সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
টেন্ডার সম্রাট মাদক ও অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানের বিকল্প খুঁজছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। শামীমের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘কোনো ঠিকাদারের অপারগতার কারণে সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজই আটকে থাকবে না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে আমরা আইন অনুযায়ী নোটিস পাঠাব। তিনি যদি কাজ এগিয়ে নিতে না পারেন, কি পরিমাণ কাজ তিনি করেছেন সেটাকে আমরা পরিমাপ করে প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করব। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করব। কোনোভাবেই এসব কাজ বন্ধ থাকবে না।’ তবে এ প্রক্রিয়া শেষ করতে কতদিন লাগতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বলছেন, চুক্তি বাতিল করে নতুন করে কাজ শুরু করতে গেলে লম্বা সময় লাগবে।গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫৩টি প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। এসব প্রকল্পের চুক্তিমূল্য চার হাজার ৫৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শামীমের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এককভাবে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ করছে। বাকি ৪০টি প্রকল্পের কাজ যৌথভাবে চলছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এসব প্রকল্পের ২৪টির অনুমোদন দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী। এছাড়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তিনটি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। বাকি ১৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
জি কে শামীমের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে একটি তালিকা করেছে গণপুর্ত অধিদপ্তর।
এর মধ্যে এককভাবে জিকেবির হাতে থাকা ১৩টি প্রকল্পের কোনোটিই পুরোপুরি শেষ হয়নি। কোনো প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৯৯ শতাংশ। আবার কোনো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ।
# ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নির্মাণকাজের ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ।
# রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের চারটি অংশের গড় ভৌত অগ্রগতি ৭১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
# ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় নির্মাণকাজের ভৌত ৯৫ শতাংশ, আর্থিক ৯২ শতাংশ।
# গাজীপুরে পাঁচটি র্যাব কমপ্লেক্স এবং একটি র্যাব ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত ৯৯ শতাংশ, আর্থিক ৯৪ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
# সচিবালয়ের নির্মাণাধীন নতুন ২০ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত পূর্ত এবং অভ্যন্তরীণ স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক কাজের ভৌত ৮০ শতাংশ এবং ৫২ শতাংশ আর্থিক আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে।
# আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থপোডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, নিটোরের এলইডি বাতি স্থাপন ও বৈদ্যুতিক কাজের ১০০ শতাংশ ভৌত এবং ৯৯ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে।
# শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সম্প্রসারণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৩২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩১ শতাংশ।
# আজিমপুরে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ।
# সচিবালয়ে নতুন ২০ তলা ভবনের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ।
# মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আধুনিকায়ন প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ, আর্থিক ৬৭ শতাংশ।
উল্লেখ্য,গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের ১১৩ নম্বর বাসা থেকে যুবলীগ নেতা জিকে শামীমকে আটক করা হয়। এরপর একই এলাকায় অবস্থিত তার মালিকানাধীন জিকে বিল্ডার্সের অফিসে (১৪৪ নম্বর) অভিযান চালিয়ে ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজ ও নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা জব্দ করে র্যাব। এছাড়া তার কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র, দেহরক্ষীদের ৭টি শটগান-গুলি এবং বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি জামায়াতের শাসন আমলে রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ঠিকাদারি কাজ করেছেন জিকে শামীম। শুধু তাই নয় গণপূর্ত ভবনের বেশি ভাগ ঠিকাদারি কাজ তিনি করেন।বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে গণপূর্তে এই শামীমই ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল পাস করার পর তাঁদের গ্রামে দেখা যায়নি।