আজ বুধবার, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কোন ষড়যন্ত্রই শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না-কাউন্সিলর খোরশেদ

ষড়যন্ত্রই

কোন ষড়যন্ত্রই শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না-কাউন্সিলর খোরশেদষড়যন্ত্রই

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ: নিজের ৪৩ তম জন্মদিনে আধুনিক ও মানবিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। আগামীকাল মঙ্গলবার ৪৩ বছরের পা রাখছেন সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড থেকে ৩ বার নির্বাচিত এই কাউন্সিলর। খোরশেদ মহানগর যুবদলের আহবায়কও।

জন্মদিন উপলক্ষ্যে গতকাল গণমাধ্যমে একটি নিবন্ধ পাঠিয়েছেন। পাঠানো নিবন্ধটি নিচে হুবহু দেয়া হলো-

আগামীকাল সোমবার ২৩শে জানুয়ারী আমার ৪৩তম জন্মদিন। বিগত দিনগুলিতে প্রাপ্ত সমর্থন ও ভালবাসার জন্য সন্মানিত নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা। আগামী দিনেও আমি দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জবাসীর দোয়া, সমর্থন ও ভালবাসা কামনা করি।

তৃণমূলের একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে বলতে চাই মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে যতদিন বেচে থাকি ততদিন একটি বাসযোগ্য মহানগরী গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।কোন রক্তচক্ষুকে পরোয়া করবো না। নিজের যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে হলেও জনগণের দেয়া ভোটের মর্যাদা রক্ষা করবো ইনশাল্লাহ। একটি বাসযোগ্য আধুনিক ও মানবিক নারায়ণগঞ্জ গড়তে কোন আপোষ নয়।

সম্প্রতি হকার নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যে তুঘলকী কান্ড ঘটে গেল এবং আমি ও নাসিক পরিষদ সহ কাউন্সিলরদের উপর যে ডাহা মিথ্যাচার করা হলো তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। শুধুমাত্র বিরোধী দলের রাজনীতি করি বলে আমাকে বলির পাঠা বানিয়ে দমন করে রাখার যে জাল বোনা হচ্ছে তাও নারায়ণগঞ্জবাসীকে সাথে নিয়ে ছিন্ন করবো ইনশাল্লাহ। কোন ষড়যন্ত্রই শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।

হকারমুক্ত ফুটপাতের মত নারায়ণগঞ্জবাসীর একটি যৌক্তিক গণ দাবীকে উপেক্ষা করে যারা অরাজকতা ও মিথ্যাচারে লিপ্ত হলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই একটু কঠিন সিদ্ধান্ত, একটু পরিকল্পনায় যদি আমরা একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে পারি তবে এমপি, মেয়র থেকে শুরু করে আমরা সবাই আমাদের ভবিষ্যত বংশধরের কাছে দায়মুক্ত থাকবো। নতুবা আমাদের দলবাজী ও ব্যক্তিগত রেশারেসীর কারণে যদি হকার ও ফুটপাত সহ মহানগরীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হই তবে এর দায়ভার আমাদেরই বহন করতে হবে। ভবিষ্যত কাউকে ক্ষমা করবে না। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা কামনা করি।মনে রাখতে হবে নারায়ণগঞ্জবাসী কম বেশী সবই অবগত আছেন।

আমি হকারমুক্ত নারায়ণগঞ্জ নয়, হকারমুক্ত ফুটপাত চাই। আমার ওর্য়াডের ফুটপাতে সর্বাধিক হকার থাকায় ও এই ওর্য়াডে মহানগরীর একমাত্র হকার মার্কেটটি অবস্থিত হওয়ায় একটি বাসযোগ্য মহানগরী গড়ে তোলার লক্ষে শত অপবাদ, মিথ্যাচার ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে হকার সমস্যা ও এর সমাধান সর্ম্পকে আমি চিন্তা ভাবনা যেমন করেছি, তেমনি সংগ্রহ করা কিছু তথ্য উপাত্ত সহ আমার দীর্ঘ ১৪ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্মানিত নারায়ণগঞ্জবাসী ও নীতি নির্ধারকদের কাছে উপস্থাপন করছি।
১৩নং ওর্য়ার্ডে ২০০৭ সালে ১/১১ চলাকালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তৎকালীন পৌরসভা চাষাড়ায় একটি হকার মার্কেট নির্মান করে ৬৭২টি দোকান হকারদের মধ্যে বরাদ্ধ দেয়। যার মধ্যে হকাররা বেশীর ভাগ দোকান হকার নয় এমন ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দেয়। যারা বিক্রি করে নাই তারাও মার্কেটের দোকান গোডাউন হিসাবে বন্ধ রেখে পুনরায় ফুটপাতে ফিরে আসে। শুধুমাত্র শ’খানেক দোকান সারা বছর চালু থাকে। গত এক বছরে হকারের সংখ্যা এতই বেড়ে যায় যে ফুটপাতেরও অভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে ধাক্কাধাক্কি করে চলতে হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া হকাররা নারায়ণগঞ্জে এসেই সংকট প্রকট করেছে। তারা ফুটপাতের পাশাপাশি ভ্রাম্যমান ভ্যান গাড়ীতে মালামাল নিয়ে রাস্তায় গাড়ী রেখে ব্যবসা শুরু করে। ফলে শুধুমাত্র জনগণের ফুটপাতে চলাচলই কষ্টকর হয় না, যানজটও বেড়ে যায় অনেক গুণ।

বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত হকারমুক্ত হওয়ার পরে জনগণের হাটা চলার যেমন সুবিধা হয়েছে,তেমনে যানজটও অনেকাংশে কমেছে।

জনগনের যেমন উন্মুক্ত ফুটপাতের প্রয়োজন, তেমনি হকারদেরও রুটি রুজির বিষয়টি দেখা দরকার। হকাররাও আমাদেরই অংশ, আমাদেরই স্বজন। তাই প্রয়োজন হকারদের পুর্নবাসন। দল মত নির্বিশেষে সবাই পুর্নবাসনের কথা বললেও হকার ভাইদের সদ্দিচছার উপর নির্ভর করে তাদের প্রকৃত পুর্নবাসন।তবে ফুটপাত কখনোই পুর্নবাসন ক্ষেত্র হতে পারে না। পুর্নবাসন করতে হবে হকার মার্কেট নির্মাণ করে।

আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলে ইতিপূর্বে ২০০৭ সালে হকারদের জন্য স্থায়ী হকার মার্কেট করা হলেও তাদের অনেক বুঝিয়েও বেশী দিন হকার মার্কেটে আবদ্ধ করে রাখা যায় নাই। শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে হয় হকার ভাইদের চোখ শুধুমাত্র ফুটপাতে। তারা বলেন হকার মার্কেটে বিক্রি হয় না। কিন্তু আমার বক্তব্য যেসব ক্রেতা হকারের কাছ থেকে পন্য কিনেন তারা রাস্তায় হকার পাওয়া না গেলে, নিজ তাগিদেই নির্দিষ্ট হকার মার্কেটে যাবেন। কিন্তু এই যুক্তি সংগত কথাটি হকার ভাইয়েরা মানতে রাজি নয়।

পুর্নবাসনের প্রথম গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে হকারের সংখ্যা নিরুপন করা। সবার আগে দরকার যাচাই-বাছাই করে হকারের সংখ্যা চূড়ান্ত করা ও পরিচয়পত্র দেয়া। তালিকা চূড়ান্তের পরে পর্যায়ক্রমে পূর্নবাসন। আমার ধারনা কঠিন যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে আগে স্থানীয় হকারদের চিহিৃত করতে হবে। কারণ বর্তমান হকারদের মধ্যে বিরাট একটা অংশ (বলতে গেলে ৩/১) ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ঢাকার হকার। আমি মনে করি ঢাকার হকারদের পূর্নবাসন করার দায়িত্ব নারায়ণগঞ্জবাসী বা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নয়, কিংবা সেই সক্ষমতাও আমাদের নেই। চাষাড়া হকার মার্কেটের সব দোকান চালু করা গেলে সেখানেও অনেকের পূর্নবাসন সম্ভব।

স্থান নির্ধারনের ক্ষেত্রে সরকারী খাস জমি খুজে বের করতে হবে।এক্ষেত্রে এমপি, মেয়র ও জেলা প্রশাসক মহোদয় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে জমি ও অর্থের যোগান পানির মত সহজ হবে। এছাড়াও হলিডে মার্কেট হিসাবে খানপুর হাসপাতালের রাস্তার শেষ অংশ, সলিমুল্লাহ রোডের ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়কের দক্ষিনাংশ ও নগর ভবনের সামনের রাস্তাও বিবেচনা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে চাষাড়া হকার মার্কেটটি বহুতল করার লক্ষে নাসিক মেয়র মহোদয় সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্ধের আবেদন করেছেন।

আমি চাই ফুটপাত জনগনের জন্য উন্মুক্ত থাকুক। পাশপাশি আমাদেরই স্বজন হকাররাও ব্যবসা করুক। তবে কেউ কারো অধিকার হরণ করে নয়। শেষ কথা হকারমুক্ত নারায়ণগঞ্জ নয়, হকারমুক্ত ফুটপাত চাই। বাস যোগ্য আধুনিক ও মানবিক নারায়ণগঞ্জ চাই। নগর উন্নয়নে একতা চাই।

বিগত দিনগুলিতে প্রাপ্ত সমর্থন ও ভালবাসার জন্য সন্মানিত নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা। আগামী দিনেও আমি দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জবাসীর দোয়া, সমর্থন ও ভালবাসা কামনা করি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ