আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শতবর্ষী গাছ কেটেই প্রশস্ত হচ্ছে মহাসড়ক!

শতবর্ষী

শতবর্ষী গাছ কেটেই প্রশস্ত হচ্ছে মহাসড়ক!শতবর্ষী

সংবাদচর্চা ডেস্ক: যশোরে শতবর্ষী গাছ  কেটেই প্রশস্ত হচ্ছে মহাসড়ক। পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্খা।

বিশেষজ্ঞসহ নানা মহলের প্রতিবাদ-আপত্তি ও পরামর্শ উপেক্ষা করে গাছ কেটেই যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে মহাসড়কটির দুই পাশের ২ হাজার ৩১২টি গাছ কাটা পড়বে। আর তাতে স্থানীয় পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বহু বছরের পুরোনো অনেক গাছসহ বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে মহাসড়ক সম্প্রসারণের ওই কাজ শুরুর উদ্যোগের খবর গণমাধ্যমে আগেই প্রচারিত হয়েছে। এরপর থেকে দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ। গাছ কাটা, না কাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। গাছ না কাটতে যশোরের সচেতন নাগরিকেরা আজ বুধবার সকালে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।

এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা জিল্লুর রহমান বলেন, মহাসড়কের দুই পাশে স্থানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ ফুট পর্যন্ত সড়ক ও জনপথের (সওজ) রেকর্ডীয় জমি আছে। তাই সম্প্রসারণকাজের জন্য গাছ কাটার কোনো প্রয়োজন নেই।

৬ জানুয়ারি যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের ওই গাছগুলো কেটে ফেলার বিষয়ে মতামত তুলে ধরা হয়। পরে এই মতামত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান মো. এনামুল কবীর বলেন, পাশে গাছ থাকলে সড়কের ক্ষয়রোধ হয়। রাতে গাছে আলো প্রতিফলিত হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে। শতবর্ষী গাছগুলো মহিরুহ হিসেবে কাজ করে।

যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘শতবর্ষী গাছগুলো স্বাধীনতাসংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত। আমাদের উন্নয়ন অবশ্যই দরকার, তবে ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা করে।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি যশোর জেলা শাখার সভাপতি ইকবাল কবির বলেন, ২ হাজার ৩১২টি গাছ কেটে মহাসড়ক চার লেন করার যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। যাঁরা গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য উৎসাহ দেখাচ্ছেন, তাঁদের বিশেষ মতলব রয়েছে। এরূপ সিদ্ধান্ত পরিবেশবিরোধী শুধু নয়, গণবিরোধীও।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৩ জুলাই গাছ না কেটে ওই মহাসড়ক সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী আগের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করে একই বছরের ১৭ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। বর্তমানে তা দরপত্র ক্রয়-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

এরই মধ্যে ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই মতবিনিময় সভায় ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য গাছ কাটার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন। সভায় জেলার সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম ও কাজী নাবিল আহমেদ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসেনসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।

গত সোমবার সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসেন  বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে দেশের তিনটি সড়ক যুক্ত হবে। এর দুটি যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক হয়ে যাবে। এ জন্য মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার সমীক্ষা চলছে। ভবিষ্যতে এটি ছয় লেনে উন্নীত হলে মহাসড়কটির দুপাশের আরও জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হবে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বৈঠকের আলোকে গাছ কেটে মহাসড়কটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে সওজ, যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাংগীর আলম বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক আপাতত চার লেন হচ্ছে না। দুই লেন হচ্ছে। তবে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ছয় লেনের এক সমীক্ষা চলছে। দুই লেন হোক আর ছয় লেন হোক, প্র্যাকটিক্যালি গাছ রেখে মহাসড়কটি সম্প্রসারণ অসম্ভব।

যশোর সওজ ও জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, মহাসড়কটির উভয় পাশের গাছের মধ্যে রয়েছে রেইনট্রি, মেহগনি, বাবলা, খয়ের, কড়ই, আকাশমণি, বট, শিশু, ঝাউ, আম, কাঁঠাল, সেগুন, শিমুল ও দেবদারু। এর মধ্যে ১০০ বছরের বেশি পুরোনো রেইনট্রি রয়েছে ৭৪৫টি।

সওজ সূত্র জানায়, ১৯১৩ সালে যশোরের কালেক্টর জনসন প্রথম ২৪ ফুট প্রস্থের যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে মহাসড়কটির উন্নয়ন করা হলেও সম্প্রসারিত হয়নি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত ২১ মার্চ ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়।

সওজ সূত্র জানায়, মহাসড়কটি ৩৮ দশমিক ২০০ কিলোমিটার লম্বা। চওড়া ২৪ ফুট। চওড়া বাড়িয়ে ৪০ দশমিক ৩৫ ফুট করার কথা রয়েছে। যশোর শহরের দড়াটানা এলাকা থেকে সম্প্রসারণকাজ শুরু হয়ে তা শেষ হবে বেনাপোলের শূন্য রেখা পর্যন্ত। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ