আজ মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজনীতির সাদা কালো

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এমন অনেকেই এ ধরা ত্যাগ করেছেন। পার্থক্য হলো কেউ অনেক আগে কেউবা সদ্য। বেঁচে থাকতে তারা যেমন মানুষ, সমাজ ও দেশের সেবা করেছেন তেমনি তাদের সেবার লোকেরও অভাব ছিলোনা তখন। তবে মারা যাওয়ার পর পরিবার মনে রাখলেও তাদের দল তেমন মূল্যায়ন করেনি। যদিও সবেমাত্র এ ধারা চালু করেছে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ।
নেতা মারা গেলে আর তার পরিবারের কোন সদস্য রাজনীতিতে না থাকলে সেই নেতাকে স্মরণ করার রেওয়াজ ছিলো না নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে। যার সন্তান বা পরিবারের অন্য কেউ রাজনীতিতে সক্রিয় কেবলমাত্র তারা দলের কাছে এ মূল্যায়ন পেতেন। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একেএম শামসুজ্জোহা, আলী আহাম্মদ চুনকা ছাড়াও অনেকেই মারা গেছেন। তাদের মধ্যে মোস্তফা সারওয়ার, ডা. শাহাদাত হোসেন, মিজানুর রহমান, আনসার আলী, মফিজুল ইসলাম, অধ্যাপিকা নাজমা রহমান প্রমুখ। বিএনপির রাজনীতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আব্দুল মতিন চৌধুরী। তিনি ছাড়া প্রয়াত হয়েছেন হাজী জালালউদ্দিন (জালাল হাজী), হাসান জামাল, হানিফ কবীর, রফিকুল ইসলাম কমিশনার, নাজির প্রধান, জাহাঙ্গীর কমিশনার সহ অনেকে।
শামসুজ্জোহার ওয়ারিশগণ রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তার নাম নেয়ার মানুষের অভাব নেই। মৃত্যুবার্ষিকীতে কে কার আগে কবর জিয়ারত করবে এ নিয়ে প্রতিযোগীতা হয়। পাড়া মহল্লায় তার নামে মিলাদ হয়। বিষয়টি ভালো চোখে দেখলেও সচেতন মহলের মতে, ওয়ান ইলেভেনের মতো খারাপ সময়ে কবর জিয়ারত ও মিলাদের সংখ্যা কমে যায়। চুনকার বেলায় আবার ভিন্নতা দেখা যায়। রাজনীতিতে তার পুত্র কণ্যাগন আসার আগেই তার অনুসারীরা বিশেষ করে তার তরিকাপন্থি ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর পালন করে আসছে।
তবে আনসার আলী, নাজিম উদ্দিন মাহমুদ, মিজানুর রহমান, ডা, শাহাদাৎ হোসেন, নাজমা রহমানদের মতো অনেকের পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে না থাকায় তাদের ভুলে গেছে দল।
একইভাবে জালাল হাজীর পুত্র বিএনপি করায় দল তাকে স্মরণ করে। অথচ মতিন চৌধুরীর মতো কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাকে মনেই রাখেনি। আর হাসান জামাল, নাজির প্রধানদের কথাতো ভুলেই গেছে দল।
জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমান এর স্মরণ সভা করে তার স্ত্রী পারভীন ওসমান ও পুত্র আজমেরী ওসমানের অনুগতরা। তবে জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও এরশাদ সরকারের মন্ত্রী এমএ ছাত্তার কে কেউ মনে রাখেনি। জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, শহরের গুলাশান সিনেমা হলের মালিক মহিউদ্দিন আহমেদ (খোকা মহিউদ্দিন) কেও জাতীয় পার্টি কখনও স্মরণ করেনি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি খোকা মহিউদ্দিনের ছেলে ফয়েজউদ্দিন লাভলু আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের পরম আত্মীয় হয়েছে। তারা এখন পরস্পর বেয়াই।
২৫ ফেব্রুয়ারি বাবা আলী আহম্মদ চুনকার মৃত্যুবার্ষিকীতে কবর জিয়ারত করার সময়ে নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ওসমান পরিবারের প্রয়াত নেতাদের কবরও জিয়ারত করেছেন। তার এমন কর্মে রাজনীতির সুবাতাস বলে মনে করেন সচেতন মহল। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জোহার কবর জিয়ারতের সময়ে তার সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান ও তার অনুগতরা পাশে থাকা চুনকার কবর জিয়ারত করেনি। রাজনীতি বিশ্লেকদের মতে, এ হলো রাজনীতির সাদা কালো রঙ।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলো অনেক দিন ধরেই ব্যক্তিকেন্দ্রীক পরিচালিত হয়। দলের ভেতর গণতন্ত্রের রেশমাত্র নেই। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সব জায়গায়ই এক। বড় পদে যিনি থাকেন অথবা যে প্রভাবশালী থাকে তাকেই ঘিরেই রাজনীতির যত আয়োজন। ওই প্রভাবশালী নেতার কাছ থেকে পদ সহ অনেক কিছু বাগিয়ে নিতে চারপাশে নিজস্ব বলয় তৈরী হয়। তারা তখন নেতার জন্য প্রাণ দেয়ার অভিনয়ও করেন। নেতাতো বটেই নেতার পরিবারের সদস্যদের জন্যও তাদের দরদের কমতি থাকে না। আর এতেই মন গলে যায় নেতার। তিনিও আপন ভেবে ইচ্ছে মতো সুযোগ সুবিধা দেন অনুগতদের। তবে নেতার দুঃসময়ে ওই অনুগতদের অধিকাংশই দূরে সরে যায়।
এদিকে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ দলের প্রয়াত নেতাদের স্মরণ করা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে তারা কোন ভাগাভাগিও করেনি। একেএম শামসুজ্জোহাকে যেমন স্মরণ করেছে তেমনি আলী আহম্মদ চুনকাকেও। গতকাল মহানগর আওয়ামী লীগ প্রয়াত তিন নেতা শামসুজ্জোহা, চুনকা ও মফিজুল ইসলাম স্মরণ সভা করেছে। আওয়ামী লীগের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন মহল। তবে এখনও বাদ রয়ে গেছেন মোস্তফা সারওয়ার, নাজিমউদ্দিন মাহমুদ, আনসার আলী, নাজমা রহমান সহ অনেকে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ