আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ পরিচর্যা

বিশেষ প্রতিবেদক:

গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল,রয়েছে ধৈর্য আর অপেক্ষার পালা। এ জন্য শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে গাছিদের কদর বেড়ে যায়। শরৎ ঋতুকে বিদায় দিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন বার্তা। নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাক ডাকা ভোরে রস সংগ্রহ ও সন্ধায় চলছে গাছ পরিচর্যার কার্যক্রম। আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে নালি গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রের প্রস্তুতি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে।
তা আবার চাহিদা তুলনায় অত্যন্ত কম। তার পরও যে রস ,গুড় ও পাটারী তৈরি হয় তা দিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয়। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার ক্ষেতের আইলে, রাস্তার দুই ধারে ও ঝোপ-ঝাড়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুর গাছ। মানুষের সচেতনতা ও রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ আর তেমন চোখে পড়ে না। অপরদিকে ইট ভাটার রাহু গ্রাসে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারনে যে পরিমান গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুর গাছ কমছেই। এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার গেজুর রস খেতে। এক সময় সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরনকারী গাছিদের প্রাণাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোল,দানা গুড় ও পাটালী তৈরিকরতেন। যার সাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ন ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রুপ কথা মনে হলেও বাস্তব। যত বেশি শীত পরড়ে ততবেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এ গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। জলবায়ু পরিবর্তন,কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
উপজেলার হাটব গ্রামের গাছি আলাউদ্দিন বলেন,এবছর একটু আগে ভাগেই গাছ ঝোড়া বা কাটা শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই রস সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। তিনি আরও বলেন ইট ভাটার কারনে অনেক খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন তেমন একটা বেশি খেজুর গাছ না থাকায় গাছিরাও খেজুর রস সংগ্রহের জন্য তেমন আগ্রহ দেখান না।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নূর জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। দ্রুত নগরায়ণ, বিভিন্ন কলকারখানার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার ফলেই এই গাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ