আজ বৃহস্পতিবার, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরিনের পরিবারকে সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বন্দর উপজেলার হাজিপুর এলাকার শিরিন আক্তারের চিকিৎসা ও ভরণ পোষণের জন্য এক লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে ইসদাইর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন এর হাতে এ অর্থ তুলে দেয়া হয়। ২ সেপ্টেম্বর এ অর্থ প্রদান ও শিরিন আক্তারের জীবন মান উন্নয়নের জন্য আরও ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, ২৮ আগস্ট দৈনিক সংবাদচর্চা’য় ‘২০ বছর ধরে শিকলবন্দি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

অর্থ প্রদানের সময়ে উপস্থিত ইসদাইর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে কিশোরদের একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনের জন্য ৭০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিলো। করোনা ভাইরাসের কারনে সে টুর্নামেন্ট হয়নি। সংবাদচর্চায় শিরিন আক্তারের করুণ জীবনের কথা শুনে আমি চিন্তা করে দেখলাম, এ টাকাটা এখন তার ও তার পরিবারের জন্য খুব দরকার। এ টাকা যদি তাদের দেই তবে বঙ্গবন্ধুর ছোয়াব হবে। সেই চিন্তা থেকেই আমি আরও ৩০ হাজার টাকা যোগ করে ১ লাখ টাকা দিয়েছি।

এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সংবাদচর্চা’র বার্তা সম্পাদক ও আরটিভির নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা আনোয়ার হাসান, বাংলাদেশ তরিকা বাউল শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সানি সরকার, বাউল শিল্পী সুমাইয়া সরকার প্রমুখ।

বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়ার ইউনিয়নের সাবেক ২ বর্তমান ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হাজিপুর এলাকার মেম্বার ছিলেন সাইদুর রহমান। তার ৭ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে সপ্তম সন্তান শিরিন। বন্দর গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিলো তাঁর। টেস্ট পরীক্ষায় উত্তির্ণও হয়েছিলেন। এরপরই জীবনে ঘটে এক বিপত্তি।

শিরিনের ছোট ভাই এলিন জানান, টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্টে উত্তির্ণ হয়েছে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ তখন। বাড়িতে বসে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। একদিন ভর দুপুরে বাড়ির সামনে অন্যের একটি খালি ভিটায় গিয়ে বাড়ি ফেরার পর ভিন্ন রকম আচরণ শুরু করে শিরিন। জ্বীন-ভুতের ব্যাপার মনে করে বিভিন্ন কবিরাজের কাছে তাকে নেয়া হয়। তবে কিছুতেই উন্নতি হচ্ছিলো না। পরে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের পরামর্শে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ১ বছর থাকার পর কিছুটা উন্নতি হলে বাড়িতে আনা হয়। কিছু দিন পর ফের অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। এরপর আরও দুইবার পাবনায় নেয়া হয়। এলিন জানান, পাবনায় একটানা এক বছরের বেশী কোন রোগীকে রাখে না।

হাজীপুরে শিরিনদে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির এক কোনে একটি খালি ঘর রয়েছে। তার সামনে পলিথিন দিয়ে ঘেরা ছোট্ট জায়গায় দিনভর মাটিতে বসে থাকে শিরিন আক্তার। পায়ে শিকল বাঁধা থাকায় নিজ থেকে উঠে দাঁড়ানোর তেমন চেষ্টাই করে না সে। পরিবারের সদস্যরা জানান, শিকল খুলে দিলে দূরে চলে যায় তাই শিকলবন্দি অবস্থায় খাওয়া দাওয়া সহ সব কাজ সারতে হয়। প্রতিবেশীরা জানান, শিকল দিয়ে দীর্ঘ দিন বেঁধে রাখায় অনেকটা পঙ্গু হয়ে গেছে সে। এখন আর ঠিক মতো সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারে না।

শিরিনের ভাবী জহুরা বেগম জানান, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। এখন অভাবের সংসারে তার জন্য খাওয়া দেয়া ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব হয় না। তিনি জানান, অন্যসব স্বাভাকি মানুষের চেয়ে আমার ননাস বেশী খাবার চায়। সারা দিনই সে খাবার চায়। আমরা তা দিতে পারি না। তার বিশ্বাস যদি সরকারিভাবে তাকে চিকিৎসা করানো হয় আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া দেয়া হয় তবে সে সুস্থ্য হয়ে উঠবে।

এ নিয়ে আরটিভিতে সংবাদ প্রচার করা হয়। এরপর দৈনিক সংবাদচর্চা’য় প্রধান শিরোনাম করা হয় ‘ ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি’। এরপর শিরিন আক্তারের বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের। তিনি জানান, ইসদাইর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার দেয়া ১ লাখ টাকা আগামী ২ সেপ্টেম্বর শিরিনের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া তার চিকিৎসা ও জীবন মান উন্নয়নের জন্য আমরা আরও উদ্যোগ নিবো।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ