আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় বিএনপির তিন শতাধিক তরুন নেতা

সংবাদচর্চা ডেস্ক : ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কাছে বিএনপির পতন হবার পর থেকে বিগত এক দশক ধরে দলটির অধিকাংশ নেতাই ছিলেন নিষ্ক্রিয় । যার ফলে দলটি রাজনৈতিক মাঠে খুব একটা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারছিলেন না। জোরালো ভাবে মিটিং মিছিল তথা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করতে না পারায় দলটি দিনে দিনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছিলেন । তবে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার দলীয় ইঙ্গিত পেয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নব উদ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ৩০০ আসনে কমপক্ষে ১২ শ’ প্রার্থীর মধ্যে তিন শতাধিক মনোনয়ন প্রার্থীই তরুণ নেতা, যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সিনিয়রদের চেয়েও বেশি নিবেদিত ছিলেন দলীয় কর্মসূচিতে । এসকল তরুন নেতারা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে নিজ অবস্থান জানান দিতে বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করে যাচ্ছেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে আসছে বিএনপি। আগামী সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়নে দলটির পক্ষ থেকে তরুণ নেতাদেরকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে। আর এই সুযোগটিকেই কাজে লাগানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন তিন শতাধিক তরুন উদীয়মান নেতা। তবে এদের মধ্য থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন সর্বোচ্চ ৫০-৬০ জন নেতা। এসব তরুণ নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই অঙ্গ ও সহযোগী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর বাইরে আছেন বেশ কিছু তরুণ ব্যবসায়ী নেতা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সিনিয়র এবং উদীয়মান তরুন নেতাদের সমন্বয়ে দলটি ইতিমধ্যে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এছাড়া দলটির নীতিনির্ধারকরাও তরুণদের ওপর আস্থাশীল হয়ে উঠছেন। এর প্রতিফলন দেখা যেতে পারে আগামী সংসদ নির্বাচনে।

সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম (ঢাকা-১০), যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব (ঢাকা-১২), সাবেক ছাত্রনেতা বজলুল বাসিত আঞ্জু (ঢাকা-১৫), যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান (ঢাকা-১৪), যুবদলের ঢাকা মহানগর (উত্তর) সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর ও তরুণ ব্যবসায়ী নেতা বাহাউদ্দিন সাদী (ঢাকা-১৮)। ঢাকা-৭ আসন থেকে প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা ছাড়াও মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল এই আসনে নির্বাচন করতে চান। ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম (ঢাকা-১০), মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক (ঢাকা-১৬), এছাড়া গুলশানের যেকোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন তরুণ নেতা তাবিথ আউয়াল।

এছাড়া সারাদেশে আরো অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা সময় দিচ্ছেন এলাকায়।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব পাবনার ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া থেকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করছেন। বিএনপির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ফেনী-৩, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহ-১ এবং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম-৯ আসনে প্রার্থী হতে চান। ছাত্রদলের আলোচিত নেতা সানাউল হক নীরু নরসিংদীর বেলাবো থেকে নির্বাচন করতে চান।

এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু (লক্ষীপুর-৪), যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ মুন্সীগঞ্জ-২, যুবদলের সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ পঞ্চগড়-১ এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইলিয়াস খান

এবার বরিশাল-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে চান। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ফরিদপুর-২ এবং বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ-চৌহালী আসনে। নরসিংদী-৪ আসনে মনোনয়ন-দৌড়ে এবার যুক্ত হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলও। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, সালাউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কৃষকদলের নেতা তকদির হোসেন জসিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, শেখ মোহাম্মদ শামীম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, আকরামুজ্জামান বিপ্লব কুমিল্লা-৩, যুবদলের সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম কুমিল্লা-৮, ময়মনসিংহ-১০ আসনে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, তাঁতীদলের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু চাঁদপুর-৫, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা খান সফরী চাঁদপুর-২, যুবদলের দফতর সম্পাদক কাজী রফিক চাঁদপুর-৪, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুন্ডু ঝিনাইদহ-১, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি হায়দার আলী লেলিন ভোলা সদর, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোর-১, ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন মাদারীপুরের কালকিনি, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) থেকে মনোনয়ন চাইছেন। বিএনপির সংস্কৃতি বিষয়ক সহ-সম্পাদক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনির খানও এই আসনে প্রার্থী। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) হামিদুল ইসলাম হামিদ ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, পটুয়াখালী-১ অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) মুনির হোসেন, পটুয়াখালী-৩ আসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন।

যুবদলের ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি রফিকুল আলম মজনু ফেনী সদর, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু ঝালকাঠি-২, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মুনির হোসেন পটুয়াখালীর দুমকীতে দলীয় মনোনয়ন পেতে চান।

গাজীপুর-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন  বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশন (বোমা) এর সাধারন সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক এ কে এম শরিফুল ইসলাম খান তিনি এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।

তারকা ফুটবলার সাঈদ হাছান কানন নোয়াখালী-৬ এবং জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন নীলফামারী-৪ থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এবার। সাবেক ছাত্রনেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া, ইডেন কলেজের সাবেক ভিপি হেলেন জেরিন খান মাদারীপুর, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল কলমাকান্দা-দুর্গাপুর এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ফরিদপুর-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত। বিএনপির টিকিটে খুলনা-৪ থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালও।

নওগাঁ-৬ আসনে নির্বাচন করতে চান সাবেক এমপি মোতাহার হোসেন চৌধুরীর ছেলে ছাত্রদলের সাবেক নেতা মামুন চৌধুরী। সিরাজগঞ্জ-৬ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম। পঞ্চগড়-২ আসনে সাবেক এমপি মোজাহার হোসেন মারা যাওয়ায় ছাত্রদলের সাবেক নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ একক প্রার্থী হিসেবে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। মাদারীপুর-১ থেকে তরুণ নেতা জামান কামাল মোল্লা নূরুদ্দীন অনেকটা এগিয়ে আছেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ-৫ থেকে ছাত্রদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং তরুণ ব্যবসায়ী নেতা শফিকুল আলম রাজন মনোনয়ন-দৌড়ে এগিয়ে আছেন। সাবেক এমপি মারা যাওয়ায় এবার তার মনোনয়ন পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম-২ আসনে যুদ্ধাপরাধী মামলায় ফাঁসি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী এবং ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ছাড়াও তরুণ সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ