আজ বুধবার, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শীতলে বিআরটিসি বাস সেবা থেকে বঞ্চিত না.গঞ্জবাসী

# ভাড়া আরও ৫টাকা বৃদ্ধি করা হবে- শীতল এমডি
# শীতল বাস মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে বিআরটিসি বন্ধ করেছে- এড. তৈমূর
# এই রুটে এত টাকা ভাড়া হতে পারে না- এবি সিদ্দিকি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে ওই পরিবারের বিপক্ষে কথা বলার লোক নাই! যদি থাকতো তাইলে অনেক আগেই এই অবিচারের বিচার হইতো। ফায়দা লুটবো প্রভাবশালীরা আর ভুগতে হইবো আমাগো। অতিরিক্ত বাস ভাড়ার কারনে এভাবেই একে অন্যের সাথে কথোপকথন করছিলেন ভুক্তভোগীরা।

জায়গাটি জেলার উত্তর চাষাড়ার শীতল এসি বাস কাউন্টারের সামনে। ভুক্তভোগীরা বলেন, বিআরটিসি বাস থাকাকালীন সময় যেখানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ভাড়া ছিলো ৪৫টাকা সেখানে শীতল এসি বাস সার্ভিস আসার পর একি রুটে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় ১০টাকা অর্থ্যাৎ ৫৫টাকা। বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে এই রুটে। এছাড়া তো আর কোন পথ নেই। চাষাড়ার শীতল এসি বাস কাউন্টারের সামনে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় জনসাধারণের এমন ক্ষোভ।

বিভিন্ন গণমাধ্যেম সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সময় জেলায় বিআরটিসি ডিপোর উদ্ধোধন করেছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমান। যেখানে ৪৫টি এসি বাস সার্ভিস ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করতো। অন্যদিকে নারায়নগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল এসি বাস সার্ভিস উদ্ধোধন হওয়ার পরপরই বিআরটিসি ডিপোর ৪৫টি বাস হঠাৎ উধাও হয়ে যায়! বর্তমানে এই রুটে শীতল বাস সার্ভিসের ২৬টি বাস চলাচল করছে।

সচেতন মহলের মতে, যার ফলে সরকারী এই পরিবহনটির সেবা থেকে বাঞ্চিত জেলার লাখো মানুষ। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে শীতল বাস আসার আগে খুবই ভালো সার্ভিস প্রদান করছিলো বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস। পূর্ব থেকে কোনরকম ঘোষণা প্রদান করা ছাড়াই হঠাৎ করে বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারী এই পরিবহনটি বন্ধ হওয়ার পেছনে জেলার হাজারো যাত্রী প্রভাবশালী ছত্রছায়ার থাকা শীতল এসি বাস সার্ভিসকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেটে থাকায় অনেক মানুষকেই কেউ কিছু বলতে পারেনা। বিআরটিসি বাস থাকাকালীন সময় এই রুটে ভাড়া ছিলো ৪৫টাকা কিন্তু শীতল এসি বাস আসার পর হঠাৎ করেই ১০টাকা বৃদ্ধি করে ৫৫টাকা করা হয়। তাছাড়া বিআরটিসি বাস থেকে বেশী কী সুবিধা রয়েছে শীতল বাসে। শুধুমাত্র ভোকাস ওয়াইফাইয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছে খুশী অনুযায়ী টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

স্বাভাবিক যানবাহনের তুলনায় নারায়ণগঞ্জ এর শীতল এসি বাসটি আয়তনে ও আকারে খুব বেশী বড়। যার ন্যায় শীতল এসি বাসটির ঢাকা হয়ে শহরের প্রবেশ মুখে আসা মাত্রই কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি করে। অপরদিকে সরকার পরিচালিত নারায়ণগঞ্জের বিআরটিসি বাস থাকা অবস্থায় এমন কৃত্রিম যানজট ছিল না। কারণ স্বাভাবিক অন্য সকল গাড়ীর মতোই ছিল বিআরটিসি বাসটির আকার। এছাড়াও জেলায় অন্য সকল যানবাহনের চেয়ে সবচেয়ে বেশী ধীরগতিতে পরিচালিত করা হয় শীতল এসি বাস সার্ভিস।

ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে ছোট ছোট যানবাহন গুলো খুব সহজেই শীতল বাসকে অতিক্রম করে চলে যায়। আমরা যারা সাধারণ যাত্রীরা আছি যারা কিনা সময় বাচানোর তাগিদে এসকল যানবাহন গুলোতে চলাচল করি। কিন্তু কম সময়ে গন্তব্যে পৌছানো তো দূরে থাক শীতল বাস অন্য সব গাড়ীর থেকে ধীরে চলে। গাড়ী ধীরে চালানোর কারণ জানতে চেয়ে ড্রাইভারদের কাছে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, চুপ করে বসে থাকেন এটা এমপির গাড়ী। সংসদ সদস্য আমাদের বলেছেন ধীরে সুস্থে গাড়ী চালাতে হবে। কোনভাবেই জোরে গাড়ী চালানো যাবেনা। কারণ গাড়ীর পাশাপাশি মানুষের নিরাপত্তা ব্যাপরে আগে বিবেচনা করতে হবে! তাই এই রুটে শীতল গাড়ী এভাবেই চলাচল করবে।

এ বিষয়ে শীতল এসি বাস সার্ভিসের পরিচালক (এমডি) মো: মোক্তার দৈনিক সংবাদচর্চার নিজস্ব প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, কার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যাত্রীরা? আজকে দুইবছর যাবৎ এই রুটে শীতল এসি বাস চলাচল করছে। এমন কোন অভিযোগ তো কোন যাত্রী আমাদের জানায়নি। আমরা তো আরও চিন্তা করতেছি যে ভাড়া আরও ৫টাকা বৃদ্ধি করা হবে। আরেকটি জিনিস হলো যে এসি বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারন করেনা। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি যার যার ইচ্ছেমত।

তিনি দৈনিক সংবাদচর্চার নিজস্ব প্রতিবেদককে আরও বলেন, আপনি এত দিন পর কোথা থেকে এলেন? দুই বছর যাবৎ এই রুটে গাড়ি চলাচল করছে এতদিন ক্ষোভ প্রকাশ করলো না আজকে ক্ষোভ প্রকাশ করলো। আমরা ভাড়া আরও বৃদ্ধি করার চিন্তা করছি।

বিআরটিসি পরিবহনের সাবেক চেয়ারম্যান তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বিআরটিসি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রাইভেট মালিকরা যেই লাভ করবে, সরকারী সংস্থাগুলো কিন্তু সেই পরিমাণ লাভ করতে পারবেনা। আমাদের আমলে ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিসের ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং ভাড়া কমানোর কারনে প্রাইভেট মালিকরা আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।

শীতল বাস আসার পর অজ্ঞাত কারণে বিআরটিসি বাস বন্ধ হয়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, শীতল বাস মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে বিআরটিসির দূর্নীতি পরায়ন চেয়ারম্যান বা কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে এ কাজগুলো করেছে। একচেটিয়া কর্ম পরিকল্পনা করেছে তথা জণগনকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে এবং ঠকিয়েছে।

নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকি বলেন, বিআরটিসি বাস নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির চেষ্টায় জেলায় এসেছিলো। বাস দেওয়ার কথা ছিলো ৫০টি। প্রথমে এসি বাস দেওয়া হলো ২৫টি পরে নন এসি বাস দেওয়া হয়েছে ২৫টি। এরপরে ষড়যন্ত্র করে বাস মালিকরা বিআরটিসি উঠিয়ে দিয়েছে। এসি বাস চলতো মেট্টো রোড থেকে নন এসি চলতো মন্ডল পাড়া পুল থেকে কিন্তু এই বাস গুলোকে এই রুটে চলতে দিলো না। কারও সাহসে সাহসী হয়ে বাসের কন্ট্রাকটাররা একেবারে অকেজ করে দিলো। সরকারের কোন করণীয় কিছুই দেখনি না যে যার ইচ্ছে মতো কাজ করছে। এই রুটে এত টাকা ভাড়া হতে পারেনা। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছি, এখনও করি। ষড়যন্ত্র করে বিআরটিসি বাস গুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিআরটিসি বাস সারাদেশে চলে অথচ নারায়ণগঞ্জে চলেনা। এই বিষয়টি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অতন্ত্য দুঃখজনক। আমরা বেসরকারীভাবে সামাজিক সংস্থা হিসেবে মানুষের আরামের জন্য আমরা এগুলো আনলাম। ৫০টি বাস এই রুট থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলো। আমরা এই বিষয়ে দরখাস্ত করলাম, কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না কিছুই হলোনা। শীতল বাস এই বাস সেই বাস দিয়ে ইচ্ছেমতো তারা মানুষকে জুলুম করছে। সরকারের পক্ষ থেকেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ