আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোরে অরক্ষিত শহর

এস. এম. রিফাত:

ফজরের আজান শেষে ভোর হবে প্রায়। আশপাশে টহল পুলিশের আনাগোনা নেই। ঠিক সেই সময়টাতেই নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলিতে দল বেধে নামে ছিনতাইকারী, মাদকসেবী-বিক্রেতাসহ অপরাধের সাথে জড়িতরা। কারও টাকা, কারও মোবাইল কেঁড়ে নেয় ওরা। কেউ প্রতিবাদ করলে বিনিময়ে ছুরির আঘাত পেতে হয়। ভয়ংকর এ অপরাধীরা দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠলেও তাদের নির্মুলে তেমন বুদ্ধিদীপ্ত কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

একটানা কয়েক দিন ভোরে সরেজমিনে শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া, ২নং রেল গেট, মন্ডলপাড়া, সৈয়দপুর, খানপুর, তল্লা, হাজিগঞ্জ, চানমারি, শিবু মার্কেট, জালকুঁড়ি, ভুঁইগড়, ইসদাইর, মাসদাইর সহ অসংখ্য স্থান ঘুরে টহল পুলিশের তেমন তৎপরতা চোখে পরেনি। আর যদিও কোথাও তাদের খুঁজে পাওয়া গেছে, সেখানে গাড়ি থামিয়ে তারা ছিলেন বিভোর ঘুমে। হয়তো সারা রাতের ক্লান্তি এসে ভর করেছে জনতার বন্ধু পুলিশ সদস্যদের।

গত মাসের শুরুর দিকে শহরের চাষাঢ়ায় দু’টি বাইকে দুই যুবক ও এক যুবতী এসে ভাসমান এক দোকানদারের কাছে আবাসিক হোটেলের বিষয়ে জানতে চায়। লোকেশন জেনে তারা সেখান থেকে প্রস্থান করে। পরে সংবাদচর্চার এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি জানায় ওই ভাসমান দোকানদার। তার কথার প্রেক্ষিতে কয়েকজন লোক নিয়ে ২নং রেল গেট এলাকায় গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় তাদের। হাতের ইশারায় ডাকতেই মেয়েটিকে রেখে বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় যুবকদ্বয়। পরবর্তীতে মেয়েটিকে তার বাসায় পৌছে দেয়া হয়।

গত মাসের শেষ সময় ভোর ৪টায় নবীগঞ্জ গুদারাঘাট এলাকায় এক যুবতীকে জোড় করে ধরে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ৪ যুবক। পরে কিল্লার দরগায় নিয়ে ১ ঘন্টারও বেশি সময় ওই যুবতীকে আটকে রাখা হয়। সেসময় সদর থানা পুলিশকে অবগত করা হলে টহল পার্টি আসতেই মেয়েটিকে ছেড়ে দেয় ওই যুবকরা। যদিও মেয়েটিকে সাথে নিয়ে পরবর্তীতে পুলিশ তাদেরকে খুঁজেছিলো। তবে, শেষ পর্যন্ত তাদের আর পাওয়া যায়নি।
চলতি মাসের ৪ তারিখে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় এক মাদক বিক্রেতাকে বেধড়ক মারধর করে ৪৮ পিছ ইয়াবা ও ছয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় অজ্ঞাত ছিনতাইকারীর দল। সেসময় রাস্তায় লুটিয়ে পরে থাকতে দেখা যায় মোহর নামের ওই মাদক বিক্রেতাকে।

৬ তারিখে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় ইজিবাইকের যাত্রী থামিয়ে দু’জনকে তল্লাশী করে ২ উদ্ভট যুবক। এসময় তাদের কাছে কিছু না থাকলেও জোর পূর্বক মাদক পাওয়া গেছে এমন অভিযোগে ১৫শ’ টাকা রেখে দেয়া হয়। তবে জানা গেছে এরা ছিনতাইকারী নয়, পুলিশের সোর্স!

১১ তারিখ শহরের চাষাঢ়ায় কাদঁতে দেখা যায় এক রিক্সাওয়ালাকে। কান্নার কারণ জানতে তার কাছে গেলে তিনি জানান, যাত্রী নিয়ে গলাচিপা ঢুকতেই ৩ জন যুবক তার গাড়ি থামিয়ে দেয়। গাড়িতে থাকা যাত্রীও তাদের লোক ছিলো। সেসময় জোর করে ওই রিক্সাচালকের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ওই মাদকসেবী ছিনতাইকারীরা। রিক্সাওয়ালা বাধা প্রধান করলে কিল-ঘুষি মেরে তার মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে ২৫০ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা।

১৯ তারিখে শহরের বাবুরাইল বাংলাবাজার এলাকা থেকে ছুরির ভয় দেখিয়ে এক যুবকের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
সর্বশেষ গতকাল সকালে নগরীর ২নং রেলগেটস্থ ফকিরটোলা মসজিদের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মুসা নামের এক ব্যক্তি খুন হয়। ছিনতাইকারীর হাতে খুন হওয়া মুছা আবুল সরকারের ছেলে বলে জানা গেছে। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার ভিটিহোগলা গ্রামে। তিনি পেশায় ড্রেজার শ্রমিক। এ ঘটনায় আকাশ ওরফে পাগলা আকাশ নামে এক ছিনতাইকারীকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহর ও আশপাশের বিভিন্ন পয়েন্টে রাতে ও ভোরে নিয়মিত ছিনতাই হয়। তবে অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। রাতে পুলিশের টহল থাকলেও তারা মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে রিকশা ও পায়ে হেঁটে আসা যাত্রিদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কাজে ব্যস্ত থাকে। সচেতন মহলের মতে, পুলিশি তৎপরতা বাড়লে অপরাধীরা ঝরে যাবে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের এসপি জায়েদুল আলম বলেন, ভোররাতে এমনিতেই মানুষের আনাগোনা অনেকটা কম থাকে। তবে, পেট্টোল পার্টি (টহল পুলিশ) রাস্তায় টহলে থাকে। কিন্তু তারা তো সব জায়গাতে একসাথে থাকতে পারে না। ওই সময়টাতে মানুষ কম থাকায় সন্ত্রাসীরা তখনই তৎপর হয়ে উঠে।

তাহলে এ সমস্যার সমাধান কি? এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, আমাদের ফোর্স সীমিত। আমরা এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। জনস্বার্থে এলাকাভিত্তিক ফোর্স বাড়িয়ে খুব শীঘ্রই একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ