আজ মঙ্গলবার, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়েই খুন হন শুভ

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ

মাদক ব্যবসা, সেবন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় গত বছর আহাদ আলম শুভ হত্যার ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকান্ডে ১৪ জন সম্পৃক্ত ছিলো।  গত ৪ ফেব্রুয়ারি আলোচিত মামলাটির তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবির মোল্লা।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও হত্যাকান্ডে জড়িত তিন বন্ধুর সাথে মদ পান করেছিলো শুভ। সে নিজেও সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য ছিলো। তবে এমন অভিযোগের অস্বীকার করেছে তার পরিবার।

এই মামলার প্রথম তদন্ত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবির মোল্লা জানান, আমরা তদন্ত করে জানতে পেরেছি নিহত শুভ ওই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য ছিলো। মাদক ব্যবসা, সেবন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আদালতে ১৪জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে এজহারভূক্ত আসামী বিপ্লব এবং পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসা অভিযুক্ত রাশেদ পলাতক থাকায় ও তাদের সঠিক নাম ঠিকানা না পাওয়ায় ওই দুজনকে এজহার নামীয় আসামী আরাফাত খন্দকার সোহাগ ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমান না পাওয়ায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য আদালতে আবেদন করেছে গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, এই মামলায় ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার আরেক আসামি হাসিবুর রহমান হৃদয় (৩১) আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন। এই মামলায় আরও ৯জন আসামী পলাতক রয়েছেন।

তদন্তে বেরিয়ে আসে, মাদক ব্যবসা-সেবন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই শুভকে হত্যা করা হয়। নিহত শুভ প্রায় সময়ই মাদক দ্রব্য ছিনিয়ে নিয়ে সেবন করতো। হত্যায় অংশগ্রহণ করা আসামীরা এমন তথ্য দিয়েছে।

এদিকে মামলার বাদী নিহত শুভ’র বাবা মো. বশির দাবি করেছেন তার ছেলে কোন সন্ত্রাসী চক্র কিংবা মাদক চক্রের সাথে জড়িত নয়। তিনি জানান, দীর্ঘদিন শুভ ব্রুনাইতে অবস্থান ছিলেন।  দেশে আসার পর স্থানীয় যুবকদের সাথে মেলামেশা করলেও কোন খারাপ কাজে লিপ্ত ছিলনা বলে জানান তিনি।

২০২০ সালের ১লা আগষ্ট ঈদ-উল-আযহার রাতে বন্দরের কুশিয়ারা এলাকার বশিরের ছেলে আহাদ আলম শুভ (৩০) কে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় নৃশংসভবে হত্যা করা হয়। ওই দিন শুভ তার নানার বাড়ী হাজীগঞ্জ যাওয়ার পথে রাত্র ১০.৫০ টার সময় পাঠানটুলী বাসস্ট্যান্ড রাস্তায় আসলে আসামী  মো. শফিকুর রহমান রনি, মো. কাওসার আহম্মেদ ওরফে কালু, হাসিবুর রহমান হৃদয়, হৃদয়, রিফাত, আবু সুফিয়ান, সোহাদ, জাহিদ, বাদশা, সজল, আকাশ, রিহান, পীর মোহাম্মদ শাওন, সাব্বির, অজয় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে শুভকে পিটিয়ে ও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে শুভ’র বুকের ডান পাশে, পেটের বাম পাশে, বাম হাতে, বগলের নিচে ও ডান হাতে বাহুতে কাটা জখম হয়।

ওই অবস্থায় শুভ বাঁচার জন্য দৌঁড় দিলে আসামীরাও শুভ’র পিছন পিছন ধাওয়া করে। একপর্যায়ে শুভ পাঠানটুলি বাস স্ট্যান্ড আসলে আসামী সজল ও জাহিদ তাদের সাথে থাকা চাকু দিয়ে  পেটে ও বাম বোগলের নিচে একাধিক আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন শুভকে প্রথমে জেনারেল হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভকে মৃত ঘোষণা করে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ