আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভুল ইনজেকশনে আলভির মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাবা-মা’র আদরের মেয়ে, বড় ভাইয়ের একমাত্র বোন আয়েশা আক্তার আলভি। বয়স মাত্র ১৪। স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রতিবেশীদের কাছে মেধাবী ছাত্রী হিসেবে বেশ পরিচিতি ছিলো তার। পাশাপাশি ঘরের প্রতিটি কাজ মায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আগে ভাগেই শেষ করতো আলভি। লেখাপড়া ও ঘরের কাজ শেষ করে কিছুটা সময় নিজেদের বাড়ির ছাদে বান্ধবীদের সাথে খেলায় মেতে উঠতেন। অকারণে বাড়ির বাইরে বের হতো না সে। সব কিছু মিলিয়ে খুব ভাল দিন কাটছিলো আলভি ও তার পরিবারের। তবে, একটি ঝড়ে সব যেনো এখন স্মৃতি হয়ে গেলো।

গত ১৫ আগস্ট বিকেলে প্রতিদিনের মতো সমবয়সীদের সাথে ছাঁদে খেলতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে পরে ডান পায়ের ব্যথা পায় আলভী। পরে চিকিৎসা নিতে গ্রীন ডেলটা নামের স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলে চিকিৎসক জানায় তার একটি হাড় ভেঙে গেছে। পরে ২ দিন চিকিৎসা দিয়ে ব্যথা না কমায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার শাহীন জানায় অপারেশন করালে ভালো হবে। অন্যথায়, আলভির পা পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। তাদের কথায় পরিবারের লোকজন একপ্রকার ভয় পেয়ে অপারেশন করতে রাজি হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৮ আগস্ট বিকেলে ডাক্তার শাহীনের অদক্ষ সহকর্মীরা আলভিকে অজ্ঞান করার ইনজেকশন পুশ করে অস্ত্রপচারের জন্য প্রস্তুত করে। তবে কক্ষে নেয়ার পর সকলেই বুঝতে পারে অজ্ঞান করার ইনজেকশন তারা ভুল জায়গায় পুশ করেছে।

আর তাই অজ্ঞান করার জন্য সাথে সাথে আরও একটি ইনজেকশন পুশ করে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুটি অজ্ঞান করার ওভার ডোজের কারনে মূহুর্তের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যায় আলভীর পুরো শরীর। পরে অপারেশন সম্পূর্ণ করলেও আর জ্ঞান ফিরেনি তার। একপর্যায়ে কোমায় চলে যেতে হয় আলভীকে। তার শরীরের এমন অবস্থা দেখে ডাক্তার ও গ্রীন ডেলটা কর্তৃপক্ষ জানায় আলভির আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। পরে রাতেই তড়িঘড়ি করে যাত্রাবাড়িস্থ তাদের অন্য শাখার আইসিইউ সাপোর্টে রাখে। টানা ৩ দিন সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলেও পরিবারের কারও সাথে আলভিকে দেখা করতে দেয়া হয় নি বলে জানায় আলভির পরিবার। পরে গতকাল রোববার সকালে বড় ভাই তাকে দেখতে যায়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ভাবে বাধা দেয়। এক প্রকার জোর করে আইসিইউর ভিররে প্রবেশ করে আলভির বড় ভাই। তবে ভিতরে গিয়ে বোনের চেহারা দেখেই কান্নায় ভেঙে পরে সে। পরে ডাক্তার জানায় অতিরিক্ত ব্যথার কারনে তার বোনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, ফতুল্লার পাগলা নয়ামাটি এলাকায় মিজান মিয়র মেয়ে আয়েশা আক্তার আলভি (১৪)। পাগলা উচ্চ বিদালয়ের ৮ম শ্রেনীর একজন মেধাবী ছাত্রী তিনি। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে আলভির এমন খবর নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই পরিবারে কান্না যেনো কোনো ভাবেই থামছে না। পরিবার ও এলাকাবাসির দাবি, জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

নামধারী ক্লিনিক খুলে ভুল চিকিৎসা প্রয়োগ করে রোগীর মৃত্যু দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম নয়। তাছাড়া পাগলা বাজারে গ্রীন ডেলটা ক্লিনিকের নামে এর পূর্বেও অনেকের অভিযোগ রয়েছে, টেষ্ট রিপোর্ট ভুল দেয়া তাদের নিত্যদিনের ভুল।

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেছি। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে কিনা সেটা পোস্ট মর্টেমের পর জানা যাবে। এছাড়া প্রাথমিক তদন্ত চলছে।’

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। এ সময় নিহতের পরিবারকে একটি লিখিত অভিযোগ করতে বলেন সিভিল সার্জন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ