আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মায়েদের কান্নায় আকাশ ভারী

রায়হান কবির নিলয়ঃ

কেউবা বলছে আর কি আমার বুকের ধনকে ফিরে পাবো না? আবার কারো আহাজারিতে স্তব্ধ হয়ে যায় আশপাশের এলাকা। কেউবা অজানা পথের দিকে তাকিয়ে আছে সন্তান ফিরার অপেক্ষায়। কেউ বুক চাপড়ে সন্তানের হত্যাকারীদের বিচার চাইছে বিলাপ করে। গত ৪ মাসের হত্যাকান্ড, দূর্ঘটনায় নিহত এবং প্রবাসে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মায়েদের কান্নায় ভারী হয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের আকাশ।

জানা যায়, সর্বশেষ ১০ আগস্ট বন্দরে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় আত্মরক্ষায় শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে দুই কিশোরের মৃত্যু হয় বন্দরের নাজিম উদ্দিন খানের ছেলে ও কদমরসুল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র মিহাদ (১৮) এবং বন্দর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিনের ছেলে বন্দরের বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. জিসান (১৫)। নিখোঁজের সাত ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে বন্দর থানা পুলিশ। ছেলের মৃত্যুর এই নির্মম বাস্তবতা মেনে নিতে পারেনি মিহাদের মা। লাশ দাফনে নিতে চাইলে ছেলে হারা মা চিৎকার আর বাধা দিয়ে বলে “তোমরা আমার বাজানরে কই নিয়া যাও?’

এর আগে ১ আগস্ট ইদের দিন হাজীগঞ্জে খুন হয় শুভ। হৃদয়, সুফিয়ান, সজল, কালু, সোহাগ রাজন সহ বেশ কয়েকজন মিলে তাকে হত্যা করে বলে জানা যায়। ১২ আগস্ট প্রেসক্লাবে মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শুভ’র মা রওশন আরা। ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাইতে চাইতে জ্ঞ্যানও হারান বেশ কয়েকবার।

৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. রাশেদের মৃত্যু হয়। যার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে পাগলা নন্দলালপুর এলাকায়। বৈরুতে বিস্ফোরণস্থলের অদূরে একটি রেস্তোরাঁর বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। ছেলেকে হারিয়ে মা নাওয়া খাওয়া ছেড়েছেন। এখন তার একটিই চাওয়া যেন ছেলের লাশটি একটু ছুঁয়ে দেখতে পারেন।

‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া লকডডাউন’ শিরোনামে গত ৩ জুলাই কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় প্রচারিত এক প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় করোনা পরিস্থিতিতে অবৈধ অভিবাসীদের উপর নির্যাতনের ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করেন সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি নারায়ণগঞ্জের রায়হান কবির। এটিই যেন তার জন্য কাল হয়ে উঠে। আল জাজিরায় মত প্রকাশ করার অপরাধে ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ রায়হানকে মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করে মালয়েশিয়ার সরকার। ২৪ জুলাই রায়হান গ্রেফতার হলে পরিবারে হতাশা নেমে আসে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার শাহী মসজিদ এলাকার রায়হান কবিরের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা।

অনাকাঙ্খিক্ষত এ ঘটনায় ভেঙ্গে পড়েছে পুরো পরিবার। মা কান্নায় ভেঙ্গে ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন বারংবার। ছেলে ফিরে আসবে এই আশায় দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে কিছুক্ষণ পর পর বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে থাকছেন মা রাশিদা বেগম।

এ বছরের ১ এপ্রিল কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয় ফতুল্লার শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। স্থানীয় বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের লিডার শাকিল ও লালনসহ কয়েকজন শরিফের মালিকানাধীন বৃষ্টি ইলেকট্রনিকস ও ফার্নিচারের দোকানের সামনে আড্ডা দেওয়াসহ মাদকদ্রব্য সেবন করতো।ওই সময় শরিফ তাঁর দোকানের সামনে আড্ডা দিতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ১০ থেকে ১২ জন কিশোর সদস্য শরিফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ফেলে রাখে। এ ঘটনাটি এলাকার একটি বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও সমাবেশে হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে শরিফের মাকে আহাজারি করতে দেখা যায়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ