আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আদালতে স্বপন হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনায় পিন্টু

স্বপন হত্যার লোমহর্ষক

স্বপন হত্যার লোমহর্ষক

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘাতক পিন্টু দেবনাথ তার বাল্য বন্ধু প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে হত্যার অনেক আগেই আরেক বন্ধু ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহাকেও অপহরণের পর ২১ মাস আগে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ ৭ টুকরো করে বাজারের ৫টি ব্যাগে ভরে তিন দফায় শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন। স্বপনকে হত্যাকান্ডের সময় তার সঙ্গী ছিল তার বান্ধবী রতœা রানী চক্রবর্তী।
রোববার (২২ জুুলাই) বিকালে হত্যায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক পিন্টু দেবনাথ। এসময় অপহরণ ও হত্যার পর লাশ গুম করেছেন তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় তার স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। নিহত স্বপন কুমার সাহা নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ কাচারীগলি এলাকার মৃত সোনাতন চন্দ্র সাহার ছেলে। স্বপন ঘাতক পিন্টুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল।
এরআগে ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জের পৃথক দুটি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে রতœা রানী চক্রবর্তী ও হত্যার প্ররোচনাকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মোল্লা মামুন ঘাতক পিন্টু দেবনাথের কথিত বড় ভাই।
পিন্টু দেবনাথ জানিয়েছে, ভারতের কলকাতায় একটি ফ্লাটের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে স্বপন কুমার সাহাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় সে। পরিকল্পনা মতে, ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর বাজার এলাকার কাজী বাড়ির প্রবাসী আজহারুল ইসলামের ৪তলা ভবনের ২য় তলায় পিন্টু তার বান্ধবী রতœা রানীর ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় স্বপনকে। যৌন মিলনের প্রলোভন দেখিয়ে পিন্টু তার প্রেমিকা রতœা রানীকে দিয়ে স্বপনকে ডেকে নেয় ওই ফ্ল্যাটে। এরপর বিছানায় বসিয়ে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে পূর্বে থেকে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখা ফ্রুটিকা জুস স্বপনকে পান করায় রতœা রানী। এতে ঘুমিয়ে পড়ে স্বপন। এরপর শীল পুতা দিয়ে স্বপনের মাথায় আঘাত করে পিন্টু। পরে বাথরুমে নিয়ে বটি দিয়ে লাশ গুমের জন্য স্বপনের দেহ সাত টুকরো করা হয়। এরপর ৫টি বাজারের ব্যাগে ভরে স্বপনের দেহ (অংশগুলো) ভবনের পাশে খালি স্থানে রাখে পিন্টু। পরে ব্যাগ ভর্তি লাশের টুকরোর উপর সবজি রেখে সুযোগ বুঝে তিন দফায় শহরের ৫নং ঘাট এলাকায় সেন্ট্রালঘাটের দক্ষিনে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয় পিন্টু।
স্বপন অপহরণের ঘটনায় গত ১৫ জুলাই রাতে মাসদাইর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন মামুন ও পিন্টুর গার্লফ্রেন্ড রতœা রাণী চক্রবর্তী। ১৮ জুলাই রাতে গ্রেপ্তারকৃত রতœা ও রিমান্ডে থাকা পিন্টুকে নিয়ে শহরের মাসদাইরে রতœা যে বাড়িতে থাকে সেই বাড়িতে যায় ডিবি পুলিশের একটি টিম। পরে ওই ফ্ল্যাট থেকে স্বপন কুমার সাহাকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত শিল পুতা, বটি, রক্তমাখা বিছানা চাদর ও তোষক উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, নিহত স্বপনের বড় ভাই অজিত কুমার সাহা জানিয়েছেন, স্বপন কুমার সাহা ছিলেন খুচরো কাপড় ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। গত ৯ জুলাই ঘাতক বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টুর ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষের খন্ডিত লাশ উদ্ধারের পর পিন্টুর প্রতি আমাদের সন্দেহ বাড়ে। পরে ১৫ জুলাই বিষয়টি ডিবিকে জানালে রিমান্ডে থাকা পিন্টুর সহযোগি বাপন ভৌমিক বাবু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। সে তখন পিন্টু দেবনাথের এক বান্ধবী রত্মা রাণী চক্রবর্তীর সন্ধান দেন। তার মোবাইল নাম্বার পর্যালোচনা করে জানা গেছে, স্বপনের মোবাইলটি রত্মা ব্যবহার করছে। ১৫ জুলাই রাতেই তাকে আটকের পর তার কাছ থেকে স্বপনের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল উদ্ধার করে। মূলত পিন্টুর টাকা নিয়ে স্বপন ভারতে একটি ফ্লাট বাসা ক্রয় করে। ওই ফ্লাট বাসা পিন্টুকে না দিয়ে বরং উল্টো হুমকি দিচ্ছিল স্বপন। এসব কারণেই ২০১৬ সালের মার্চে আমলাপাড়া এলাকার মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে হুমকি দিত। তখন থেকেই স্বপন সাহা ও প্রবীর ঘোষকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে পিন্টু। পরে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর স্বপনকে ডেকে নেয় পিন্টু। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল।
প্রসঙ্গত, ১৮ জুন পিন্টু দেবনাথ তার বাল্য বন্ধু কালির বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষকে বিয়ার খাওয়ার কথা বলে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরো করে বাসার নিচতলায় সেফটিক ট্যাংকির ভেতর ও ড্রেনে ফেলে দেয়। ২১দিন পর ৯ জুলাই ও ১০ জুলাই রাতে দুই দফায় পিন্টুর তথ্যমতে ডিবি পুলিশ প্রবীরের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ