আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাণিজ্য মেলায় ফার্ণিচারের স্টলে ক্রেতা কম

এম.এ মোমেন:

বাণিজ্য মেলার ফার্ণিচার স্টলে ক্রেতা কম। দর্শনার্থী বেশি। ভার্চুয়ালে কিংবা পর্দায় ফার্ণিচার প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিশেষ ছাড় থাকায় বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। পরিবহণ খরচ বাঁচাতে কেউ কেউ স্টলেই পছন্দের ফার্ণিচার অর্ডার দিচ্ছেন। কেউবা ফার্ণিচারের ক্যাটালগ সংগ্রহ করছেন। স্টলের সাইজ আশানুরুপ না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ স্টলের সাইজ আগামি মেলায় ৪শ’ বর্গফুট করার দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে ক্রেতার পরিবারের সবাই ফার্ণিচার দেখছেন। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে গৃহকর্তারা মেলায় এসেছেন। ফার্ণিচারের ক্যাটালগ-মডেল দেখছেন। কেউবা দাম হাঁকছেন। আবার কেউবা ফার্ণিচার ক্রয় করে পরিবহণে নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

ফার্ণিচারের দোকানগুলোতে মেলার প্রথমদিকে বিক্রি ছিল কম। ৫জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। গতকাল ১৬ জানুয়ারি রবিবার বিক্রি ছিল কম। তবে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের কেউ কেউ ফার্ণিচারের স্টলগুলো পরিদর্শন করেছেন। পরিবহন খরচ ও টানা হেঁচড়া এড়াতে কেউ কেউ শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন। নিজ নিজ বাসার আশপাশের শো-রুম থেকে তারা পছন্দের ফার্ণিচার কিনবেন। তাতে ফার্ণিচার স্টলের মালিকরাও খুশি। মেলায় বিক্রি আশানরূপ না হলেও প্রচারণায় তারা লাভবান বলে জানিয়েছেন ফার্ণিচার ব্যবসায়ীরা। মেলায় কোন কাঠে এবং কি রঙের ফার্ণিচার হবে তার অর্ডার নেয়া হচ্ছে।

ফার্ণিচারের দোকানগুলোতে কাঠের বিভিন্ন সাইজের খাট, সোফা, আলমিরা, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, ওয়াল শো-কেজ, টি-টেবিল, ওয়ারড্রব, কর্ণার শো-কেজ, রকিং চেয়ার, টেবিল ল্যাম্প, রেহাল ও টিস্যুবক্স শোভা পাচ্ছে। এসকল ফার্ণিচার প্রসেসিং, সিজেনিং ও ক্যামিকাল ট্রিটম্যান্টের। রঙ বেরঙের ওয়াটার প্রুফ ও লেকার করা।

প্রতিষ্ঠানের নামের ও সাইজের উপর দাম কম বেশি। একটি খাট ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোফাসেট ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্পেশাল সোফার দাম আরও বেশি। তবে এখানে লাইট লেকার, এন্টিক, গ্রে, ইভুনি, সলিট রঙ, মেহগনি কাঠের চাহিদা বেশি।
আখতার ফার্ণিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন বলেন, বাণিজ্য মেলায় সোফা ও খাটের চাহিদা বেশি। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
হাতিল ফার্ণিচারের সহকারী ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা মেলায় ফার্ণিচার স্টলের মালিকরা স্পেস কম পেয়েছি। সেকারণে হাতে গোণা কয়েক রকমের ফার্ণিচার তুলেছি। তবে ভার্চুয়ালে ফার্ণিচার দেখাচ্ছি। ক্রেতারা অর্ডার করছেন। তাতে সাড়াও পাচ্ছি বেশ। অর্ডার নেওয়া ফার্ণিচার শো-রুম থেকে সরবরাহ করা হবে।

পারটেক্স ফার্ণিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি এএফএম ফয়সাল বলেন, মেলায় ফার্ণিচারের স্টলগুলো ৪শ’ বর্গফুট দেওয়া হয়েছে। তাতে সকল প্রকার ফার্ণিচার ডিসপ্লে করা যাচ্ছে না। কমপক্ষে ৮শ’ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ফার্ণিচার ডিসপ্লে করতে সুবিধা হতো।

রিগ্যাল ফার্ণিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, মেলার প্রথমদিকে ফার্ণিচার আইটেম অনেকেই দেখতে আসেন। কেউ কেউ ক্রয়ও করেন। তবে মেলার শেষের দিকে ফার্ণিচার বিক্রি হয় বেশি। সে আশায় আমরা বুক বেঁধে আছি।

আলীবাবা ডোরের সহকারী ব্যবস্থাপক ফকরুল ইসলাম রাজ বলেন, মেলায় ঢাকার তুলনায় স্থানীয় ক্রেতা ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। বেশি দামের ফার্ণিচারের চাহিদা এখানে কম। তবে কমদামি ফার্ণিচারের চাহিদা বেশি। আমাদের সব ধরণের দরজা থাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।

নিউ এ্যান্টিক ফার্ণিচারের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম খান বলেন, মেলায় ফার্ণিচারের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তাতে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমনে ফার্ণিচারের দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই থাকে।

নাদিয়া ফার্ণিচার লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি দীপু শাহ্ বলেন, ফার্ণিচারের দোকানগুলোতে দর্শনার্থীর পরিমাণ বেশি। তাদের কেউ কেউ শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন। ফার্ণিচার বিক্রি হচ্ছে কম। প্রচার প্রচারণা হচ্ছে বেশি। তাতেই আমরা লাভবান।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে মেলায় আসা ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বলেন, মেলায় ব্যতিক্রমধর্মী ফার্ণিচার প্রদর্শন করা হয়। সেকারণে বাণিজ্য মেলা থেকেই আমি ফার্ণিচার কিনে থাকি। এবারও মেলা থেকে ফার্ণিচার ক্রয় করবো।

মিরপুর থেকে আসা গৃহবধূ জাহেদা আক্তার বলেন, নিজেদের উৎপাদিত পণ্য মেলায় প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা থাকে। প্রত্যেকেই নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে ভালো মানের পণ্য স্টলে তোলেন। ক্রেতারাও জেনে শুনে পচ্ছন্দের সেরা পণ্যটি ক্রয় করতে পারেন।

রূপগঞ্জ ইউপি সদস্য রিটন প্রধান বলেন, ফার্ণিচারের শো-রুম থেকে মেলার স্টলে দাম কম। সেকারণে বিশেষ ছাড়ের সুযোগে তিনি প্রয়োজনীয় পছন্দের ফার্ণিচার ক্রয় করেন বলে জানিয়েছেন।

বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ফার্ণিচার স্টলের জায়গার পরিমাণ আগামিতে বৃদ্ধি করা যায় কিনা তা আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ন্যায় ফার্ণিচার ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। স্টলের জায়গা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া দু’টি স্টল একসাথে নিলেও সমস্যার সমাধান হতে পারে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ