আজ সোমবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিচারের অপেক্ষায় না.গঞ্জ কারাগারে ২৪ বন্দি

 

# রাষ্ট্রিয়ভাবে আইনি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে : জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন

 বিচার নিষ্পত্তির আগে দীর্ঘ কারাবাস মানবাধিকার লংঘন : মাসুম
 মামলার চাপে কারাবন্দিরা নজরে পড়ে না : এড. সাখাওয়াত
 মূল ভুমিকা থাকতে হবে কারা কর্তৃপক্ষকে : এড দিপু
 সব রকম সহযোগিতা করছি: জেল সুপার সুভাষ
 ৫ বছর পর এমন মামলা থাকবে না : পিপি খোকন

মু. বিল্লাল আহম্মেদ
নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বছরের পর বছর আটক রয়েছেন ২৪ জন আসামী। যাদের কোন সাজা না হলেও বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় কারাগারে থাকতে হচ্ছে। বিভিন্ন মামলার এসব আসামী সর্বনিম্ন ৫ বছর আর সর্বোচ্চ ১৭ বছর ধরে কারাবাস করছেন। সরকারী কৌসুলি বলছেন, স্বাক্ষি না আসা, তদন্তকারী কর্মকর্তার বদলি-অবসরসহ নানা কারনে বিচারকাজে বিলম্ব হচ্ছে। মানবাধিকার নেতার মতে, এটা মানবাধিকরের চরম লংঘন।
সূত্র জানায়, ১৩ বছর ধরে কারাগারে আছেন এমন একজন বন্দি ১শ’ ১০ বার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তবুও মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। ২৪ জন আসামীর মধ্যে কারও মামলা যুক্তিতর্কে চলমান, কারও স্বাক্ষগ্রহনে আটকে আছে।

যুক্তিতর্ক চলমান
২০১৩ সালের ১০ মার্চ সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামী হয়ে কারাগারে রয়েছেন মো. মোশারফ হোসেন (৩১)। তিনি সোনারগাঁয়ের মঙ্গলের গাঁও এলাকার ফজলুল হক মুন্সির ছেলে। এ পর্যন্ত ৬৯ বার হাজিরা দিয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর মামলাটি জেলা দায়রা জজ আদালত পাঠায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে। এ মামলা যুক্তিতর্ক চলমান রয়েছে। একই মামলায় সোনারগাঁয়ের দুর্গা প্রাসাদ গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে হাজতি মো. রাজু (৩৩) ২০১৩ সালের ১০ মার্চ থেকে কারাগারে যান। তিনি এ পর্যন্ত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ৫১ বার।

যে মামলার সাক্ষ্য গ্রহন চলমান

নিজের ছেলেকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ১৭ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আছেন রূপগঞ্জ উপজেলার পুতিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশরাফ উদ্দিন লিটন। ছেলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১ নং আসামী করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দিয়েছেন। ২০০৬ সালের ৮ আগষ্ট এই মামলাটি বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে সাক্ষ্য গ্রহন চলমান থাকা অবস্থায় উচ্চ আদালত বিচারকার্যে স্থগিত আদেশ দেন। এই মামলায় নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৮৫ বার হাজিরা দিয়েছেন হাজতি আশরাফ উদ্দিন লিটন।
কয়েদি মো. সুজন মাহমুদ (৪৩) নেত্রকোনা জেলার বারহট্টা থানার আলোকদিয়া গ্রামের ইউনুছ মিয়ার ছেলে। তিনি ফতুল্লা থানায় দায়ের করা মামলায় ২০০৯ সালের ১৭ মে কারাগারে যান। কারাগার থেকে ৫২ বার মামলার হাজিরা দিয়েছেন আদালতে। এই মামলার ১ নং আসামী তিনি। বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতে মামলার ৬ ও ৮ নং সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন চলমান রয়েছে।
হাজতি মো. আমান উল্লাহ (৪১)। তিনি চট্রগামের মীরেরসরাই থানার মধ্যম আরবাড়িয়া গ্রামের রুহল আমিনের ছেলে। গত ৬ আগষ্ট ২০০৫ সালে কারাগারে যায়। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা থানায় ২ টি মামলা রয়েছে। ফতুল্লা থানার দায়ের করা এই মামলাটি ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১০ সালে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে প্রেরণ করা হয়। সদর থানায় দায়ের করা মামলার ৯ নং আসামী তিনি। বর্তমানে এই মামলার বিচারকার্য চলমান রয়েছে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২ম আদালতে। আমান ৯৬ বার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তার পরবর্তী হাজিরা ৩০ অক্টোবর বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।
কয়েদি মো. মোশারফ হোসেনের (৫১) বিরুদ্ধে ২ টি মামলা রয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় গত ৬ আগষ্ট ২০০৭ সালে কারাগারে যান। মামলার ১ নং আসামী তিনি। আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ৪৪ বার। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহন চলমান আছে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতে। মোশারফ পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানার দক্ষিন আমড়া গাছিয়া গ্রামের জয়নুউদ্দিন জয়নালের ছেলে। ২০০৯ সালে ৩১ অক্টোবর বন্দর থানায় দায়ের করা মামলায় কারাগারে যান মাইন উদ্দিন অরফে বাবু (৩৮)। তিনি চট্রগ্রামের পাহাড়তলীর সারাইপাড়া এলাকার মৃত আ. মান্নানের ছেলে। মামলাটি ১৬ মে ২০১০ সালে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে পাঠানো হয়। এই মামলায় ৬৮ বার হাজিরা দিয়েছেন তিনি। মামলার বিচারকার্যে সাক্ষ্য গ্রহন চলমান আছে।
হাজতি মো. নুর মোহাম্মদ (৩৯) নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোপচর এলাকার ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে। সদর থানায় দায়ের করা মামলায় গত ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ কারাগারে যান। ৬৫ বার মামলার হাজিরাও দিয়েছেন আদালতে। পরবর্তী হাজিরা ২১ অক্টোবর। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহন চলমান রয়েছে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে। বন্দর উপজেলার তাপরা গ্রামের মৃত চান মোহন দাসের ছেলে নারায়ন চন্দ্র দাস (৪০) বন্দর থানায় দায়ের করা মামলায় কারাগারে যান ২০০৫ সালের ১৫ জুন। এই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ৮৩ বার। মামলাটি বিজ্ঞ যুগ্ম দায়েরা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহন চলমান রয়েছে। আদালত পরবর্তী বিচারকার্যের দিন ধার্য করেছেন ৩১ অক্টোবর। ২০১০ সালের ৩১ মার্চ ফতুল্লা থানায় দায়ের করা মামলায় কারাগারে যান মো. তুষার আহম্মেদ আরিফ (৩৯)। এ পর্যন্ত আদালতে ৫৮ বার হাজিরা দিয়েছেন। বর্তমানে অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতে সাক্ষ গ্রহন চলছে। ১৮ সেপ্টেম্ভর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। হাজতি মো. আক্তার মিয়া (৩৭) রূপগঞ্জের হাউলিপাড় এলাকার আলীম উদ্দিনের ছেলে। রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় ২০০৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী কারাগারে যেতে হয় তাকে। ১০২ বার হাজিরা দিলেও মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৪ সালের ৬ মার্চ বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে মামলাটি প্রেরণ করা হয়। কয়েদি মো. হালিম সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া এলাকার আবুল কালাম সরদারের ছেলে। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা অস্ত্র মামলায় ২০১২ সালের গত ১৮ মে কারাগারে যান। অস্ত্র মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ৫০ বার। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে অতিরিক্তক দায়রা জজ ১ম আদালতে সাক্ষ্য গ্রহন চলমান রয়েছে।

বিশেষ ট্রাইব্রুনাল বিচারাধীন মামলার সাক্ষ্য গ্রহন
বিশেষ ট্রাইবুনালে দায়ের করা মামলায় ২০০৫ সালের ২০ ডিসেম্বর আড়াই হাজার উপজেলার চনপাড়া এলাকার মো.আজাহার আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম অরফে রফিকুল ইসলাম (৪৭) কারাগারে যান।
তার বিরুদ্ধে ২ টি মামলা রয়েছে। আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ১০১ বার। বিজ্ঞ ৭ নং বিশেষ ট্রাইবুনালে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহন চলমান রয়েছে। একই মামলায় কয়েদি মো. জিয়ারুল ইসলাম ওবায়দা (৩০) টাংগাইলের কালিহাতি থানার বল্লা গ্রামের সুলতান হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। আড়াইহাজার ও ফতুল্লা থানায় দায়ের করা মামলায় গত ১ জানুয়ারি ২০০৬ সালে কারাগারে যান। এ পর্যন্ত ১১০ বার হাজিরাও দিয়েছেন আদালতে। দুটি মামলার সাক্ষ গ্রহন চলমান আছে ৭ নং বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালতে। পরবর্তী হাজিরার দিন ২৪ সেপ্টেম্বর।

২০১০ সালের ৭ জুন কারাগারে যান হাজতি নুর হোসেন (৩৮)। বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনের ২টি মামলা রয়েছে এই হাজতির বিরুদ্ধে। ২০১১ সালের ১ মার্চ বিস্ফোরক মামলা ও ২০১০ সালের ৯ আগস্ট অস্ত্র আইনের মামলা প্রেরণ করা হয় বিজ্ঞ ২ নং বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালতে। এ পর্যন্ত ৬৫ বার হাজিরা দিয়েছেন তিনি। সে কুমিল্লার বড়–রা উপজেলার খল্লারপার গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে। হাজতি মঞ্জু মিয়া (৪৩) জামালপুর সদর উপজেলার কামালের চর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। তিনি সোনারগা থানায় দায়ের করা ২ টি মামলায় ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি কারাগারে যান। ৭১ বার মামলার হাজিরা দিয়েছেন। একটি মামলার বিচারকার্য চলামান ৪ নং যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে ও আরেটি মামলার অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে।

আরও যে সকল মামলার বিচারকার্য চলমান রয়েছে
কয়েদি আইয়ুব হোসেন বাবুল (৪৩) ২০০৬ সালে ১৩ নভেম্বর সদর থানায় দায়ের করা মামলায় নাারায়ণগঞ্জের কারাগারে যান। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১০৭ বার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। মামলাটি বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বরিশালের কোতোয়ালী থানার রায়পুর গ্রামের আশ্রাফ আলীর ছেলে।

ফতুল্লার ইসদাইর এলাকার মো.হাশেম ওরফে খোকা মিয়ার ছেলে হাজতি জাহাঙ্গির হোসেন (৩৩) কে নারী ও শিশু ট্রাইবুনালে দায়ের করা মামলায় ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি আদালতে মামলার হাজিরা দিয়েছেন এখন ৫২ বার। ২০১৩ সালে ২২ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুটি মামলায় কারাগারে যান মনিরুল ইসলাম মঞ্জু (৩০)। কারাগারে থেকে ৪৩ বার হাজিরা দিয়েছেন আদালতে। মামলা দুটি বিচারাধীন রয়েছে অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে। কয়েদি মো. জহুরুল ইসলাম (৩৯) রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ২০০৯ সালের ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের কারাগারে যায়। আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ১শ’ ৭ বার মামলাটির বিচারকার্য চলমান আছে অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতে। সে রংপুরের গংগাচয়া উপজেলার উমরপুর গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে।

হাজতি সুমন মিয়া (৩৩) রূপগঞ্জের গংগানগর এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে। ২০০৯ সালের ১৭ আগষ্ট কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। মামলাটি অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে বিচারাধীন। এই হাজতির আরও একটি মামলা বিচারাধীন নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল আদালতে। একই মামলায় হাজতি জামাল (৩৪) ২০০৯ সালের ১৭ আগষ্ট থেকে নারায়ণগঞ্জের কারাগারে আছেন। তিনি রূপগঞ্জের গংগানগর এলাকার আব্দুর রহিম মিয়ার ছেলে। এ দু’জনেই আদালতে ৫৫ বার হাজিরা দিয়েছেন। এই মামলার আরেক হাজতি আরিফুল ইসলাম অরফে আরিফ (৩২) রূপগঞ্জের গংগানগর এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে। তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ৫৩ বার।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এ রকম বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন রয়েছেন ২৪ কারাবন্দি রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ কারাগারে। সাজা হওয়ার আগেই ৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৭ বছর পযর্šÍ নারায়ণগঞ্জের কারাগারে বিচার নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা ৩৩ টি মামলার বিচারকার্য চলমান রয়েছে। এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কারাকর্তৃপক্ষ বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা বিভাগীয় কারা মহা পরিদর্শক ও সরকারি কৌসুলীকে অবগত করা হয়। তবে বিচার চলমান থাকলেও সূত্র জানায়, তারিখ মতো স্বাক্ষী না আসা, তদন্ত কর্মকর্তার বদলী-অবসর, কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যু, সময় মতো চার্জশিট না দেয়ায় মামলা কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ঢাকা দক্ষিন বিভাগ ও নারায়ণগঞ্জের সম্বনয়ক এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, কারাগারে বিচার নিষ্পত্তির আগে দীর্ঘ কারাবাস করা মানবাধিকার লংঘন। কারাবন্দিদের সুরক্ষার দায়িত্বও সরকারের। রাষ্টকে আইন সংশোধন করে বিচারকার্যের জন্য নির্ধারিত সময় দেয়া দরকার বলে মনে করেন এই মানবাধিকার নেতা।

নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট সাখায়াত হোসেন খান বলেন, পুলিশের মধ্যে যারা সাক্ষ্য দেন বা সাক্ষী আনেন এ বিষয়ে সর্তক হতে হবে। মামলার বিচারকার্যে যে পাবলিক প্রসিকিউটর বা সহকারী যারা আছেন তাদের নিয়োগে সরকারের দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এখানে রাজনৈতিক বিশেষ এমন লোক দেয়া হয়েছে যিনি হয়তো অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলা গুলোতে মনোযোগ দিতে পারছেন না। এছাড়া এমন কিছু নতুন লোক আছে যারা আইন কানুন কিছুই বুঝেন না। সিনিয়র এই আইনজীবী আরও বলেন, কোন মামলা দ্রুত নিষ্পতি করার জন্য যে পরিমন্ডল থাকার কথা তা নেই। আদালতে মামলার চাপ থাকায় কারাবন্দিদের মামলার প্রতি বিশেষ নজর পড়ে না। যেমন একজন বিচারক প্রতিদিন ২০ টি মামলার বিচার করতে পারেন অথচ সেই বিচারকে ২০০ মামলার বিচার করতে হচ্ছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির আরেক সাবেক সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, বিনা বিচারে বা বিচারের অপেক্ষায় যে সকল কারাবন্দিদের বিষয়ে সরকারের আইন মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে পরিস্কার ভাবে বলা আছে, যে কারা কর্তৃপক্ষ জেলা ও দায়রা জজ ও লিগ্যাড এইড কমিটি , জেলা প্রশাসককে কে জানাবেন। ৫ বছরের ঊর্ধ্বে বিচারাধীন মামলার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের জানার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, কোন আসামির মামলার সাক্ষী আসছেন না। কোন কারাবন্দির আইজীবী নেই এ বিষয়ে কারাপর্তৃপক্ষ যদি না জানায় তাদের দায়িত্বে অবহেলা করছেন। তার মতে, হাজতিদের জন্য মূল ভুমিকা থাকতে হবে কারা কর্তৃপক্ষের।
এ বিষষে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, যে সকল কারাবন্দিরা দীর্ঘ সময় কারাগারে রয়েছেন বিচার নিষ্পত্তির জন্য তাদের আমরা সব রকম সহযোগিতা করছি। তবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা জঙ্গিবাদী মামলাগুলো নিষ্পত্তি হতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হচ্ছে আদালতের। কারাবন্দিরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন তারিখ অনুযায়ী। আর যাদের আইনজীবী নাই। তাদেরকে আমরা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যামে আইনি সগযোগিতা প্রদান করছি।

বিচারাধীন কারাবন্দি ও মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, অনেক গুলো মামলার বিচারকার্য চলমান রয়েছে আদালতে। এর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহী, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মামলাও আছে। তবে অস্ত্র ও খুনের যে মামলা গুলো ১২ বছরের বেশী রয়েছে তা চিহ্নিত করে রাষ্ট্র পক্ষ কাজ করছে। বিচার বিলম্বের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষী উপস্থিত থাকে না। অনেক সাক্ষী মারা গেছেন, পুলিশ কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী কর্মকর্তাও নেই। এ সকল মামলার বিচার হচ্ছে তবে সংখ্যায় কম। সরকারি কৌঁসুলি আরও বলেন, আমরা উদ্যোগ গ্রহন করেছি আগামি ৫ বছর পর এ ধরনের মামলা আর থাকবে না। আর নতুন মামলাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছি। জেলার এই আইন কর্মকর্তা বলেন, কোন মামলার বিচারকার্য নিয়ে উচ্চ আদালতের স্থাগিত আদেশ থাকে। তাহলে উচ্চ আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিজ্ঞ জজ সেই বিচারকার্য চলমান করতে পারেন না। তিনি শুধু সংরক্ষন করতে পারবেন। আর আসামী ধার্যকৃত শুনানি তারিখে আদালতে হাজিরা দিবেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন দৈনিক সংবাদর্চচাকে জানান, কারাগারে ৫ বছরের বেশী যে সকল কারাবন্দি রয়েছেন তাদের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। প্রতি মাসেই আমরা কারাগার পরিদর্শন করে থাকি। তিনি আরও জানান, যে সকল কারাবন্দিদের আইনজীবী নেই বা জটিলতায় আছে তাদের বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ