আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশে স্বস্তিতে নারায়ণগঞ্জের এমপিরা বিপাকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

স্বস্তিতে নারায়ণগঞ্জের এমপিরা

স্বস্তিতে নারায়ণগঞ্জের এমপিরা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৬মাস বাকী। ক্ষমতাসীন আ.লীগ আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে গ্রহণ করেছে।
শনিবার ২৩ জুন গণভবণে আ.লীগের ৬৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ধিত সভায় আ.লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের এমপিরা স্বস্তিত্বে রয়েছে এবং বিপাকে পড়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমি এটাই বলব, যারা আমার দলের বিরুদ্ধে কথা বলবে, দলের বিরুদ্ধে বদনাম করবে সে কি এটা বুঝে না যে, তাঁর ভোটও নষ্ট হবে। সে তাহলে কোন মুখে ভোট চাইতে যাবে? ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর যদি দলের বিরুদ্ধে বদনাম করে তাহলে জনগণ তো তাকেও ভোট দেবে না। সেটা তাদের মনে রাখতে হবে। অবশ্য প্রার্থী হওয়ার স্বাধীনতা সবার আছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এমপিরা নমিনেশন পাবেন কী পাবেন না সেটা নির্ভর করবে- আপনি এলাকায় কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন আর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন তার ওপর।’
সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, ‘এই উন্নয়ন করার ফলে মানুষ যে নৌকায় ভোট দেবে না তা কিন্তু হয় না। যদি না দেয় তার জন্য দায়ী থাকবেন আপনারা তৃণমূলে। এটাই আমার কথা।’

‘কারণ, আপনারা সঠিকভাবে মানুষের কাছে যেতে পারেননি, বলতে পারেননি, বুঝাতে পারেননি, সেবা দিতে পারেননি। সেই জন্যই, নইলে এখানে তো হারার কোনো কথা না। কারণ, এত উন্নয়ন বাংলাদেশে কবে হয়েছে? কোন সরকার করতে পেরেছে? কোনো সরকার করতে পারে নাই। তাহলে কেন অন্যদল ভোট পাবে?’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

দলীয় নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, কেউ কেউ কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রার্থী হয়ে গেছেন। আর প্রার্থী হয়ে তাদের বক্তব্যে বিএনপি কী লুটপাট করল, সন্ত্রাস করল সেটা বলেন না। তার বক্তব্য এসে যায় আমার আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে।’

(এ সময় নেতারা হাততালি দিয়ে দলীয় সভানেত্রীর কথায় সায় দেন।)

সভাপতি ফের বলেন, ‘আমি এখানে একটা ঘোষণা দিতে চাই। দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কীভাবে দেশটাকে উন্নত করব। যে উন্নয়নের কাজগুলো করছি। সেগুলো না বলে, সেগুলো ভুলিয়ে দিয়ে কোথায় কার দোষ আছে সেটা খুঁজে জনগণের কাছে যাঁরা বলবেন, তাঁরা কখনো আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না। পরিষ্কার কথা। তাঁরা কখনো আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না। কারণ, আমি রেকর্ড করছি। আজকাল ডিজিটাল বাংলাদেশ।’

এ সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহাজোট করেছি। সেটা থাকবে। আমরা বন্ধু হারাবো না। এই ত্যাগ আমাদের করতে হবে। কিন্তু কে প্রার্থী হয়েছে সেটা চিন্তা না করে নৌকায় মার্কায় ভোট চাইতে হবে। এখন থেকেই মানুষের কাছে যেতে হবে।’
সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের কোন্দলে না জড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনের নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক।বর্তমান সরকারের আমলে তিনি রূপগঞ্জে সর্বকালে সেরা দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছে। ইতোমধ্যে তিনি রূপগঞ্জে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ব্যাপক জনপ্রিতা অর্জন করেছে। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজীর উন্নয়নে ঈষান্বিত হয়ে রূপগঞ্জের একটি চক্র আ.লীগের উন্নয়ন চিত্র না জনগণের সামনে তুলে না ধরে তারা শুধু স্থানীয় এমপি এবং সরকারের বদনাম করে যাচ্ছে।আজ প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ শুনে গোলাম দস্তগীর গাজীসহ তৃণমূল ত্যাগী আ.লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।

নারায়ণগঞ্জ-২ তথা আড়াইহাজার আসনে বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় যুবলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হোসেনের নাম আছে। তবে বাবুর সঙ্গে সরাসরি প্রতিপক্ষ পারভেজ। ইতোমধ্যে তাদের ভেতরে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আড়াইহাজারের লোকজনদের মতে, বাবু ও পারভেজের মধ্যে যিনিই মনোনয়ন পাবেন তিনিই আগামীতে একক রাজত্ব করবেন। ফলে যিনি মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হবেন তার প্রতিদ্বন্দ্বিকে পোহাতে হবে কঠিন পরিস্থিতি। কারণ যিনি এমপি হবেন তিনি তখন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠবেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনে বর্তমানে জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। আগামী নির্বাচনে মহাজোট থাকবে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে এমন খবর শুনে লিয়াকত হোসেন খোকার মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে । সোনারগায়ে হতাশা রয়েছে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি শামীম ওসমান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এ আসনে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের নাম থাকলেও রয়েছে নানা অভিযোগ।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বর্তমান এমপি সেলিম ওসমান। তিনি জাতীয় পার্টির এমপি ও মহাজোটের। আগামীতে নির্বাচনে মহাজোট থাকবে ।এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী খোকন সাহা, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে প্রচারণা করেছেন। তবে তাদের তরুণ প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত বেশ কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন এলাকাতে যাচ্ছেন। প্রচারণার পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করছেন। মহাজোট থাকবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হতাশ আ.লীগ নেতারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছে আগামী নির্বাচনে আ.লীগের কোন্দল ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানের কারণে স্থানীয় এমপিরা সুবিধা জনক অবস্থানে থাকবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ