আজ বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

র‌্যালি আর ফেস্টুনে সেবা

ভিনগ্রহ থেকেঃ

অনেক আগে আমার দাদা পৃথিবীতে এসেছিলেন। তখন তিনি যেখানে নেমেছিলেন সেখানকার সম্বন্ধে গুড রিপোর্ট দিয়েছিলেন এলিয়েন জগৎকে। তার রিপোর্ট পড়ে জেনেছিলাম, এখানকার মানুষ পরোপকারী। একজনের বিপদে অপরজন ঝাপিয়ে পরে। বেশিরভাগ মানুষের দেশ প্রেমের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন। সমাজ সেবক, রাজনীতিকদের গুণ সবচেয়ে বেশী গেয়েছেন। তার লেখায় জেনেছিলাম, রাজনীতিক সত্যকে ভাষণে তুলে ধরেন। তারা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকৃষ্ট করাতে পারেন। সমাজ সেবকরা মানুষের যে কোন বিপদে এগিয়ে আসেন, সদা সমাজের মঙ্গল কামনা করেন। তাদের ভালো কাজের মূল্যায়নও করেন মানুষ। তাদের দেখলে সবাই খুব সম্মান করেন। তাদের মধ্যে সবার অর্থকড়ি না থাকলেও তারাই সমাজের উঁচু স্থানে থাকেন।

তবে আমি এখানে এসে দাদুর কথার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এখানকার অনেক সমাজ সেবক নিজের সেবা নিয়ে আর নিজের ঢোল পেটাতে ওস্তাদ। তারা যতটা না সমাজ সেবা করে তার চেয়ে বেশী প্রচার করে। ইদানিং ফেসবুকের কল্যাণে সমাজ সেবক ও নেতা বেড়ে গেছে। দু’ পোটলা খাবার দিয়ে সে ছবি ফেসবুকে আপলোড করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে এ ধরনের সমাজ সেবক ! এর দল।

আবার কোন উপলক্ষ্য পেলেই তারা ফ্যাস্টুন আর ব্যাণার দিয়ে নিজেদের জাহির করেন। জাহির করার বিষয়টি কী জন্য বলছি তা একটু পরিস্কার করি। কয়েক ফুটের একটা ফ্যাস্টুনে কথিত ওই সমাজ সেবক বা নেতার ছবি থাকে বড়। তার চেয়ে কিছুটা ছোট থাকে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি কিংবা কমিটির শীর্ষ নেতার। তার চেয়েও ছোট থাকে জাতীয় পর্যায়ের নেতার। কেউ কেউ আবার তেল মর্দনের চরিত্রটি ফেস্টুনে পুরোদমে প্রকাশ করে। যেমন বাবা নেতা থাকলে তার সন্তানের ছবি দেয়া হয়। কেউ আবার কথার তোড়ে তেল ভাসিয়ে দেয় নেতাকে খুশী করতে।

বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের র‌্যালির বিষয়টিও নজরে পরেছে। কোন কোন সংস্থা বা সংগঠন কোন বার্ষিকীতে র‌্যালি করেই নিজেদের কর্মকান্ডের পরিচয় দেন। র‌্যালি বলতে কোন দফতরের খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তোলা। এরপর তা নানা মাধ্যমে প্রচার করা। কিন্তু বিষয়টি আমার কাছে খুব ভালো ঠেকেনি। এভাবে আসল কাজটা হয় না। মনে করেন, বই পড়া দিবসে বই প্রেমীদের নিয়ে একটা র‌্যালি করা হলো। যদি র‌্যালিটা অনেক দূর যায়, আকর্ষণীয় হয় তবে আমজনতার দৃষ্টি কাড়ে। আর যদি কোন দফতরের আঙ্গিনা ঘোরা হয় তবে তা ক’জন জানলো। এছাড়া একদিন র‌্যালি আর প্রচার না করে যদি সারা বছর মানুষের দ্বারে দ্বারে বই নিয়ে যাওয়া যায় তবে কিন্তু আসল উদ্দেশ্য সফল হয়। যেমনটা করছেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ হোসেন স্যার আর যেমনটা করেছিলেন পলান সরকার।

আমি বলবো না আপনার সবাই তাদের মতো হুবুহু কর্ম করেন। তবে যার যা দায়িত্ব তা যদি সঠিকভাবে পালন না করেন তবে এরজন্য একদিন জবাব দিতে হবে। মনে করেন আপনি কোন একটি বাগানের মালী। আপনি যদি গাছের পরিচর্যা ঠিকঠাক করেন তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম তা থেকে ফুল, ফল, অক্সিজেন পাবে। আপনি যদি ফাঁকি দেন তবে তারা তা থেকে বঞ্চিত হবে। অর্থাৎ আপনার (মালী) সন্তান, নাতি-নাতনিও অক্সিজেনের অভাব বোধ করবে। তাই তাদের কথা ভেবে হলেও আপনাকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। এখন ভেবে দেখুন অল্প করে জোরে ঢোল পিটাবেন না-কি সঠিক দায়িত্ব পালন করে সত্যিকারের মানুষ হবেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ