আজ মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাতে এসেছিলেন এরশাদ

বিশেষ প্রতিবেদক:

রাত তখন ২ টা। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে এসেছিলেন সে সময়ের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরপর ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার তৎকালিন চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মাহমুদকে। অফার দেন মন্ত্রীত্বের আর এরশাদের সঙ্গে থেকে জাতীয় পার্টির সব সভায় বক্তব্য দেয়ার।

এরশাদ ক্ষমতাকালে ১৯৮৪ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হন নাজিম উদ্দিন মাহমুদ। ওই নির্বাচনে শহরে আওয়ামী লীগের উত্তর মেরু ভিন্ন রকম পলিটিক্স করেন। সূত্র মতে, আলী আহাম্মদ চুনকা জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন। সাধারণ মানুষ তাকে খুব পছন্দ করতেন। তাকে পরাজিত করার মতো কাউকে যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন নাজিম উদ্দিন মাহমুদকে টার্গেট করে চুনকা প্রতিপক্ষরা। নাজিম উদ্দিন মাহমুদের নামে মনোনয়ন ফরম কিনে তা নিজের কাছে রাখেন নাসিম ওসমান। এরপর মার্কা নিয়েও হয় খেলা। সব শেষে চুনকা কে হারিয়ে নাজিম উদ্দিম মাহমুদ জেতেন চেয়ারম্যান পদে।

দলীয় সূত্র মতে, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও ঢাকা জিলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন নাজিম উদ্দিন মাহমুদ। কয়েকজন প্রবীণ রাজনীতিক জানান, তাঁর মতো তুখোড় বক্তা সে সময়ে খুব কম ছিলো। এরশাদ তাকে এজন্যই পছন্দ করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, নাজিম উদ্দিন মাহমুদের মতো বক্তা ও সংগঠককে দলে ভেড়াতে পারলে জাতীয় পার্টির গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে। সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালের দিকে রাত ২ টার সময়ে এরশাদ নিজে জীপ চালিয়ে শহরের দেওভোগ পাক্কা রোডে নাজিম উদ্দিন মাহমুদের বাড়িতে আসেন। এত রাতে দেশের শীর্ষ পদের ব্যক্তিকে দেখে চমকে যান নাজিম মাহমুদ। তিনি এরশাদসহ তার সঙ্গীদের ঘরের ভিতর ডাকেন। এরশাদ তখন বলেন, এত রাতে ঘরে যাবো না। তুমি বাইরে এসো, কথা আছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, এরপর এরশাদ মন্ত্রীত্বের অফার দেন নাজিম উদ্দিন মাহমুদকে। বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হবে তোমাকে। তোমাকে মন্ত্রনালয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে না। তুমি আমার সাথে সারা দেশে ঘুরবে আর পার্টির সভায় বক্তব্য দিবে।এর আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে নাজিম উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য শুনেছিলেন এরশাদ। তার বক্তব্য শুনে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন।

তবে শেষতক এরশাদের প্রস্তাব রাখেননি নাজিম উদ্দিন মাহমুদ। আওয়ামী লীগ ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেননি সৎ জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত নাজিম উদ্দিন মাহমুদ। শেষ জীবনে তাকে চাকরী করে সংসার চালাতে হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিক বলেন, আদর্শের রাজনীতি এখন আর নেই। নাজিম উদ্দিন মাহমুদের মতো নেতাও তৈরী হয় না।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ