আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিস্ব সাবেক এমপির পাশে দাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সাবেক

 

সাবেক

সংবাদচর্চা ডেস্ক:  মোহাম্মদ ইউসুফ একসময়ের তুখোড় বামপন্থী নেতা, মুক্তিযোদ্ধা।চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।ধস নামিয়েছিলেন কুখ্যাত ‍যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর `সাম্রাজ্যে’।

সংসদ সদস্য শুনলে মানুষের চোখে যে ধরনের চেহারা ভেসে উঠে, মোহাম্মদ ইউসুফ তার ব্যতিক্রম। অর্থ নেই, বাড়ি-গাড়ি নেই। সংসারও নেই। নিজ গ্রামে ছোট ভাইয়ের চা-দোকান থেকে আসা যৎসামান্য আয়ে ইউসুফের মুখে ভাত জোটে।

নব্বইয়ের দশকেই মোহাম্মদ ইউসুফ কমিউনিস্ট পার্টি ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। রাজনীতিতে ক্রমাগত পিছিয়ে যাওয়া শুরু হয় একসময়ের মাঠ কাঁপানো শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের এই নেতার। রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।বার্ধক্যে পৌঁছা সেই মানুষটির শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ। ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর খোঁজও নেন না। দলত্যাগী নেতার পাশে নেই বামপন্থীরাও।কিন্তু দীর্ঘদিন পর যন্ত্রণাক্লিষ্ট এই মানুষটির পাশে দাঁড়িয়েছেন একদল গণমাধ্যম কর্মী এবং ফেসবুক এক্টিভিস্টরা। ফেসবুকে-গণমাধ্যমে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফের অসহায় অবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে।

ফেসবুকের খবর পৌঁছে গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টনক নড়েছে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিকদার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জনকে সাবেক সংসদ সদস্যের চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।

রোববার (০৭ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী দুটি অ্যাম্বুলেন্স এবং তিনজন চিকিৎসক নিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় মোহাম্মদ ইউসুফের বাড়িতে যান। অসুস্থ ইউসুফকে এনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফের সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। সব ধরনের খরচ সরকার বহন করবে। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুখ আছে। আগে তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন। আমরা বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করছি। হাসপাতালে উনার জন্য

জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, ইউসুফ ভাই ছিলেন আজীবন সংগ্রামী।  উনার মতো একজন সৎ, দেশপ্রেমিক রাজনীতিক, সাবেক সাংসদ এবং মুক্তিযোদ্ধার এই পরিণতি কাম্য নয়।  এটা আমাদের রাজনীতির লজ্জা, জাতির লজ্জা।

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ-সভাপতি সুনীল ধর  বলেন, ইউসুফ ভাইয়ের মতো একজন রাজনীতিক, যে দলই করুক, উনার এই অবস্থা বলে দেয় আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কতটা নিম্নগামী। লুটপাটের সংস্কৃতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এমপি বললে এখন কিছু দুর্বত্তের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠে। এই নষ্ট রাজনীতিতে ইউসুফ ভাই আসলেই বেমানান।

একদিন আগে শনিবার চট্টগ্রাম ঘুরে গেছেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, যার সঙ্গে সিপিবি ছেড়েছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। শিক্ষামন্ত্রী রাউজান গিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন, নগরীতে এসে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যান। কিন্তু রাজনৈতিক সহকর্মী মোহাম্মদ ইউসুফকে দেখতে যাননি। এতে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সংস্কৃতিকর্মী হাবিবুল হক বিপ্লবসহ অনেকে।

এদিকে গণমাধ্যম কর্মী এবং সচেতন নাগরিকরাও মোহাম্মদ ইউসুফের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।  এজন্য রোববার রাত ৮টায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি কার্যালয়ে এক সভা আহ্বান করা হয়েছে জানিয়েছেন হাসান ফেরদৌস।

 

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ