আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্যাসের চুলো ও পাইপলাইন লিকেজের ফলে একের পর এক দুর্ঘটনায় নির্মমভাবে মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো নিদারুণ কষ্টে জীবন পার করছে। বড়দের ভুলে হাসপাতালের বেডে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরায় ছোট্ট শিশুরা। অবুঝ শিশুর কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। শত চেষ্টা করেও সে কান্না থামাতে পারে না চিকিৎসকরা। সম্প্রতি ফতুল্লার একটি এলাকায় এমন ঘটনায় অগ্নিদ্বগ্ধ ৮ জনের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫জন মারা গেছেন। ঘটনার দিন মায়ের শরীরে আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হয়ে মারা গেছেন এক ছেলে। এমন অস্বাভাকি মৃত্যুতে হতভম্ভ মানুষ আর প্রযুক্তি ছোঁয়ায় সব প্রাপ্তির যুগে এমন মৃত্যু মানতে কষ্ট হচ্ছে সচেতন মানুষদের। তাদের মতে, সচেতনতাই কেবল এমন দুর্ঘটনা রোধ করতে পারে।

জানা গেছে, পাইপ লাইন থেকে গ্যাস লিকেজ হলে শব্দ হবে। গ্যাসের একটা গন্ধও বের হবে। হাইপ্রেসার পাইপ লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নেয়া ছাড়াও আরও দুটি কারণে গ্যাসের চুলা থেকে বিস্ফরণ ও অগ্নিকা- ঘটে। এর একটি হলো পাইপের লিকেজ ও চুলার চাবি নষ্ট হয়ে গেলে। এমন অবস্থায় রুমের দরজা, জানালা বন্ধ থাকলে বিদ্যুতের সুইচ চাপলেও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ বাসার বা কর্মক্ষেত্রের চুলার আশপাশের গ্যাসলাইন লিক বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। লিকটি যদি চুলার নব বা সুইচের ওপর তৈরি হয়, তাহলে কেবল নব ঘুরালে বা সুইচ অন করলেই গ্যাস বের হবে। এ সময় অবশ্যই চুলা বন্ধ রাখতে এবং দক্ষ কারিগর দিয়ে সারিয়ে নিতে হবে। গ্যাসলাইনে কোনো ক্রটি বা জরুরি অবস্থার জন্য তিতাস গ্যাসের সঙ্গে সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, গ্যাসের দুর্ঘটনা রোধে প্রথমেই দরকার জনসচেতনতা। গ্যাস ব্যবহার সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইন ফাটা থাকে। তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের অসচেতনতার জন্য কিছু দিন পর দূর্ঘটনা ঘটছে। তাদের উচিত এ গুলো মনিটরিং করে খোঁজে বের মেরামত করা।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সির্ভিল ডিফেন্স’এর উপ পরিচালক আরেফিন সিদ্দিক জানান, দীর্ঘ দিনের পুরনো গ্যাস লাইন হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পাইপ ছিদ্র হয়ে যায়। সেই ছিদ্র স্থান দিয়ে লিকেজ করে গ্যাস বের হয়। যদি কোন রুমে মধ্যে পাইপ লাইন ছিদ্র হয় ও সময় রুমের দরজা, জানালা বন্ধ সে অবস্থায় আগুনের যে কোন বস্তু দিয়াশলাই, এমনকি বিদ্যুাতের সুইচও চেপে ধরা হয় তাহলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। তিনি আরও জানান কোথাও যদি এ ধরনের ছিদ্র দেখা সাথে সাথে সেই রুমের দরজা, জানালা খুলে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে জানাতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্মকর্তারা জানান, হাইপ্রেসার পাইপ লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নেয়া। ছিদ্র পাইপ লাইন থেকে গ্যাস বের হওয়া ও চুলা জ্বালিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া। এসব কারণে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। কোথাও এ ধরনের সমস্য দেখলে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের জানাতে হবে বলে জানান তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, ১৭ ফেব্রয়ারী ভোর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়ায় একটি ৫ তলা বাড়ির নীচতলার ফ্ল্যাটে জানালা দরজা বন্ধ অবস্থায় রান্না ঘরে গ্যাসের চুলা দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালাতে গেলে ঘরের মধ্যে জমাট হওয়া গ্যাসের আগুনে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে একই পরিবারের নারী পুরুষ ও শিশুসহ ৮ জন দগ্ধ হয়। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসাপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে মা নূরজাহান বেগম (৭০) ১৭ ফেব্রয়ারী এবং পরের দিন ছেলে কিরন মিয়া (৫২)। ৭ দিন পর আবুল বাশার ইমন (২৫) মারা যায়। সোমবার রাত সাড়ে ১১ টায় আপন (১২) এবং মঙ্গলবার সকালে হিরন মিয়া (৩২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যায়। এই পরিবারের ৮ জন অগ্নিদগ্ধের মধ্যে ৫ জন মারাগেছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৯ সালে ২৭ জুলাই রূপগঞ্জে হাটাবো এলাকার পারটেক্স পেপার মিলে গ্যাস পাইপ লাইনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এবাদত (৩৮) নামে একজন নিহত হয়। আহত হয় আরও কয়েকজন শ্রমিক। ২২ এপ্রিল রূপগঞ্জে একটি দ্বিতীয় তলা বিল্ডিং বাড়িতে বিকট শব্দে তিতাস গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গ্যাস বিস্ফোরণে ওই বিল্ডিংয়ে বসবাসরত দুই শ্রমিক শামিম (৩০) ও রাকিব (২৫)। নিহত হয়। তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের দাবি ছিলো হাই-প্রেসার পাইপ লাইন থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণেই এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে একই রকম দুর্ঘটনায় অগ্নিদ্বদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ