আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘শহরে কিছু বাণিজ্য হয়েছে’

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমি অনেক বাধা অতিক্রম করে অনেক কাজ করেছি যা এ শহরের মানুষ জানে। এবং এটা আমাকে এইভাবেই করতে হবে কারণ আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না। আমি কোনো চাপের মুখে কারও কাছে মাথা নত করবো না। আমি ন্যায়ের পক্ষে থাকার চেষ্টা করি সবসময়।’

গত ৪ নভেম্বর শুক্রবার রাতে টকশোতে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি সুপরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে। নির্বাচন আসলেই এগুলো করা হয়। আমার পরিবারে দুই ভাই ও দুই বোন। ভাইয়েরা অনেকটা নিরীহভাবেই থাকে। আমার পরিচয়ে আমার ভাইদের বড় হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমার বাবা এই শহরের স্বনামধন্য একজন ব্যক্তি ছিলেন। সে পৌরসভার বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার ভাইদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে কোনো লাভ হবে না কারণ তারা কোনো কিছুর সাথে জড়িত না এবং আমিও না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশন থেকে যে বেতন পাই সেটা দিয়ে আমার সংসার চলে। নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কোনো ধরনের অপকর্ম অথবা কোনো অনৈতিক কাজের সাথে বা কোনো ধরনের দুর্নীতির সাথে যদি জড়িত হই, তাহলে এ দেশের জনগণই তার বিচার করবে। অনেক গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে সরকারের, তারা তদন্ত করুক। উনি তো বহুবার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাজউকে, দুর্নীতি দমন কমিশনে অনেকগুলো অভিযোগ দিয়েছেন সেগুলোর তদন্ত হয়েছে। পরবর্তীতে দিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়েও দিয়েছে এবং সামনে বিভিন্ন মানুষ দিয়ে আরও দিবে হয়ত। এটা নিয়ে বিব্রত হওয়া বা ভয় পাওয়ার কারণ আমি দেখি না।’
আইভী বলেন, ‘আমি যেভাবে আছি সেভাবে থাকবো। আমি কোনো মানুষকে ভয় পাই না। আমি আল্লাহকে হাজির-নাজির মনে করে এই সিটি করপোরেশন চালাই। মানুষকে ভালোবাসি এবং মানুষের জন্যে এখানে কাজ করছি। কে কি বললো সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নাই। নির্বাচন আসলে উনি বলবেন এবং নির্বাচন শেষ হলে বলা শেষ হয়ে যাবে।’

নারায়ণগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমার প্রতিবাদ করার প্রয়োজন ছিল, করেছি। দল নমিনেশন দিয়েছে কিন্তু শহরে কিছু বাণিজ্য হয়েছে। যা এমপি সাহেবদের উপর নির্ভর করে সবকিছু। ইউনিয়নগুলো যেহেতু তারা দেখাশোনা করে এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যারা হয় তারাও বিভিন্নভাবে এমপি সাহবেদের অধীনে কাজ করে। এবং বিভিন্নভাবে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ওই নমিনেশন বাণিজ্যই বলেন আর নমিনেশন দেয়া-নেয়া বলেন এটা ওনারাই করে থাকেন। আমার দায়বদ্ধতা ছিল প্রতিবাদ করার। যতটুকু চেষ্টা করেছি, দলীয় ফোরামে করার চেষ্টা করেছি।’

শামীম ওসমানের সাথে সম্পর্ক প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘এখানে সম্পর্ক ভালো-খারাপের বিষয় না। এখন যদি ওনার কোনো সমস্যা হয় আমি তো অব্যশই যাবো। শুধু ওনার কেন যেকোনো মানুষেরই হলে আমি যাবো। রাজনীতি এক জিনিস, সামাজিকতা ও মানবিকতা আরেক জিনিস। আমি শুধু বলতে চাই, আমরা একই দল করি। আমার মত বা নীতি-আদর্শের সাথে না মিললে সংযোগটা বেশি দিন থাকে না। এখানে নীতি-আদর্শ, ন্যায়-অন্যায়ের ব্যাপার, এখানে জুলুমের ব্যাপার। আপনি জুলুম করছেন আমি জুলুমের প্রতিবাদ করছি। আপনি অন্যায় করছেন আমি সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি।’

নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ১৮ বছর যাবত এখানে আছি। চেষ্টা করছি মানুষের সেবা করার জন্যে। জানি না কতটুকু করতে পেরেছি। চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিলো না। এখনো যদি মানুষ চায় তাহলে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। এটা নির্ভর করে নারায়ণগঞ্জের জনগণের উপর। আমাকে কেউ যাতে অযাচিতভাবে ভুল না বুঝে। আমি একটু খোলামেলা মানুষ, স্পষ্টভাবেই কথা বলি এবং আমি অন্যায় কাজের সাথে কখনো যুক্ত হই নাই আর হতে চাই না। সৎ কাজ করছি সামনে আরও করে যেতে চাই। টাকা-পয়সা সবাই আয় করতে পারে কিন্তু অযাচিতভাবে কোনো সম্পদ আমার কাছে প্রত্যাশিত না। আমি এভাবেই বেড়ে উঠেছি এবং আমার বাবা-মা আমাকে এই শিক্ষাই দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করতে চাই। আপনাদের কল্যাণে আমি কাজ করতে চাই। আশা করি সেই সুযোগটি আমাকে আপনারা দিবেন।’

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ