আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে পুলিশ ও এলাকাবাসীর রাতভর অভিযানে আ.লীগ নেতা আবুল বাশার টুকুর বাড়ি থেকে সরকারি চাউল উদ্ধার

বাশার টুকুর বাড়ি থেকে সরকারি চাউল উদ্ধার

বাশার টুকুর বাড়ি থেকে সরকারি চাউল উদ্ধার
সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

রূপগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকুর বাড়ি থেকে ৩৬ বস্তা চাউল উদ্ধার করা হয়েছে। ১৬ জুন ঈদের দিন গভীর রাতে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের সহায়তায় টুকুর নিজ বাড়ি থেকে আত্নসাতকৃত চাউল উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা গেছে পবিত্র ইদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ভিজিএফ কার্ডের চাউল গরীব দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য কায়েত পাড়া ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয় । কিন্তু কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ হতে একটি চক্র গরীব দুস্থদের মাঝে চাউল বিতরণ না করে তা আত্নসাত করার চেষ্টা করে ।

আত্নসাতকৃত চাউল উদ্ধার হওয়ার পর থেকে রূপগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা বলেন- ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী নেতা হোক,তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন- ভিজিএফ এর চাউল অবশ্যই ঈদের আগে দিতে হবে ,এটাই নিয়ম। চাউল যার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সে অবশ্যই অপরাধী। আর যেহেতু সে জনপ্রতিনিধি না তাহলে কিভাবে সে চাউল পেলো তা খতিয়ে দেখতে হব । আমি মনে করি নিশ্চয়ই কায়েতপাড়ার চেয়ারম্যান এই ঘটনার সাথে জড়িত।

এসময়  আবুল বাশার টুকুর শাস্তি চেয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করে।

এ ব্যাপারে কায়েত পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্য আবুল জানান, ভিজিএফ কার্ডের চাউল ইউনিয়ন পরিষদ হতে মেম্বারদের মাধ্যমে প্রতিটা ওয়ার্ডে বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু আমার ওয়ার্ডের চাউল আমি না পেয়ে কিভাবে আবুল বাশার টুকু পেল তা আমার জানা নেই। স্থানীয় জনতা ও পুলিশের সহায়তা চাউল উদ্ধার হওয়ার পর আমি বিষয়টি জানতে পারি। এটি একটি জঘন্যতম কাজ।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জায়েদ আলী জানান- কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ হতে আবুল বাশার টুকুর নেতৃত্বে  রাতে একটি চক্র গরীব দুস্থদের মাঝে চাউল বিতরণ না করে তা আত্নসাত করার চেষ্টা করে । কিন্তু স্থানীয় জনগণ ও পুলিশের সহায়তায় তাদের এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। যারা আওয়ামীলীগের সুনামকে নষ্ট করতে চায় তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। মুলত কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আন্ডা রফিকের যোগসাজশে টুকু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাতের আধারে চাউল তার বাসায় নিয়ে আসে।  চুরি করে ২১ বস্তা চাউল বিক্রি করলে তা জানাজানি হয়ে যায়।পরে স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে তার বাড়ি ঘেরাও করে এসময় চনপাড়া পুলিশ ফাড়ির এসআই নুরুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, চাউল উদ্ধারের ঘটনাটি সত্য। চনপাড়া পুলিশ ফাড়িতে একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা করবে উপজেলা প্রশাসন ।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, চাউল উদ্ধারের ব্যাপারে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউপি সচিব এ বিষয়ে থানায় একটি জিডি করবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো জানান চাউলগুলোর ব্যাপরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল আমাকে জানায় যে চাউলগুলো তার জিম্মায় ছিলো। কিন্তু মেম্বারের জিম্মায় চাউলগুলো থাকতে পারে না। আবার যে বাড়িতে পাওয়া গেছে সেখানেও রাখতে পারে না। এ বিষয়ে কায়েতপাড়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সচিব ও ট্রাক অফিসারকে শোকজ করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এব্যাপারে আবুল বাশার টুকু জানান- কায়েতপাড়ার ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলেক আমাকে জানায় স্থানীয় মেম্বার আবুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না । তাই তিনি আমাকে চাউলগুলো বিতরণ করার জন্য আমার কাছে পাঠান। আমি নিজেও স্থানীয় মেম্বার আবুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই।

চাউল উদ্ধারের বিষয়ে তিনি জানান-উদ্ধারকৃত চাউল আমার কাছেই ছিলো। আমি বেকায়দায় পড়ে গেছি । আমার এখন আত্নহত্যা করতে ইচ্ছে করতেছে।

জানা গেছে আবুল বাশার টুকু কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকের ঘনিষ্ঠ সহচর। চাউল চুরি হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে চাউল চোর টুকুর বিচার চেয়ে নিন্দার ঝড় তুলছে। উদ্ধারকৃত চাউল কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সচিব  মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনের জিম্মায় পুলিশের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

 

 

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ