আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিতর্ক ছুঁতে পারেনি আইভীকে

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

ক্ষমতা বড়ই জটিল একটি শব্দ। এটি এমন এক জিনিস যার কাছাকাছি থাকলে নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না অনেকেই। জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। তবে এর ব্যতিক্রম নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জের মতো ঘটনাবহুল শহরে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

গত দেড় যুগ তিনি নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ এই দেড় যুগে কোন বিতর্ক ছুঁতে পারেনি তাকে, গায়ে এতটুকু দাগ লাগতে দেননি তিনি। বরঞ্চ একসময়ের গুম খুনের নগরী হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ আজকে উন্নয়নের নগরী হিসেবে সারাদেশের রোল মডেল। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি লড়েছেন সন্ত্রাস চাঁদাবাজি মাদক ভুমিদুস্যদের বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে যে যাত্রা তিনি শুরু করেছিলেন সেই যাত্রার এই সময়েও এতটুকু জনপ্রিয়তা হারাননি তিনি। উল্টো দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। এই জনপ্রিয়তার প্রমাণ মেলে গত সিটি নির্বাচনগুলোতে তার পক্ষে পড়া সাধারণ মানুষের ভোটের হিসেবে। মানুষের পক্ষে রাজনীতি করলে জনগণ যে বিপদে-আপদে পাশে থাকে তার উৎকৃষ্ট উদারণ মেয়র আইভী। নারায়ণগঞ্জে আইভী মানে শুধু মেয়র নয়, তা আজ নগরবাসীর ঘরে ঘরে এক আস্থার নাম। দীর্ঘদিনে পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়ায় গড়ে উঠে এই সম্পর্ক। যে কারণে যতবার মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক অভিযোগ’ উঠেছে নগরবাসী তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

জানা যায়, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকা স্বাধীনতার পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দুইবারের এই পৌর চেয়ারম্যান নগরবাসীর জন্য অনেক কাজ করেছেন। নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জন্যও তিনি অকাতরে কাজ করেছেন। বাবার এই স্বভাবই পেয়েছেন বড় কন্যা ডা. আইভী। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ডা. আইভী ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন। বিএনপি জোট সরকারের ওই আমলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তখন হামলা-মামলার ভয়ে পলাতক। এদিকে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বাছাই করা হলো আইভীকে। তার তখন সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি প্রয়াত পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার বড় কন্যা। সেই সময় নগরবাসীকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আইভী। নির্বাচিত হওয়ার পর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে দেখালেন। অনুন্নত একটি পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত করেন। যেই শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাটই ছিল কাঁচা, ড্রেন ছিল অনুন্নত, সেই শহরের রাস্তাঘাট পাকা করে উন্নত সুয়ারোজ সিস্টেম চালু করেছেন। পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে ৮ বছর দায়িত্ব পালনের গত ১০ বছর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের গন্ডি ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে আজ পরিচিত এক রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি মেয়র আইভী। দেশের যেকোনো স্থানে নারায়ণগঞ্জের কথা উচ্চারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে মেয়র আইভীর নাম নেয়া হয়। এই নাম একজন সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক সাহসের বাতিঘরের। তাকে ঘায়েল করার জন্য একটি পক্ষ বারবার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তারা। উল্টো দিনদিন আরও জনপ্রিয় হয়েছেন মেয়র আইভী। কিন্তু নারায়ণগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে কেন এতো জনপ্রিয় মেয়র আইভী? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে নারায়ণগঞ্জের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অপশক্তির বিরুদ্ধে আপোসহীন আন্দোলন-সংগ্রামের দিকে তাকালেই। মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জের শান্তিপ্রিয় মানুষের চাহিদা যেমন উপলব্ধি করতে পারেন, নারায়ণগঞ্জবাসীও তার সৎ সাহস ও লড়াইয়ের মনোভাব সম্পর্কে জ্ঞাত। এ কারণে প্রতিটি নির্বাচনে তার পক্ষে রায় দেয় জনগণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৩ সালে সদ্য রাজনীতিতে আসা আইভী পৌর নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। পৌরসভার ১২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে জয়ের ইতিহাস গড়েন আইভী। এরপর ২০১১ সালে সবচেয়ে আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও বাজিমাত করেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হারান তিনি। ওই নির্বাচনে আইভী পান ১ লাখ ৮০ হাজার ভোট। এরপর ২০১৬ সালে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে হারান প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ভোটের এই হিসাবই বলে দেয় এই শহরে আইভীর জনপ্রিয়তা কতটুকু। গত দেড় যুগেও এই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি এবারের নির্বাচনে এই ভোটের ব্যবধান আরও বাড়বে, আবারও বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হবেন আইভী।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ