আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শহরে বর্ণিল ঘুড়ি উৎসব

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
ঘুড়ি উৎসবের জন্য টানানো ডেকোরেটরের কাপড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সারি সারি ঘুড়ি। কোনোটা বাংলাদেশের পতাকা, কোনোটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কোনোটা আবার লক্ষী পেঁচা, কোনোটা হাতির মতো। শিশুরা ভিড় করে দেখছিলো এই ঘুড়ি। মাঠের আরেক পাশে কেউ কেউ চেষ্টা করছিলো ঘুড়ি ওড়াতে। বাতাস না থাকায় ঘুড়ি ওড়ানো কঠিন। বিশেষ করে বড় ঘুড়ি। তবু বিশাল এক ঘুড়ি ছোটরা ধরে ‘দোলনি’ দিলো। আর সুতা ধরে দৌড় দিয়ে ঘুড়িটি আকাশে ওড়ালেন নগরীর পাইকপাড়ার মধ্যবয়সী বাদল হোসেন। কেন ঘুড়ি উৎসবে এলেন? উত্তরে বাদল হোসেন বললেন, ‘আমাদের সময়ে বেশ বড় হয়েও আমরা ঘুড়ি উড়িয়েছি। মেয়েরা, মায়েরাও আমাদের সাথে থাকতো। এটা একটা পারিবারিক বিনোদন ছিলো। কিন্তু এখন জায়গা ও পরিবেশ না থাকাতে বাচ্চারা ঘুড়ি উড়াতে পারেনা। আজকে সুযোগ পেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুড়ি উড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।’

বাবা আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বলের সাথে এসেছিলো প্লে পেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মৃত্তিকা ও তার চাচাত ভাই আহমেদ জারিফ চুনকা। মৃত্তিকা বললো, ‘ঘুড়ির অনেক ছবি এঁকেছি স্কুলে। কিন্তু ঘুড়ি কীভাবে উড়াতে হয়, নাটাই হাত দিয়ে ঘুড়াতে হয় এটা জানতাম না।’ নাটাই কিভাবে ঘোরে ভেবেছিলে? উত্তরে মৃত্তিকা বললো, ‘ভেবেছিলাম নাটাই মেশিনে ঘোরে।’

নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষিকা উম্মে লায়লা বললো, ‘আমাদের স্কুলের বেশ কয়েকজন বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি। অনেকে ঘুড়ি-ই চিনতো না। এখানে এসে চিনলো।’
আয়োজনে ছিলো ঢাকের ব্যবস্থা। ঢাকের বাজনা উৎসবকে দিয়েছিলো ভিন্ন মাত্রা। মাঠে বসে থেকে উৎসব উপভোগ করছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান। তিনি জানান, ‘ঘুড়ি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এ কারণে পাকিস্থান আমলে ঘুড়ির বিরুদ্ধে আমরা শাসকদের অবস্থান দেখেছি। চীনে ঘুড়ি উৎসব রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। পুরো চীন একটা দিন ঘুড়ির জন্য পাগল হয়ে যায়। বিশাল আকাশের সাথে সখ্যতা হয় ঘুড়ির মাধ্যমে। মনটা বড় হয়ে যায়। আমাদের দেশেও রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘুড়ি উৎসব পালন করা প্রয়োজন।’

নারায়ণগঞ্জের মানুষ ঘুড়ি ওড়ায় বর্ষাকালে। বর্ষার দস্যি বাতাসের সাথে লড়াই করে আকাশে ঘুড়ি উড়ানো নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্য। কিন্তু শুক্রবার ছুটির দিনে শীতের বিকেলে নগরীর জিমখানার আলাউদ্দিন খান ষ্টেডিয়ামে আয়োজিত এ ঘুড়ি উৎসবও সাড়া জাগিয়েছিলো নগরবাসীর মধ্যে। ঘুড়ি উৎসব নারায়ণগঞ্জে আয়োজন করা হলো দ্বিতীয় বারের মতো। নারায়ণগঞ্জ ঘুড়ি উৎসব উদযাপন পর্ষদের সভাপতি জাহিদুল হক দীপু বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের কারণে নগরের মানুষ আকাশ দেখতে পায় না। দূষণে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন। ঘুড়ি আমাদের প্রকৃতির কাছে নিয়ে যায়। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখায়। এজন্য আমাদের এ আয়োজন।’

সন্ধ্যায় চমৎকার আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ