আজ শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বোমা হামলা হবে শামীম ওসমান জানতেন!

  • ১৮ বছর ধরে কেন বিচার চাইতে হচ্ছে বাবার মৃত্যুর পর কেউ সহযোগিতা করেনি :  বৃষ্টি
  • কারাগারে থাকা আসামী জুয়েলের সাক্ষ্য গ্রহণ হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব :  খোকন সাহা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
বোমা হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম বাচ্চুর বড় মেয়ে নুসরাত ইসলাম বৃষ্টি দৈনিক সংবাদচর্চা বলেন, “প্রতিবছর মিডিয়া কর্মীদের সামনে এক প্রকার জোড় করেই আসতে হয়। আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার বিচার আওয়ামী লীগ সরকার থাকা অবস্থায় পাইলাম না।

বৃষ্টি বলেন, আর কতো আমরা বিচার চাইব? আঠারো বছর যাবত কেন আমাদের বিচার চাইতে হচ্ছে ? বিচার চাইতে চাইতে এখন শুধু আল্লাহ্র কাছে চাই। বাবাকে হারানোর পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তাঁর কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলেন আমার সব দায়িত্ব তিনি নেবেন। কিন্তু বাস্তবে আমি তা পাইনি। সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে বাবা রাজনৈতি করতো তিনিও কখনো কোন সহযোগিতা করেনি। এই কথা বলতেও আমাদের লজ্জা করে। আমরা বলতে চাইও না। বোমা হামলার ঘটনার সময় বৃষ্টির বয়স ছিলো সাত বছর।

অপরদিকে, সেই সময়ের নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই বোমা হামলা করা হয়েছিল। শামীম ওসমান জনপ্রিয় নেতা ছিলেন । ১৬ জুনের বোমা হামলার পর ভারতে গ্রেফতার দুই সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম ২১ আগষ্ট গেনেট হামলা ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার সাথে জরিত তারা ২ টি অপারেশন করেছে। বোমা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থারা আগেই বলেছিল। ভারতের পুলিশ কর্মকর্তাকে দেয়া জবাববন্দিতে তারা এসব কথা বলেন ভারতের দ্যা হিন্দ পত্রিকায় তা প্রকাশ করা হয়েছিল। বোমা হামলার পরবর্তী কালে বিভিন্ন সময় শুনেছি সাংসদ শামীম ওসমান বিভিন্ন সমাবেশে ও আলোচনায় বোমা হামলার বিষয়ে বলেছিলেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থারা আভাস দিয়েছিল তিনি জানতেন নারায়ণগঞ্জের বোমা হামলার বিষয়ে। গতকাল ১৬ জুনের বোমা হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নিবার্হী সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আনিছুর রহমান দীপু দৈনিক সংবাদর্চচাকে এসব কথা বলেন। তিনি দ্রুত এই হত্যা কান্ডের বিচার দাবী করেন।
বোমার আঘাতে দুই পা হারানো ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল বলেন, যারা হামলা করেছে তারা নির্দেশ পালন করেছে। কিন্তু মাস্টারমাইন্ড কারা তাদের শনাক্ত করে খুঁজে বের করা ও আইনের আওতায় আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আলোচিত নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা হামলার ট্র্যাজেডি দিবস আজ (১৬ জুন রবিবার)। ২০০১ সালের ১৬ জুন সন্ধ্যায় শহরের চাষাঢ়া বালুরমাঠ এলাকায় আওয়ামীলীগ কার্য্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম ওসমান। রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে প্রচন্ড শব্দে বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে পুরো শহর। বোমায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় আওয়ামীলীগ কার্য্যালয়। ৪ নারীসহ নিহত হন আওয়ামী লীগের ২০জন নেতা-কর্মী। স্প্রিন্টারের আঘাতে গুরুতর আহত হন সাংসদ শামীম ওসমানসহ আরো ৭০জন। তাদের মধ্যে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পরদিন শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামী করে হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন।

মামলার দায়েরের পরবর্তীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অন্যদিকে বোমা হামলায় নিহত ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের ছেলে কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান ও তার দুই ভাইসহ অনেককে আসামী করে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নিদের্শে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এক যুগ ধরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ২৭ জনকে ও ২০১৪ সালে হত্যা মামলায় ২২ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র দখিল করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি পুলিশ।

এ মামলায় গ্রেফতার হন চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন। আসামীদের মধ্যে বৃটিশ হাই কমিশনারের উপর বোমা হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। কারাগারে রয়েছে আদালতে একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল ও আব্দুস সালাম পিন্টু। ভারতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে দুই সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম। আর জামিনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু ও ওবায়দুল হক। বাকী আসামীরা পলাতক রয়েছে। আইন জটিলতার কারনে এই মামলায় ১০২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদি এ্যাডভোকেট খোকন সাহা ব্যতীত আদালতে আর কোন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানায়, তিনি জানান, বোমা হামলা মামলার আসামী জুয়েলের সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে খুব দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তির পর্যায়ে চলে যাবে। আগামী শুনানির ধার্য্য তারিখে আসামী শাহাদাৎ জুয়েলকে যেভাবেই হোক আদালতে হাজির করতে অতিরিক্ত পিপিকে নিদের্শ দেয়া হয়েছে।

তবে মামলার বাদি ও মহানগর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খোকন সাহা দাবি করেন কারাগারে থাকা আসামী শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েলের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হলেই মামলাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, ক্রসফায়ারে নিহত নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা ডেভিডের ছোট ভাই ১৬ জুন মামলার অন্যতম আসামী শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল কমপক্ষে ত্রিশটি মামলার আসামী। বর্তমানে সে কাসিমপুর কারাগারে থাকলেও তাকে প্রতিদিনই কোন না কোন মামলায় দেশের বিভিন্ন আদালতে নিয়ে হাজির করা হচ্ছে। সে কারনে এই মামলায় তাকে দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। এই মামলায় তার সাক্ষ্য গ্রহন সবচেয়ে জরুরী।

বোমা হামলার ঘটনার দায়ের করা মামলা দু’টি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য রয়েছে।

সেদিন নিহত হয়েছিলেন যারা
বোমা হামলার ঘটনায় নিহতরা হলেন, শহর (সাবেক) ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের সাবেক জিএস আকতার হোসেন, তাঁর ছোট ভাই সংগীত শিল্পী মোশারফ হোসেন মশু, সংগীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবিএম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, মো. আবু হানিফ নূরী, এনায়েত উল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা নিহত হন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ