আজ মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বার বার সমালোচিত তারা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার আগে তারা তিনজন ছিলেন তিন দলের। চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বিএনপির, নাজিমউদ্দিন আওয়ামী লীগের আর ফাতেমা মনির জাতীয় পার্টির। অন্য দলের দুইজনের মধ্যে একজন শতভাগ আরেক নিরানব্বই ভাগ আওয়ামী লীগের হয়ে গেছেন। তাদের নিয়ে এমন মতামত ব্যক্ত করে বিশ্লেষকরা বলেন, এ তিনজনই নানাভাবে বিতর্কিত।
এক যুগ আগে একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। তার এ নির্বাচিত হওয়াকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভুল ও কোন্দলের রাজনীতির ফসল বলে মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যদি আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী না থাকতেন তবে আজাদ বিশ্বাস নয় চেয়ারম্যান হতেন আনোয়ার হোসেন, আব্দুল কাদির কিংবা আবুল হাসনাত মো. শহীদ বাদল (ভিপি বাদল)। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এক পদে প্রার্থী হওয়ার পেছনে ছিলো শহরের উত্তর-দক্ষিণ মেরুর কোন্দল ও ব্যক্তি রেষারেষি। একটি প্রভাবশালী পক্ষ আড়াল থেকে খেলে আওয়ামী লীগের নেতাদের হারিয়ে বিএনপির নেতার কাছে এ চেয়ারটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে মনে করেন রাজনীতি সচেতন মহল। এরপর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাস তিনজন অপরিচিত মুখ দিয়ে মামলা করান। এ তিনজনের মধ্যে প্রথম একেবারে ছা-পোষা ফুট ফরমায়েশ খাটা মানুষ, ২য় জন অরাজনীতিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর ৩য় জন মহল্লার একটি ছোট হোসিয়ারী কারখানার মেশিন অপারেটর। সাদামাটা এ তিনজনের একটি মামলার কারনেই প্রায় ৭ বছর ধরে সদর উপজেলা নির্বাচন বন্ধ। তবে এখানেও আজাদ বিশ্বাসকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। এদিকে গুঞ্জন উঠেছে, সম্প্রতি আরও একটি মামলা করিয়েছেন আজাদ বিশ্বাস। জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক পদে থাকলেও আজাদ বিশ্বাস দলীয় কর্মকান্ডে কমই থাকেন। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের মঞ্চে উঠে এমপি ও সরকারের গুণগান গাইতে পছন্দ করেন। শামীম ওসমানের সভায় তাকে দর্শক সারিতে দেখা গেছে। এছাড়া লিপি ওসমানের সভাতেও থাকেন তিনি। বিএনপি নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাসকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি এলিট শ্রেনীর ক্লাবে অন্যরকম গুঞ্জন শোনা যায়।
সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ভূঁইগড়ের রুপায়ণের মাটি ভরাটের সময় এক যুবককে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছিলো তার বিরুদ্ধে। গত বছর ১৮ এপ্রিল ৭০ লাখ টাকা চাদাঁ দাবীকে কেন্দ্র করে নাজিম উদ্দিন বাহিনীর ক্যাডারা হামলা করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম আজাদসহ তার পরিবারের উপর। এসময় আরো আহত হয় মানবজমিন পত্রিকার ফতুল্লাহ প্রতিনিধিসহ কয়েকজন। ১৯ এপ্রিল রাতে ভূইগড় রূপায়ন টাউনের ফ্ল্যাট মালিক আবু সাঈদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে নাজিম উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ ৫০/৬০ জনের নামে মামলা করে। ফতুল্লার সাইন বোর্ড এলাকায় মাটি ফেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা তৈরীর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে সড়ক দখল ভরাট করা স্থানে তৈরী করা করেছে টিনের অর্ধশত দোকান ঘর। প্রতি দোকান ঘর থেকে লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে ভাড়াও দেয়া হয়েছে। নাজিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে তৃতীয় স্ত্রী মামলা করেছিলো তার শিশু সন্তানকে অপহরণের অভিযোগে। ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে পিস্তল ঠেকিয়ে ২১ মাস বয়সী সন্তান নাজিলা আক্তার মিতুসহ সুমাইয়াকে বাসা থেকে বের করে দেয় নাজিম উদ্দিন। সুমাইয়া তার সন্তান নিয়ে ডেমরা এলাকার সেতুবন্ধন টাওয়ারে মায়ের বাসায় গিয়ে ওঠেন। ১৮ সেপ্টেম্বর নাজিম উদ্দিন তার দুই স্ত্রী মনোয়ার ও শামীম আরাসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে সুমাইয়ার মায়ের বাসায় গিয়ে সুমাইয়ার পরিবারের লোকজনদের মারধরসহ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২১ মাসের শিশু সন্তান নাজিলা আক্তার মিতুকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসে। পরে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সুমাইয়া আক্তার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দায়েরের পর ফতুল্লা মডেল থানার আমিনুল ইসলাম নামের একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শিশুটিকে নাজিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে তার মায়ের হেফাজতে তুলে দেন।

সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ফাতেমা মনিরকে তেমন চিনতেন না মানুষ। নির্বাচনের সময়ে জাতীয় পার্টি করলেও ইদানিং তিনি আওয়ামী লীগের নেত্রি হয়েছেন। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে তিনি তার বড় ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাফেজ মোক্তারের পরিচয়ে উৎরে যান। তবে ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই একের পর এক অঘটনের জন্ম দেন তিনি। যার তার সাথে ঝগড়া, পুরুষালি আচরণ, জায়গা দখল, বেশী দরে কোরবানীর হাট কিনে অতিরিক্ত টাকা আদায় সহ নানাভাবে আলোচিত সমালোচিত হন তিনি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন থেকে শুরু তিনি একের পর ঝগড়া লেগে বেশী আলোচিত হয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাসের সাথে কয়েকবার ঝগড়া হয়েছে তার। প্রকাশ্যে উপজেলা প্রাঙ্গনে মল্লা যুদ্ধ ও অশ্রাব্য বাকযুদ্ধ দেখেছে অনেকেই। এছাড়া আলীগঞ্জে একটা জায়গা দখল নিয়ে শ্রমিক নেতা পলাশ এর আগে সাংসদ কবরীর সাথেও দুর্ব্যবহার করেছেন হাফেজ মোক্তারের বোন ফাতেমা মনির। সূত্র জানায়, ফতুল্লা থানায় গিয়ে একাধিকবার পুলিশের সাথে খারাপ আচরন করেছেন এ নারী জনপ্রতিনিধি। ক্ষমতাসীন দলের নেত্রি, নারী, জনপ্রতিনিধি ও গলাবাজির ভয়ে তাকে পুলিশ সদস্যরা এড়িয়ে চলতেন। তবে বৃহস্পতিবার পুলিশের অন্যরকম চেহারা দেখতে হয়েছে ফাতেমা মনিরকে। পুলিশ জানায়, বুধবার মামলার আসামী বেইলীকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনলে বৃহস্পতিবার ফাতেমা মনির এসে থানায় ঢুকেই চড়া গলায় বলে, আমার লোক কে ধরে এনেছে তার চেহারা দেখতে চাই। এসময় পুলিশ সদস্যরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি উল্টো পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে লকআপের সামনে চলে যান। এরপর পুলিশের কর্মকর্তা এ খবর জেনে তাকে আটক করেন। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা থানায় আটক থাকার পর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ হাইব্রিড আওয়ামী লীগারকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ