আজ শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শেষ মুহুর্তের কেনাবেচায় ব্যস্ত ক্রেতা বিক্রেতা

এম.এ মোমেনঃ

বাণিজ্য মেলার শেষ মুহুর্তের কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। মেলার চতুর্থ শুক্রবার ছুটির দিনে গত ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা দল বেঁধে মেলায় আসতে শুরু করে। জুম্মার নামাজের পর থেকে দর্শনার্থীদের আগমন বাড়তে থাকে। বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটায় মেলায় যেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের স্রোত নেমে আসে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলা প্রাঙ্গনে মানুষ আর মানুষ। তিল ধরার ঠাঁই নেই। প্রবেশ গেইটে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। ক্রেতা দর্শনার্থীরা বাধ্য হয়ে মাস্ক ব্যবহার করেন। মাস্ক না পরায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের মোবাইল কোটে জরিমানা আদায় অব্যাহত রয়েছে। এব্যাপারে মেলা শুরু থেকে গতকাল ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের বিরুদ্ধে ৩৫ টি মামলা করা হয়। মামলাগুলো জরিমানা আদায় করে তাৎক্ষণিকভাবে নিস্পত্তি করা হয়। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে মেলা প্রাঙ্গনে মাস্ক পরা ও প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রশাসন রয়েছে সতর্কাবস্থায়।

মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, পণ্যের দাম বেশি রাখা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদান ও মাস্ক না পরা সহ বিভিন্ন কারণে ন্তে লার শুরু থেকে গতকাল শুক্রবার পর্য৫৭ টি মামলা করা হয়েছে। মামলার পর ক্রেতা বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সকলেই এখন নিয়মনীতি মেনে, মাস্ক পরে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার গ্রহণ করে মেলায় প্রবেশ করছেন। মেলায় মাইকিং করে করোনার বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের প্রতি আহবান জানানো হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়।

মেলায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ক্রেতা বিক্রেতা সবাই মাস্ক পড়ছে। দুপুরের পর থেকেই স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমে উঠে। ক্রেতারা পছন্দমতো পণ্য সামগ্রী কিনতে স্টলগুলোতে ভিড় করেন। শীতবস্ত্র, গৃহস্থালির ব্যবহৃত পণ্য, এলুমিনিয়ামের পণ্য, নারীদের প্রসাধনী ও ইলেক্ট্রনিকস স্টলে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে ইমিট্রেশনের গহনা, থ্রী-পিছ, কাশ্মিরী শাল, দোকানে ছিল আরও বেশি উপচে পড়া ভিড়। চারটার পর ক্রেতা দর্শনার্থীর আগমনে মুখোরিত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গন। গতকাল ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮৫ হাজার মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করে।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের অধিকাংশই নারী। তারা পছন্দের প্রসাধন সামগ্রী ও গৃহস্থালির ব্যবহারের পণ্য দেখছেন ও কিনছেন। কাশ্মিরী শাল ও থ্রী-পিছের দোকানে ভিড় লেগেই আছে। খাবার স্টলগুলোতে আরও বেশি ভিড়। কেনাবেচাও বাড়ছে। বিক্রেতাদের কোথাও তাকানোর যেন ফুসরত নেই। পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। তাতে বিক্রেতারাও খুশি।

সেলিম আজম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ অনুজ বলেন, নারীদের প্রসাধনসামগ্রী আশাতীত বিক্রি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রসাধন সামগ্রীর এখানে বেশ চাহিদা। একটি অসাধু চক্র বেশি লাভের আশায় নকল প্রসাধন সামগ্রীও এখানে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে কিনতে হবে দেখে শুনে। ভালো মানের পণ্য ক্রয় করতে ঝুঁকছেন নারীরা।

আখতার ফার্নিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন বলেন, মেলার শেষ মুহুর্তে কেনা বেচার ধুম পড়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা প্রাঙ্গন জমজমাট হয়ে উঠে। মেলায় দাম কম ও ভালো মানের হওয়ায় সকলেই পছন্দের পণ্য ক্রয় করছেন। কেউ খালি হাতে ঘরে ফিরছেনা। ফিরে যাওয়ার সময় সবার হাতেই রয়েছে পছন্দের কেনা পণ্য।

দিল্লি এলুমিনিয়ামের ব্যবস্থাপক ইয়াছিন গণি চৌধুরী বলেন, এলুমিনিয়ামের স্টলে ৭০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার ২শ’ টাকা মূল্যের পণ্য রয়েছে। সকল শ্রেণির ক্রেতার পছন্দের পণ্য এখানে বিক্রি হচ্ছে। কেউ স্টলে প্রবেশ করলে খালি হাতে ফেরার সুযোগ নেই। অধিকাংশ ক্রেতাই এলুমিনিয়ামের পণ্য ক্রয় করছেন। বিক্রি হয়েছে প্রচুর। লাভও হচ্ছে আশাতীত।

নাবিস্কো বিস্কিট এন্ড ব্রেড ফেক্টরি লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি পুষ্পা কান্তা পাল বলেন, গতকাল শুক্রবার ১০ ভাগ ছাড়ে আমাদের পণ্য বিক্রি হয়েছে। এখানে ২ টাকা থেকে শুরু করে ৩/৪শ’ টাকা মূল্যের পণ্য রয়েছে। অধিকাংশ দর্শনার্থী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে আমাদের পণ্য ক্রয় করছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। স্টলে প্রবেশ করে কেউ খালি হাতে ফেরেননি।

কাশ্মিরী শালের দোকান হ্যারিটেজ কোম্পানি লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি রিপন চন্দ্র বণিক বলেন, মেলায় শাল বিক্রি হয়েছে প্রচুর। নতুন ভাবে শাল আমদানি করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহের বিক্রিতে আমরা খুশি।

খাবার দোকান মি. বাইটের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মো. খোকন বলেন, ২৮তম দিনে এসে মেলা জমজমাট হয়ে উঠে। খাবার স্টলে তিনটা থেকে ক্রেতাদের ভিড় জমে। স্টলের নির্দিষ্ট আসনে স্থান না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে খাবার খেয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অধিকাংশ খাবার স্টলের খাদ্য শেষ হয়ে যায়। পরে আবার খাবার তৈরি করে ক্রেতাদের মধ্যে সরবারহ করা হয়।

ওয়ালটন কোম্পানির প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ তানভির হোসেন বলেন, মেলার ২৮তম দিনে গতকাল ছুটির দিন শুক্রবার সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে। বিশেষ ছাড় ও পণ্য হোম ডেলিভারি থাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। অনেকেই স্টলে অর্ডার দিয়ে শো-রুম থেকে পণ্য গ্রহণ করছেন। কেউ কেউ স্টল থেকে ঠিকানা নিয়ে নিজ নিজ এলাকার শো-রুম থেকে পণ্য ক্রয় করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থেকে আসা পঞ্চাশ উর্ধ্ব ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাল্যকালের নাবিস্কো’র সুপার বিস্কিটের স্বাদ গ্রহণ করেছি। এবার বাণিজ্য মেলায় এসে সুপার বিস্কিটের ঘ্রাণে কিশোর বয়সে ফিরে গেছি। এখানে কমদামে ভালো মানের বিস্কিট পেয়ে আমি খুশি।

এবার বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর বসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৪নং সেক্টরের স্থায়ী কমপ্লেক্সে। মাসব্যাপী এ মেলার গতকাল ২৮তম দিনে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গন উৎসব মুখোর হয়ে উঠে। শেষ মুহুর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। দুপুরের পর থেকেই জমে উঠে এ মেলা।

মেলা আয়োজক ও রপ্তানি উন্নয়র ব্যুারোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবারের বিক্রিতে বিক্রেতারা নিশ্চই খুশি হবেন। শেষ মুহুর্তে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমনে শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গন মুখোরিত হয়ে উঠে। পণ্য বিক্রি হয়েছে আশাতীত। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ