রমজান শব্দটি আরবি ‘রামজুন’ থেকে উদ্ভুত যার অর্থ উত্তপ্ত হওয়া, দগ্ধ হওয়া, পুড়ে যাওয়া। রমজান বলতে রমজান মাসকে বুঝানো হয়েছে। রমজান মাস আরবি নবম মাস। রোজা ফারসি শব্দ এর আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে সাওম। আর ‘সাওম’ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আন্তসংযম যার ব্যাখা সাধারনত অন্যান্য মাসে জীবন যাত্রা যেভাবে পরিচালিত হয় তার কিছু বিশেষ পরিবর্তন থাকবে এই মাসে।
শরীয়তের পরিভাষায় সুবেহ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা।
রোজা ফরজ হওয়ার কারন :
পূর্বের নবী ও রসূলগণের মধ্যেও রোজার প্রচলন ছিল। বর্ণনায় আসছে হযয়ত দাউদ (আ:) এক বৎসর যাবত রোজা পালন করতেন, এই রোজার বৈশিষ্ট্য ছিল প্রতি একদিন অন্তর অন্তর রাখতেন। এবং হযরত মুসা (আ:) এর রোজা ছিল একটানা দীর্ঘ চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এখানে উল্লেখ্য যে মুসা (আ:) এবং তার কওমের লোকেরা সেহরি গ্রহন করতেন না। এ সকল বর্ণনা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) শুনলেন, পরবর্তীতে মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু তায়ালার নিকট হুজুর (সা:) শেষ উম্মতের জন্য পূর্বের নবীদের চেয়েও বেশি সওয়াব লাভের আশায় আল্লাহর নিকট দরখাস্ত করেন। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতেই মহান আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) এর উম্মতের জন্য ৩০ দিন অর্থাৎ ১ মাস রোজা প্রথা পালন করার অনুমোদন গ্রহন করেন। যার মাধ্যমে পূর্বের নবী রাসূলগণের সওয়াবের চেয়েও মুহাম্মদ (স:) এর উম্মতের সওয়াবের পরিমান অধিক হবে। এই রোজার মাধ্যমে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি অর্জন হয়। রোজার মাধ্যমে প্রথম ১০ দিনের রহমতের দরজা সমূহ খোলে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ১০ দিনে রোজায় মাগফেরাতের মাধ্যমে জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শেষ ১০ দিনের মাধ্যমে নাজাত বা মুক্তি লাভের ঘোষণা প্রদান করা হয়। রোজা জান্নাতে প্রবেশের একটি উত্তম মাধ্যম। সকল ইবাদতের ধারাবাহিক ছাওয়াবের সংখ্যা নির্ধারিত কিন্তু রোজার সংখ্যা ব্যতিক্রম, মহান আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে বলেন, রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে দিব যত খুশি। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত সওয়াব লাভের আশায় রোজা পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। বিশ্ব নবী এবং নবীদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) বলেন আমার উম্মাতের জন্য মহান আল্লাহ্ তায়ালা পাঁচটি জিনিস দান করেছেন যা পূর্বের কোন উম্মাতের জন্য দান করেন নাই।
(১) প্রথম রাতে আল্লাহ দৃষ্টিপাত করেন, আর যার উপর দৃষ্টিপাত হয় তাকে শাস্তি দিবেন না।
(২) ফেরেশতারা তাদের জন্য ক্ষমা পার্থনা করেন।
(৩) ফেরেশতাদের কে বলেন আমার বান্দাদের জন্য তৈরী হও, এবং সজিত হও, অতি সত্তর দুনিয়ার ক্লান্তি
থেকে আমার কাছে সস্তি চাইবে।
(৪) রোজাদারের মূখের গন্ধ মেশক আম্ভরের চেয়েও সুগন্ধ হবে।
(৫) যখন শেষ রাত আসে তখন তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) মসজিদে মিম্বরের প্রথম সিড়িতে কদম রাখিলে হযরত জিব্রাইল (আ:) এসে হযরত মুহাম্মদ (স:) আমিন বলতে বলেন, এভাবে তিনি উচ্চস্বরে তিন সিড়িতে তিনবার আমিন বললেন- উপস্থিত সাহাবীগণ বিনীত ভাবে এর ব্যাখা জানতে চাইলেন, হুজুর আপনি তো কখনো এমন ভাবে আমিন বলতে শুনি নাই । রাসূল (স:) বলেন হযরত জিব্রাইল (আ:) আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সংবাদ নিয়ে আসছেন যে ব্যক্তি পিতা-মাতা কে পাইল অথবা একজনকে পাইল তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলো না সে জান্নাত পাবে না। আর যে ব্যাক্তি পবিত্র রমজান মাস পেল অথচ রোজা পাালন করলো না সে ধ্বংস হোক। আর যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (স:) এর নাম শোনার পর সল্লালহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম (দ:) পড়লো না সেও ধ্বংস হোক।
আমি হযরত জিব্রাইল (আ:) জিজ্ঞাসা করলাম ইহা কি আল্লাহর হুকুম, হযরত জিব্রাইল (আ:) বললেন হ্যাঁ। আমি বললাম আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা মুফতি ওবায়দুল হক।