আজ মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৮ কিলোমিটারে ৫৫টি অবৈধ

স্টাফ রিপোর্টার :

কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রেল পথের দুরত্ব ১৮ কিলোমিটার। ১৮ কিলোমিটারের এই রেলপথ যেন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফতুল্লা, আলীগঞ্জ, পাগলা, ও চাষাঢ়াসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পরে বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। এসব দূর্ঘটনা রোধে এখনো কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি রেল কর্তৃপক্ষকে। এতে উদ্বেগ বাড়ছে সতেচন মহলে। তথ্য বলছে, কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৬৩টি স্থানে লেভেল ক্রসিং (রেলপথ পারাপার) থাকলেও এর মধ্যে বৈধ রয়েছে মাত্র ৮টি। বাকি ৫৫টি লেভেল ক্রসিং-ই অবৈধ বা সরকারের ইস্যুকৃত নয়। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
ফলে এসব অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায় সময়ই ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যুসহ অন্যান্য ছোট-বড় দূর্ঘটনা। এমনকি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়েও দূর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। শহরের ১নং রেল গেট এর জ্বলন্ত উদাহরণ। যেখানে গত ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ট্রেনের ধাক্কায় দুমরে-মুচরে যায় আনন্দ পরিবহনের একটি বাস। ঘটে হতাহতের ঘটনা। ১৮ কিলোমিটারের এই রেলপথ জুড়ে মর্মান্তিক এমন ঘটনা নেহাত কম নয়। এরপরও বিষয়টি নিয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২ মার্চ ফতুল্লার শাহ-জাহান রোলিং মিল্স এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে সিরু নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এর আগে ২৮ জানুয়ানি একই স্থানে লিটন নামে আরো এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১ মাসে তিন জনের প্রাণহানী ঘটেছে ফতুল্লার শাহজাহান রোলিং মিলস এলাকায়। ডাবল রেললাইন প্রজেক্টের জন্য বিগত কয়েক বছর যাবৎ রেল লাইনের পার্শ্ববর্তী রাস্তায় পাথর ফেলে রাখায় পথচারিদের চলাচলের ব্যবস্থা নেই। তাই শিল্প কারখানাবেষ্টিত এই এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। গোটা রেললাইন জুড়েই দেখা যায় এমন চিত্র।
তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের সুবিধার্থে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে লেভেল ক্রসিং নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেট নির্মাণ এবং তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের খরচ বহন করার নিয়ম থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। অরক্ষিত এই অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো নিয়মিত পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও দায়িত্বে অবহেলা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠেছে, আর কত দূর্ঘটনার পর টনক নড়বে রেলকর্তৃপক্ষের!
এদিকে রেল স্টেশন মাস্টাররা বলছেন, ‘লেভেল ক্রসিংয়ের বিষয়টি আগে তাদের সাথে সংযুক্ত থাকলেও বর্তমানে ডাবল রেল লাইন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় বিষয়টি আপাতত তারা তদারকি করছেন না। কেবল বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা গেইটম্যানের বেতন প্রদানের কাজ করছেন তারা। তবে, বৈধ-অবৈধ রেল ক্রসিংয়ে যেই দূর্ঘটনা ঘটছে এর দ্বায়ভার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে কিনা- সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।’
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানিয়েছেন, ‘অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিয়েছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে। রেলপথের চারপাশে ব্যরিকেট দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এই বিষয়ে চায়না কোম্পানীর সাথে এই বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। যেহেতু শহরের ভেতর দিয়ে এই রেলওয়ের রাস্তা গিয়েছে, সেহেতু এটার সিকিউরিটি ব্যবস্থা করতে হবে। বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ইলেক্ট্রিক সুইচ সিস্টেম থাকবে। আর অবৈধগুলো সব বন্ধ করে দেয়া হবে।’

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ