আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে গৃহবধূকে বালিশ চাপা ও নারী শ্রমিককে ধর্ষণের পর হত্যা

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জে পৃথক স্থানে দাবিকৃত যৌতুকের দাবিতে আফসানা বেগম নামে এক গৃহবধূকে বালিশ চাপা দিয়ে ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় কুলসুমা আক্তার নামে নারী শ্রমিককে ধর্ষণের পর উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিহতের স্বজনরা দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ইছাখালী ও তেতলাবো এলাকা থেকে গৃহবধূসহ ওই দুই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নারী শ্রমিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় রুবেল নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত কুলসুমা আক্তার চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার বহরিয়া এলাকার আমির হোসেনের মেয়ে। তিনি তেতলাবো এলাকার অলিউল্লাহ মিয়ার বাড়িতে বসবাস করে স্থানীয় ইউনাইটেড মেলামাইন কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এছাড়া আফসানা বেগম উপজেলার নাওড়া এলাকার আশোক আলীর মেয়ে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, সকালে ইছাখালী এলাকায় বসতঘরে আফসানা বেগমের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ওই গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে। অপর দিকে, তেতলাবো এলাকার ইউনাইটেড মেলামাইন কারখানার পাশের একটি ডোবায় নারী শ্রমিক কুলসুমার লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। দুটি মরদেহ নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পৃথক ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। দুটি ঘটনাই হত্যাকান্ডের ঘটনা বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছেন। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন আসলে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।
নিহত গৃহবধু আফসানা বেগমের পরিবারের অভিযোগ, ২০১৩ সালে ইছাখালী এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়ার সঙ্গে আফসানা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে ২ লাখ টাকা দেয়া হয়। তাদের সংসারে আলভি নামে ৩ বছরের শিশু সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই রাসেল মিয়া ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। নেশার টাকার জন্য প্রায় সময়ই মারধরসহ বিভিন্ন ভাবে জ¦ালা যন্ত্রনা দিতো। এছাড়া রাসেল ও শাশুরী রাহেলা বেগমসহ শশুর বাড়ির লোকজন যৌতুক দাবি করলে বাপের বাড়ি থেকে বেশ কয়েকবার টাকাও এনে দেয়া হয়। দাবিকৃত মাদকের টাকা না দেয়ায় বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে রাসেল মিয়ার সঙ্গে আফসানা বেগমের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে শারিরিক নির্যাতনের পর বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয় আফসানাকে। পরে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী হনুফা বেগম জানান, তিনি নিজে রাসেল মিয়ার সঙ্গে আফসানার মারপিট ও ঝগড়া করতে দেখেছেন। তাদের মারপিট ও ঝগড়া থামাতে ব্যর্থ হয়ে ফের চলে আসেন। এরপরই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই রাসেলসহ পরিবারের সকল সদস্যরা পলাতক রয়েছে।
অপর ঘটনায় নিহত কুলসুমা আক্তারের পরিবারের অভিযোগ, শরিয়তপুর জেলার নরিয়া থানার শেখ পোরকান্দি এলাকার আলী হোসেনের ছেলে রুবেল তেতলাবো এলাকায় বসবাস করে অটোরিকশা চালিয়ে আসছে। কারখানায় যাওয়া আসার সময় প্রায় সময়ই কুলসুমা আক্তারকে উত্যক্ত করতো। বেশ কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দিলে কুলসুমা তা প্রত্যাখান করে। গত রোববার ভোরে ইউনাইটেড মেলামাইন কারখানায় কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেনি। বিভিন্ন স্থানে খোজাখুঁজির পর কোন স্থানে না পেয়ে মা তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। নিখোঁজের চার দিন পর বুধবার রাতে কারখানার পাশের একটি ডোবায় কুলসুমা আক্তারের লাশ ভেসে উঠেছে দেখতে পায় এলাবাসী। পরে লাশ উদ্ধার করা হয়। রুবেলসহ তার সহযোগীরা কুলসুমা আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করে গুম করার উদ্দেশ্যে ডোবায় ফেলে যায় বলে দাবি করেন মা তাসলিমা বেগমসহ পরিবারের লোকজন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ