আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যেন সক্রিয় থাকা অপরাধ !

রাজনৈতিক প্রতিবেদক
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। ধীরে ধীরে এ দল হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। কেন্দ্রীয় কতিপয় নেতা ও স্থানীয় কেউ কেউ সরকারি দলের এজেন্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ খোদ দলটির নেতাকর্মীদের। তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, তৃণমূলই এ দলের মূল শক্তি। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা না দেখিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করলে বুঝতে পারতো বিএনপির অবস্থান কত মজবুত। তারা মনে করেন, অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মামলা হামলা করে সরকার এখন ক্লান্ত। তাই বেছে বেছে সক্রিয় নেতাদের উপর আক্রমন হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনায় অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, এটিএম কামাল, এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের মতো সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে ভয় দেখানের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ দলটির একাধিক নেতার।
বিজয় দিবসে বিএনপিকে পূর্ণ শক্তির জানান দিতে দেখা গিয়েছিল। সেদিন শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শহরে হাজির হয়েছিলো বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সেই সাথে সরকার বিরোধি নানা শ্লোগান দেয় তারা। এরই মধ্যে ঘটে পুলিশি বাধা আর পুলিশকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা। বিএনপির দু’টি মিছিল থেকে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। সেই ভুলের মাশুল গুনতে এক মামলায় আসামী হতে হয়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অভিভাবকসহ ৩ শতাধিক নেতাকর্মীর।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুলের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে সেদিন শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি নিজেদের শক্তির জানান দেয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিল করার চেষ্টা করেছে নেতাকর্মীরা। ওইদিন স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে বাধা দিতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদিন লাঞ্ছিত হন। অন্যদিকে শ্রমিক দলের মিছিলে বাধা দিতে বিএনপির এক কর্মীর হাতে মারধরের শিকার হন পুলিশের এক উপ পরিদর্শক। পরে ঘটনাস্থল থেকেই ৭ জনকে আটক করা হয়। পরে এসআই সাইফুল বাদি হয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর রাতে পুলিশকে লাঞ্ছিত করার মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যপক মামুন মাহমুদ ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। ১৯ ডিসেম্বর দুপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পাঠালে বিজ্ঞ বিচারক তা আমলে নিয়ে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে শহরের খানপুর নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে। পরদিন বৃহস্পতিবার তাকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালত রিমান্ড না মঞ্জুর করে তাকে ১ দিনের জন্য জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়। একই দিন গ্রেপ্তার হন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার। যদিও এদের কারোরই পুলিশ লাঞ্ছিতের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। একাধিক নেতাকর্মী জানান, সেদিন কে বা কারা পুলিশকে লাঞ্ছিত করেছে আর এর দায়ভার নিতে হয়েছে সিনিয়র নেতাদের। ওইদিন মিছিলে অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। বহিরাগত অনেক মানুষও উপস্থিত ছিল। প্রকৃত আসামীদের না ধরে বিএনপির সক্রিয় নেতাদেরকেই শুধু মামলা দেয়া হয়েছে। যাতে করে জাতীয়তাবাদী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম বন্ধ থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতাকর্মীরা আরও জানান, যারা বিএনপিকে ভ্যানিশ করার চিন্তা-ভাবনা করছেন তা করবেন না। জাতীয়তাবাদী শক্তি গণতন্ত্র রক্ষায় কখনো পিছপা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। বিএনপি সাধারণ মানুষের পক্ষে সবসময় ছিলো আছে এবং থাকবে।
সচেতন মহলের মতে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির মধ্যে এখন নিস্ক্রিয় নেতার সংখ্যাই বেশি। যারা ঘরে বসে সময় কাটায় আর আন্দোলন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। অন্যদিকে যেসকল নেতাকর্মীরা সবসময় রাজপথে সক্রিয় থাকে তাদেরকেই মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বাস্তবতার। যারা নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করছে তাদেরকেই মামলার আসামী হতে হয় আর যেতে হয় জেলহাজতে। নিষ্ক্রিয়রা মামলার আসামী হলেও গ্রেপ্তার হয় না খুব একটা। এসব দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিতে সক্রিয় হওয়াই এখন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের কর্মকান্ডে জড়িত হলে মামলার আসামী হতে হয় আবার জেলেও যেতে হয়। আর যারা নিষ্ক্রিয় তারা এসব ঝুট ঝামেলা থেকে দূরে রয়েছেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ