আজ মঙ্গলবার, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশের অবহেলা পেলে ব্যবস্থা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

নগরীর দেওভোগ এলাকার স্কুল ছাত্রী জিসা মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে জেলে তিন আসামি। তারা আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। দুই দফায় শেষ হয়েছে আসামিদের রিমান্ড। অথচ নিখোঁজের ৫১ দিন পর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ফিরে এসেছে জিসা মনি। এ নিয়ে শহরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের তদন্ত ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে। গণধর্ষণ ও হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দেয়া জিসা মনির ফিরে আসা এখন টক অব দ্যা টাউন।

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সদর মডেল থানায় এসে উপস্থিত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান। সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিখোঁজ অভিযোগ পাবার পর আমরা জিসা মনির সঙ্গে যার কথা হয়েছে সেই কল লিস্ট চেক করি। সেখানে আব্দুল্লাহ নামের একজনের নাম আসে। পরবর্তীতে জিসা মনির বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করে। মামলায় প্রধান আসামি করে আব্দুল্লাহকে এবং দ্বিতীয় আসামি করে রকিবকে। সে অনুযায়ী আমরা তাদের গ্রেফতার করি। পরে তারা বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দেয়, তারা একটি মেয়েকে নৌকাতে ঘুরিয়ে ধর্ষণ করে নদীতে ফেলে দেয়।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে জিসা মনি উদ্ধারের পর আমরা জানতে পারি, আসলে তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। ৪ জুলাই সে আব্দুল্লাকে ফোন করে এবং আব্দুল্লাহ তাকে শহরের একটি বাজারে আসতে বলে। কথা অনুযায়ী জিসা মনি বাজারে যায় এবং একটি চিপস খেতে চায়। আব্দুল্লাহ চিপস আনতে গিয়ে আর ফিরে আসে না। ফলে জিসা মনি তার সাবেক প্রেমিক ইজিবাইক চালক ইকবালকে ফোনে তাকে নিয়ে যেতে বলে। ইকবাল এসে জিসা মনিকে নিয়ে যাত্রাবাড়ি তার ভাইয়ের বাসায় যায়। জিসা মনি সেখানে থাকতে না চাওয়ায় তারা নারায়ণগঞ্জ গোগনগর এলাকায় ইকবালের খালাতো ভাই সুজনের বাসায় যায় এবং রাত্রিযাপন করে।

পরবর্তীতে সেখান থেকে বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় বাসা ভাড়া নেয় এবং জিসা মনিকে বিয়ে করে সেখানে ১ মাস ২০ দিন অবস্থান করে। রোববার দুপুরে ইকবাল বাড়ি ফিরে দেখে তার স্ত্রীর মন খারাপ। জিসা মনি জানায়, তার বাবা-মার জন্য তার মন খারাপ। পরে ইকবাল জিসা মনির পরিবারের কাছে ফোন দেয় আর বলে, জিসা মনির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে এবং তারা ভালো আছে। এ সময় জিসা মনি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে এবং বিকালে ৪ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। পরে জিসা মনির মা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তদন্তকারী কর্তমর্তা শামীম তাকে নিয়ে জিসা মনিকে উদ্ধার করে। এখন পর্যন্ত এতটুকুই জানা গেছে। বাকিটা তদন্ত শেষে জানা যাবে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি।

পুলিশি নির্যাতনের মুখে আসামিরা ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছে আসামির স্বজনদের এমন অভিযোগের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন ওই মেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ফিরে এসেছে। বলছে, এক ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। যদি পুলিশের দায়িত্ব অবহেলা পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামির স্বজনদের অভিযোগ প্রেক্ষিতেও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নগরীর দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার পঞ্চম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী জিসা মনি (১৫) গত ৪ জুলাই নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজির পর ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় একটি জিডি করেন জিসার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। এক মাস পর ৬ আগস্ট একই থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২২) ও তার বন্ধু বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিবকে (১৯)। ওইদিনই তাদের গ্রেফতার করা হয়। একই ঘটনায় দুই দিন পর গ্রেফতার করা হয় বন্দরের একরামপুর ইস্পাহানি এলাকার বাসিন্দা নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)।

গত ৯ আগস্ট পুলিশ জানায়, জিসা মনিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয় আসামিরা। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় এই ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানায় পুলিশ। অথচ গত ২৩ আগস্ট দুপুরে বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকায় সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায় নিখোঁজ জিসা মনিকে। এ ঘটনায় চারদিকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

এদিকে আসামিদের স্বজনরা বলছেন, পুলিশি হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতনের মুখে তারা ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পুলিশ এই ঘটনা সাজিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন আসামির স্বজনদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে কয়েক হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ