আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংস্কারপন্থী ও বহিষ্কৃতদের দলে নিচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে ‘মাঠের বিরোধী দল’ বিএনপি শক্তি সঞ্চয়ে মরিয়া হয়ে রাজপথে নামতে চায়। এজন্য দলের শক্তি বাড়াতে সরকারি দলের চেয়ে সব ব্যারামিটারে এগিয়ে থাকতে চায় তারা। দল এবং জোটের কলেবর বাড়াতে ইতোমধ্যে সবার জন্য দরজা উন্মুক্ত রাখার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারা অভিমান করে দল ছেড়েছেন কিংবা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদেরও ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দলকে আরও শক্তিশালী করতে এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন এই প্রতিবেদককে জানান, নতুন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে পুরোদমে চলছে দল পুনর্গঠন। পাশাপাশি অন্য দল থেকে বিএনপিতে আসতে চাইলে তাদের গ্রহণ করা হবে সাদরে। এছাড়া কথিত সংস্কারপন্থি যেসব নেতা নিষ্ক্রিয় আছেন তাদেরও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে যারাই বিএনপিতে ফিরতে বা নতুন করে যোগ দিতে চান তাদের মানতে হবে বেশকিছু শর্ত। শুধু মুখে মানা নয়, মনেপ্রাণে তা বিশ্বাস ও ধারণ করতে হবে। অন্যতম শর্তের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নেওয়াসহ জিয়া পরিবার নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা সমালোচনা করা যাবে না।

তবে যেসব নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে যাদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় তাদের দলে ফেরা সহজ হবে না। যদি কাউকে দলে ফিরিয়ে নেওয়াও হয়, তাদের আগামী দিনে দলীয় মনোনয়ন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা হবে।

এসব ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। দল করতে হলে সবাইকে শৃঙ্খলা মানতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি ভুল স্বীকার করে দলে ফিরতে চান তাহলে হাইকমান্ড বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে জিয়া পরিবার একটি আবেগের নাম। এ আবেগকে ধারণ করেই আমরা রাজনীতি করি। কিন্তু যারা জিয়া পরিবার কিংবা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন তাদের বিএনপি করার নৈতিক অধিকার নেই। বিএনপির জন্য সবার দরজা খোলা। কিন্তু যারাই দলে ফিরতে কিংবা বিএনপির রাজনীতি করতে চান তাদের তারেক রহমানের নেতৃত্ব এবং জিয়া পরিবারকে ধারণ করতে হবে। তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে দলে কারও কোনো প্রশ্ন নেই বলেও জানান এ নেতা।’ দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের পুরো নেতৃত্বেই দিয়ে আসছেন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান। তাকে ভারপাপ্ত চেয়ারম্যানও করা হয়েছে। তাছাড়া খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে দল পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। কমিটি পুনর্গঠন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারেক রহমানই এখন শেষ কথা।

হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ায় অনেককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। কিন্তু হাইকমান্ডের এ সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেকেই ভোট করেন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত না মানায় তাদের অনেককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তৈমুর আলম খন্দকার ও মনিরুল হক সাক্কুও রয়েছেন। এছাড়াও পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় বহিষ্কার হন কেউ কেউ। সবমিলে সারা দেশে শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, তৃণমূলে এসব নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই আগামী দিনের আন্দোলন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে হাইকমান্ডের। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে এসব নেতাদের বহিষ্কার প্রত্যাহারে হাইকমান্ডে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। যারা বহিষ্কারাদেশ প্রতাহারে আবেদন করবেন তাদের বহিষ্কার প্রত্যাহার করা হতে পারে। ইতোমধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে কয়েক নেতার বহিষ্কারাদেশ। সুত্র: দৈনিক যুগান্তর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে কিংবা দল ছেড়ে গেছেন তারা ফিরতে চাইলে দলের হাইকমান্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কোন প্রেক্ষাপটে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে’।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি করতে হলে প্রথমে দল এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে। না হলে তো তার দল করার নৈতিক অধিকারেই নেই। যাদের দলে ফিরিয়ে আনা হবে প্রথমে এ বিষয়টিই গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য না থাকলেও কাউকে দলে নেওয়া হবে না।’

এদিকে সংস্কারপন্থী ও বহিষ্কৃতরা দলে ফিরলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির তীব্র মনোনয়ন লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আড়াইহাজারের সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর, সোনারগাঁয়ের রেজাউল করিমের ভাগ্য খুলতে পারে। গেল নির্বাচনে তারা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন। এবার আঙ্গুর শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ