আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

“রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তা”

নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ মুন্না খাঁনঃ- মানবতা আজ কোথায় হারিয়ে গেল? কোথায় গেলো আজ মানবাধিকার? কোথায় হারিয়ে গেলো সেই স্যুট কোট পরা মানুষগুলো ? যারা সবসময় মানবতার কথা বলে।হে আজকে তাদের কথা বলতে হচ্ছে , কি দোষ সেই অসহায় রোহিঙ্গাদের ,যাদের নির্মুল করা হচ্ছে তাদের বসতবাড়ি থেকে , কেড়ে নিচ্ছে মা থেকে শিশু কে, ধর্ষণ করা হচ্ছে বাবার সামনে মেয়েকে ,তরুণ ছেলেদেরকে ধরে নিয়ে জবাই করা হচ্ছে ।কি তাদের অপরাধ ? তারা মুসলিম বলে ।

হে তারা মুসলিম । নারায়ে তাকবির তাদের স্লোগান ।  আজ রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধন চালানো হচ্ছে, তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে অস্বীকার করা হচ্ছে তাদের জাতিস্বত্তাকে । আজ তারা পরিচয়হীন জারজ জাতিসত্তা হিসেবে বাংলাদেশের শরণার্থি শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে । তাদের দেহকে টুকরো টুকরো করে খাওয়ানো হচ্ছে শুঁকুনকে, ছোট ছোট দুধের শিশুকে ইলেকট্রিক শক ও মুখের ভিতর মাটি ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হচ্ছে ,আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে তাদের বাড়িঘড়, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে আগুনে । তাই আজকে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াসে ফিরিয়ে দিতে চাই তাদের জাতিসত্তাকে তুলে ধরতে চাই তাদের আত্নপরিচয়কে।

বর্তমান মিয়ানমারের “রোসাং” এর অপভ্রংশ “রোহাং” (আরাকানের মধ্যযুগীয় নাম) এলাকায় এ জনগোষ্ঠীর বসবাস। আরাকানের প্রাচীন নাম রূহ্ম জনপদ। ইতিহাস ও ভূগোল বলছে, রাখাইন প্রদেশে পূর্ব ভারত হতে প্রায় খৃষ্টপূর্ব ১৫০০ বছর পূর্বে অষ্ট্রিক জাতির একটি শাখা “কুরুখ” নৃগোষ্ঠী প্রথম বসতি স্থাপন করে, ক্রমান্বয়ে বাঙালি হিন্দু (পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত মুসলিম), পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বসতি স্থাপন করেছে। এ সকল নৃগোষ্ঠীর শংকরজাত জনগোষ্ঠী হলো এই রোহিঙ্গা। বস্তুত রোহিঙ্গারা কথ্য ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। উর্দু, হিন্দি, আরবি শব্দও রয়েছে। পক্ষান্তরে ১০৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজ্য দখলদার কট্টর বৌদ্ধ বর্মী রাজা “আনাওহতা”  মগদের বারমা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে রোহিংগাদের বিতাড়িত করে বৌদ্ধ বসতি স্থাপন করান। রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে একটি প্রচলিত গল্প রয়েছে এভাবে সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমে বেঁচে গেছি। এই রহম থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা।

তবে,মধ্যযুগে ওখানকার রাজসভার বাংলা সাহিত্যের লেখকরা ঐ রাজ্যকে রোসাং বা রোসাঙ্গ রাজ্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন। রোসাঙ্গ রাজ্যের রাজভাষা ফার্সী ভাষার সাথে বাংলা ভাষাও রাজসভায় সমাদৃত ছিল।

ইতিহাস এটা জানায় যে, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করার পর চরম বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ জনগোষ্ঠীর কয়েকজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়। সামরিক জান্তা তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ধর্মীয়ভাবেও অত্যাচার করা হতে থাকে। জোর করে ধন-সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হতে থাকে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। বিয়ে করার অনুমতি নেই। সন্তান হলে নিবন্ধন নেই। জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না। সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সে জন্য আরোপিত হয় একের পর এক বিধিনিষেধ।

মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের অনেকের কাছেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ‘কালা’ নামে পরিচিত। ভারতীয়দেরও একই পরিচিতি। এ পরিচয়ে প্রকাশ পায় সীমাহীন ঘৃণা।

তাই উপরোক্ত ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

তারা মায়ানমারের আদিবাসি।তাই বিশ্ব বিবেকের  কাছে প্রশ্ন । তারা কি ফিরে পাবে তাদের ভুখন্ড? তারা কি ফিরে পাবে তাদের অধিকার ?তারা কি সুযোগ পাবে নতুন করে জীবন সাজানোর?

 দৈনিক সংবাদ চর্চা পত্রিকার

 নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ মুন্না খাঁন

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ