আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বগুড়ায় নাব্যতা হারিয়ে বিলিন হয়েছে যাচ্ছে দুই নদী

বগুড়ায় নাব্যতা হারিয়ে

বগুড়ায় নাব্যতা হারিয়ে বিলিন হয়েছে যাচ্ছে দুই নদীবগুড়ায় নাব্যতা হারিয়ে

বগুড়া  প্রতিনিধি: নদীর কূল আছে, কিনারা আছে, কিন্তু ঢেউ নেই। বহুদিন ধরে নদীর বুকে পাল তুলে নৌকা আসা-যাওয়া করেনা। দিনদিন ছোট হয়ে আসছে নদীর আকার। নদীর দু-পাশের মাটি কেটে ভরাট করে অবৈধ দখল ও সীমাহীনভাবে বালু উত্তোলন করায় দুই নদীর রুপ আজ বিলীন হওয়ার দারপ্রান্তে। মাঝে মধ্যেই প্রকল্পের মাধ্যমে নদী খনন ও প্রসস্থ করার কথা থাকলেও তা ভিন্নভাবে করা হচ্ছে। নদী খননের মাটি পাড়ের উপরে না ফেলে নিচের অংশে ফেলে রাখা হয়। যেকারনে নদীর আকার দিনদিন আরো ছোট হয়ে আসছে। নামমাত্র নদী সংস্কারের জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে মাটি খনন কাজ করে।
বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভদ্রাবতী নদী ও নাগর নদীর দু-পাশ্বের পাড়ে মাটি কেটে ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ আর পানি না থাকায় যৌবন হারাচ্ছে উপজেলার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দুই নদী। এছাড়া নাগর নদী ও ভদ্রাবতী নদী থেকে মাঝেমধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রভাবশালী চক্র। নদীর দু-পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা । নদীর দুই ধার দিয়ে আনেকেই আবার কৃষি আবাদ করে খাচ্ছে। যারফলে নদী হারাতে বসেছে তার নদীত্বর রুপ। একসময় পানিতে থৈথৈ করতো ভদ্রাবতী আর নাগর নদী। পানি না থাকায় সুখিয়ে সুখিয়ে মরছে দুই নদী। যৌবন হারিয়ে এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে এক সময়ের খর¯্রােতা দুই নদী ভদ্রাবতী আর নাগরনদী।

সূত্রমতে, উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৮কিলোমিটার দূরে ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে রয়েছে ভদ্রাবতী নদী। বগুড়া সদরের শবরুল দিঘী থেকে ভদ্রাবতী নদীর উৎপত্তি। এই নদীর সাথে সিংড়ার চলনবিল ও যমুনা নদীর সংযোগ রয়েছে। অপরদিকে, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭কিলোমিটার পশ্চিমপ্রান্তে ৩নং ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকান্দি গ্রামের বুকচিরে অবস্থিত নাগরনদী। দুপচাঁচিয়ার তালোড়া থেকে উৎপত্তি হওয়া এই নদী গুরুদাসপুর দিয়ে বাঘাবাড়ি নদীতে সম্পৃক্ত। নাগরনদীর নামকরণের ইতিকথা না পাওয়া গেলেও ভদ্রাবতী নদীর নামকরণের তথ্য পাওয়া গেছে। ভদ্রাবতীর নদীর উৎপত্তি নিয়ে কল্প কাহীনিও বেরিয়ে এসেছে।

সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে বুড়ইল ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের ৯৫বছরের বৃদ্ধ আলহাজ্ব আব্দুর রহমানের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, দাদার মুখে শুনেছি রাজার শাসন আমলে শাবরুল দিঘীর বুক চিরে ভদ্রানদীর আভির্ভাব ঘটে। নদীর উৎপত্তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া গেলেও এই নদীর মাটি খনন করা নাকি আসলেই অলৌকিকভাবে উৎপত্তি সেটা বয়স্ক বৃদ্ধরাও প্রমান স্বরুপ উল্লেখ করতে পারেনি। তবে নদীর নামকরনের নেপথ্যের কাহীনি সম্পর্কে জানা গেছে।

মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক (অব:) আজিজুল হক বলেন, সেন বংসের অচ্যিন কুমার নামের শেষ রাজার আমলে তার কন্যা ভদ্রাবতীর নাম অনুসারে নদীর নামকরণ। বর্ষা মৌসুমে ভরা পানিতে নদী থৈথৈ করতো। ছোট-বড় মাছ দেখা মিলতো। আগের দিনে কৃষিজমিতে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি নদী থেকেই ব্যবহার হতো। দুই নদী দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরা নৌকায় চলাচল করতো। সেইসব চিত্র আজ শুধুই স্মৃতি। নদীর যৌবন ও বৈচিত্রময় রুপ রক্ষার্থে মাটি ভারাট বন্ধ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করাসহ বালু উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন বলে অনেকেই এমন মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন।

এলাকার সচেতন মানুষের প্রাণের দাবি, সরকারি পৃষ্টপোষকতায় ভদ্রাবতী ও নাগরনদী খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। নদী মাত্রিক বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য আবহমান কালের ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের উর্ধতন কতৃপক্ষের দ্রুত আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ