আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৮ দিনে বাংলাদেশে এসেছে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক ঃ জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গত আট দিনে সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারে পৌঁছেছে।

জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার বা ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তা ভিভিয়ান ট্যান বলেছেন, যে ভাবে লোক আসছে তাতে আর কয়েক দিনেই সীমান্তে যে শিবিরটি আছে তা পুরো ভরে যাবে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেস সেখানে একটি মানবিক দুর্যোগ তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে, কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লোকেরা বলছে, সৈন্যরা তাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এবং তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। মিয়ানমারের সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে, সেখানে কেবল একটি রোহিঙ্গা গ্রামেই সাতশো বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে তারা স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখতে পাচ্ছে।

এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িপ এরদোয়ান যেভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে তাকে রীতিমত গণহত্যা বলে বর্ণনা করেন।

সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো প্রতিদিনই হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ পালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের সর্বশেষ হিসেবে আজকে পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে।

যদিও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সেজন্য তারা সীমান্তে তৎপর রয়েছেন। কিন্তু গত দু’দিন ধরে সীমান্তে কিছুটা শিথিলতা দেখানো হচ্ছে বলে সূত্রগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে বলছে।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলছিলেন, একেবারে দুস্থ মহিলা এবং শিশুদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করা হচ্ছে।

“আমরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। ফিরিয়ে দেয়ার পরও মানবিক দিক বিবেচনা করে যারা নিতান্তই অসুস্থ বা বৃদ্ধ মহিলা, শিশু এবং বেশ কিছু আহত, তাদেরকে তো আমাদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা, এগুলো না দিলেই নয়। এটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগেও বলেছেন, এখনো আমরা সেটা দিযে চলেছি।”

এইচ টি ইমাম আরও বলেছেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যারা এই আক্রমণের শিকার,তাদের নিরাপত্তা দিতে হলে মিয়ানমারের মধ্যেই দিতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক রেড ক্রসই করতে পারে।”

হাজার হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় এবং খাবারের জন্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

কক্সবাজার থেকে রেড ক্রিসেন্ট এর সহকারি পরিচালক সেলিম আহমেদ বলছিলেন, গত ২৫ শে অগাষ্ট মিয়ানমারে সংঘাত শুরুর পর পরই রোহিঙ্গা যারা বাংলাদেশে ঢুকেছে, তাদের বেশির ভাগই উখিয়ার কুতুপালং এ নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

রোহিঙ্গা গ্রামের ৭০০ বাড়িতে আগুন

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মিয়ানমার থেকে পাওয়া নতুন উপগ্রহ-চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে একটি রোহিঙ্গা মুসলিম গ্রামের ৭০০-রও বেশি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, এসব ছবি গভীরভাবে উদ্বেগজনক, এবং এতে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসলীলার মাত্রা আসলে আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চাইতে অনেক বেশি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর গত সপ্তাহে হাজার হাজার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঢুকেছে।

পালিয়ে আসা এই শরণার্থীরা বলছে, মিয়ানমারের সৈন্যরা তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

তবে মিয়ানমারের সরকার এ কথা অস্বীকার করেছে। সরকার বলছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনী গত মাসে ঘটা একটি আক্রমণের মোকাবিলা করছে – যাতে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের হাতে ২০টি পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্ত হয়েছিল।

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকেছে। অন্য আরো প্রায় ২০ হাজার লোক সীমান্ত এলাকায় নাফ নদীর তীর বরাবর আটকে রয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অফিস বলছে, রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪০০ লোক নিহত হয়েছে – যার অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম।

 

মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে, বিশ্ব আছে চোখ বন্ধ করে : এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমার সেদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে।

ইস্তাম্বুলে ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া এক বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট এরদোহান বলেন, “সেখানে গণহত্যা চলছে। যারা গণতন্ত্রের আবরণে এই গণহত্যার প্রতি চোখ বন্ধ করে আছে – তারা এর সহযোগী।”

এরদোয়ান বলেন তিনি এ মাসের শেষে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে এ বিষয়টি তুলবেন। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের মহাসচিব ও অন্য মুসলিম নেতাদের সাথে কথা বলেছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথেও কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টএরদোয়ান, এবং তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেন।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অফিস বলছে, রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪০০ লোক নিহত হয়েছে – যার অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম।

 

রাষ্ট্রপতিকে এরদোগানের ফোন
সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির জন্য সমবেদনা ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে তুরস্ক।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়িপ এরদোয়ান বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোন করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য তুরস্কের জনগণের আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন ও এযাবতকালে রোহিঙ্গা

জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এবং চলমান সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপসমূহের প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা জানানো হয়েছে।

টেলিফোনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি ও মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চলমান নিপীড়ন ও মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি রাষ্ট্রপতিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এবিষয়ে তুরস্ক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে অবহিত করেন। রোহিঙ্গা বিষয়ক সমস্যাটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের আলোচনায় উপস্থাপনে তুরস্কের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তুরস্কের রাষ্ট্রপতিকে এবং তুরস্কের জনগণকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন আলাপ ও বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।

তিনি অত্যাচার ও দমন-পীড়নের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ৩০ বৎসরেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, সীমিত সম্পদ ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থানের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাদের প্রতি খাদ্য, বাসস্থান, ওষুধ, শিক্ষা ও অন্যান্য সকল সুবিধাদি প্রদান অব্যাহত রেখেছে।

তিনি অবিলম্বে সহিংসতা থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মায়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কাফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এ বিষয়ে তিনি ওআইসি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তুরস্কের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন এবং তুরস্কের ভবিষ্যত সহায়তার অভিপ্রায়কে স্বাগত জানান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে তিনি ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং রোহিঙ্গা সমস্যায় তুরস্কের সমর্থন ও তার টেলিফোন কলের জন্য আবারো ধন্যবাদ জানান।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ