আজ বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লেপ তোষক বানানোর হিড়িক

পৌষের শুরুতেই গাইবান্ধায় হঠাৎ করেই শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সেইসাথে লেপ তোষক বানানোরও হিড়িক পড়েছে। গাইবান্ধার পেশাদার ধুনকরদের তাই এখন ব্যস্ত সময় কাটছে।

শহরের কেন্দ্রস্থলে সাবেক জেলা জজ অফিসের পরিত্যক্ত খোলা মাঠে লেপ তোষক বানানোর কাজ খুব জোরে সরেই চলছে। ফলে এতোদিন নিরলস বসে থাকার সময় পেরিয়ে এখন হাতে অনেক কাজ জমেছে ধুনকরদের। গাইবান্ধা জেলা ধুনকর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মন্টু সর্দারের সাথে কথা বলে জানা গেল, একটি লেপ তৈরী করতে তারা এখন মজুরী নিচ্ছে ২৫০ টাকা। এছাড়া তোষক ২২০ টাকা, বালিশ প্রতিটি ২৫ টাকা এবং জাজিম তৈরীতে ৪শ’ টাকা হারে মজুরী নেয়া হচ্ছে। এই মজুরীর হার অন্য সময়ের চাইতে কিছুটা বেশী। জানা গেল, একটি তোষক তৈরী করতে মজুরী, কাপড় এবং তুলাসহ এখন মোট ব্যয় পড়ছে ৭শ’ থেকে ৭শ’ ৫০ টাকা। আবার জাজিম তৈরী করতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা পর্যন্ত। আর লেপ কভারসহ তৈরী করতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা। ধুনকরদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেল, বিশেষ করে শীতের মৌসুমে একজন ধুনকর দিনে ২ থেকে ৩টি লেপ এবং ৪ থেকে ৫টি তোষক তৈরী করতে পারে। শীতের মৌসুম ছাড়া অন্য সময় চাহিদা কম থাকায় অর্থাভাবে তাদের পারিবারিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করা অত্যান্ত দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।
প্রসঙ্গত উলে¬খ্য যে, ইতোপূর্বে শিমুল তুলায় বালিশ এবং কার্পাস তুলায় লেপ ও তোষক তৈরী হতো। কিন্তু এখন শিমুল এবং কার্পাস তুলার সবররাহ অনেক কম হওয়ায় দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিকেজি শিমুল তুলা ২৫০ টাকা এবং কার্পাস তুলা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সংগত কারণেই লেপ তোষক বানানোর ক্ষেত্রে ক্রেতারা গার্মেন্টেসের ঝুট কাপড় এবং বে¬জারের কাপড়ের টুকরো থেকে তৈরী বিশেষ জাতের তুলা দিয়েই লেপ ও তোষক বানানোর দিকেই ঝুকে পড়ছে বেশী। কেননা প্রতিকেজি বে¬জারের তুলার দাম পড়ে মাত্র ২৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া গার্মেন্টেসের অন্যান্য তুলার দাম পড়ে ২৩ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এতে লেপ ও তোষক বানানোর খরচ পড়ে অনেক কম। সে কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো এই বিশেষ জাতের তুলা দিয়ে লেপ, তোষক, বালিশ ও জাজিম বানানোর দিকে ঝুকে পড়ছে বেশী।
গাইবান্ধা জেলা শহরে সমিতিভূক্ত ৮০ জন পেশাদার ধুনকর বংশ পরমপরায় সাবেক জেলা জজ কোর্টের পরিত্যক্ত এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী টেনিস কোর্টে এবং রাস্তার ধারেই পাটি বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচে তুলা ধুনা থেকে শুরু করে লেপ, তোষক, জাজিম বানানোর কাজ সম্পন্ন করে আসছে। এতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময়টিতে তাদের কোন কাজ করাই সম্ভব হয় না। ফলে কর্মহীন হাত গুটিয়েই বসে থাকতে হয়। এতে করে এই পেশা নির্ভর জীবন জীবিকা চালাতে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
এজন্য ধুনকর সমিতির পক্ষ থেকে ধুনকরদের পৌরসভার মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কাছে একান্ত দাবি তাদের সমিতির নামে সরকারি কোন জায়গা বরাদ্দ দেয়া হলে সেখানে একটি টিনসেডের ছাপরা তৈরী করে দিলে তারা স্বচ্ছলভাবে তাদের পৈত্রিক পেশা চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ