আজ মঙ্গলবার, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খান রিমান্ডে

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের এক দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসী এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন ভাটারা থানার অস্ত্র মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিয়াদ আহমেদ শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানের তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত শুকবার রাতে রাজধানীর একটি এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তলসহ তালিকাভূক্ত শির্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১)।

শনিবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব ১১ এর দফতরে প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক ও লে. কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী আন্ডারওয়াল্ড এর গডফাদার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত নাম জাকির খান। যার নামে ৪টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন সময়ে তিনি এসব মামলায় জেল খাটেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে আরও দুর্র্ধষ হয়ে ওঠে। এ সময় তিনি দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। একপর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পিছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে জাকির খান। সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যাকান্ডের পরে তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এ সময়ে বিভিন্ন মামলায় বিজ্ঞ আদালতে জাকির খান দোষী সাব্যস্ত হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে সাজা প্রদান করেন। প্রেস সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দীর্ঘদিন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানের বিষয়ে র‌্যাব-১১ খোঁজ নেয়া শুরু করে। শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকার ভাটারা থানার বসুন্ধরা এলাকা থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল ও একটি ম্যাগজিনসহ জাকির খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে জাকির খানের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় আসামী জাকির খানের ১৭ বছরের সাজা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে তার সাজা কমে ৮ বছর হলেও তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে দেশে ও বিদেশে প্রায় ২১ বছর পলাতক ছিলেন। ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যা মামলার আসামী হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তিনি দীঘর্দিন থাইল্যান্ডে আত্মগোপনে ছিলেন এবং সম্প্রতি ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকে তিনি পরিচয় গোপন করে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সপরিবারে বসবাস করছিলেন।
সূত্র মতে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ জাকির খানের। ১৯৯৪- ৯৫ দিকে তাকে শহর ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক করে নাসিম ওসমান। পরে চাষাঢ়া-দেওভোগ সংঘর্ষে জাকির খানের আত্মীয় বন্দরের সোহেল হত্যার পর থেকে ওসমান পরিবারের সঙ্গ ত্যাগ করে জাকির খান। এরপর কামালউদ্দিন মৃধার হাত ধরে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুধর্ষ হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে উঠেন জাকির খান। ৯৬তে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলা বাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবীর অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয় এবং জেলে যায়। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস জেলে থাকেন জাকির খান। মুক্তির পর ৯ সেপ্টেম্বর শহরের ডিআইটিতে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় যেখানে জনতার ঢল নামে। ওই সময়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন অল্প সময়ের জন্য।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার আসামী হয়ে জাকির দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে যায়। এদিকে জাকির খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ৩০টি মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ