আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফের বিতর্ক সোনারগাঁ আ.লীগের কমিটি নিয়ে

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি বৈধ, নাকি আগের কমিটি বহাল তা নিয়ে চলমান দ্বন্দের আগুনে এবার ঘি ঢেলেছেন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু। সম্প্রতি চাষাড়ায় সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে এক মিটিংয়ে আহবায়ক কমিটিকে (এড. শামছুল ইসলাম – ইঞ্জি: মাসুম) বৈধ বলেছেন বাচ্চু এমন দাবী করেছেন ঐ বৈঠকে উপস্থিত থাকা কয়েকজন নেতা। ফলে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের মাঝে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

তবে এ ধরনের কোনো কথা না বলার দাবী করে বাচ্চু বলেন, বৈধ না অবৈধ সেটা বুঝবে সেন্ট্রাল। দলীয় সুত্রে জানা যায়, সোনারগাঁয় আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকেই দুই ধারায় রাজনীতি হচ্ছে। কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত নেতারা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে অবৈধ ঘোষণা করে প্রতিহতের ঘোষণা দেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তৃণমূল নেতাদের মাঝেই নয়, আহবায়ক কমিটি বৈধ, না কি আগের কমিটি বহাল তা নিয়ে জেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও চলছে তর্ক-বিতর্ক।

জেলা আওয়ামীলীগের গুটি কয়েক নেতার দাবী (এড. শামছুল ইসলাম – ইঞ্জি: মাসুম) আহবায়ক কমিটি বৈধ। অপরদিকে জেলা আওয়ামীলীগের বড় একটি অংশের নেতারা কেন্দ্রের রেফারেন্স দিয়ে বলছে সোনারগাঁ উপজেলায় আওয়ামীলীগের আগের কমিটির (এড. শামছুল ইসলাম – মাহফুজুর রহমান কালাম) কার্যক্রম চলবে। আর তাই এ পক্ষটির ৩৮ জন নেতা সম্মিলিতভাবে কেন্দ্রের কাছে চিঠির মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ দেন। যার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমে আহবায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেন। পরে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে এ সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর করোনা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এ দ্বন্দের সমাধান করা সম্ভব হয়নি। চলমান এ দ্বন্দের মধ্যেই বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে নতুন করে আবারো উত্তেজনার সৃষ্টি করছেন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু এমনটাই দাবী জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের।

চাষাড়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠক সুত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ১৫ আগষ্টের কর্মসূচীর বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের একাংশের নেতাদের সাথে নগরীর চাষাড়ায় একটি রেষ্টুরেন্টে বৈঠকে বসে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি (এড. শামছুল ইসলাম – ইঞ্জি: মাসুম)। সেই মিটিংয়ে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল ও সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু উপস্থিত থাকলেও অজানা কোনো অজুহাতে উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই। এ বৈঠকে জেলার সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু এ আহবায়ক কমিটিকে বৈধ বলেও ঘোষণা করেন বলে জানায় বৈঠকে অংশগ্রহনকারী এক নেতা।

তারপর থেকেই নতুন করে বিতর্কের শুরু হয় বলে জানা যায়। এদিকে সোনারগাঁ উপজেলার আহবায়ক কমিটি (শামছুল ইসলাম – ইঞ্জি: মাসুম) বৈধ কিনা এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু ভুইয়া বলেন, জেলার সভাপতি হাই সাহেব দেশের বাইরে থাকায় জেলা কমিটির পাশ কাটিয়ে শামছুল ইসলাম ও ইঞ্জি: মাসুমকে নিয়ে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিলো। তারপর সিনিয়র সহ-সভাপতি আইভী সহ জেলার ৩৮ জন শীর্ষ নেতা ওবায়দুল কাদেরের কাছে অভিযোগ দেয়। তারপর কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

মির্জা আজম সাহেব আমাকে বলছে কমিটির বিষয়ে আমি দু পক্ষকে নিয়ে বসছিলাম। দু পক্ষকে নিয়ে নতুন কমিটি করা হবে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। এখন জেলা আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতা এ কমিটির নেতাদের সাথে কেন মিটিংয়ে বসলো তা আমরা জানি না। আর কেনই বা এ ধরনের বক্তব্য দিলো তাও আমার বোধগম্য নয়। এ ধরনের বক্তব্য তার একান্ত নিজস্ব মতামত হতে পারে।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এড. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের জেলা কমিটির মিটিং বেশ কিছুদিন যাবত হচ্ছে না। যে কারণে আমরা এ কমিটি সম্পর্কে অবগত না। যদি কেউ বলে থাকে এ কমিটি বৈধ তাহলে এটা তার নিজস্ব বক্তব্য, কিন্তু জেলা কমিটির কোনো মিটিং হয় নাই এবং কোনো আলোচনাও হয় নাই । আরেক সহ-সভাপতি আদিনাথ বসু বলেন, এ আহবায়ক কমিটি (শামছুল ইসলাম – ইঞ্জি: মাসুম) বৈধতার কোনো সত্যতা নেই। কেননা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, আগের কমিটিই বৈধ। তার কথার প্রেক্ষিতেই এ কমিটি আর বৈধ থাকে না। আগের কমিটিই (এড. শামছুল ইসলাম – মাহফুজুর রহমান কালাম) বৈধ এবং সে সমস্ত নেতৃবৃন্দের সামনেই একথাটি বলছে। এ সময়ে কেউ এ কমিটিকে বৈধ বললে তা তার একান্ত নিজস্ব মতামত। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে আমরা ৩৮ জন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি দিয়ে আসছিলাম। তখন উনি বলছে, এ আহবায়ক কমিটি হবে না। জেলার প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারীকে ডেকে নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেব একথা বলছেন।

তাছাড়া জেলা কমিটির মধ্যে মেজরিটিই আমরা, তারপরও উনারা (হাই-বাদল-বাচ্চু) কিভাবে চ্যালেঞ্জ করে তা আমি জানিনা। আর কমিটির বৈধতার বক্তব্য দেয়া কতটুকু যুক্তিসংগত তা বিবেচনা করা উচিত। এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমরা মির্জা আজম সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম, উনি সেখানে বলছে এডহক কমিটি যেটা হয়েছে সেটাই থাকবে।

তবে পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে। পরিবর্তনটাই পরিবর্ধন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে আট সদস্যের কমিটি, উনি হয়তো বাড়িয়ে ১৭, ১৯, ২৯ , ৩১ বা আরো বেশী সদস্য বিশিষ্ট করতে পারে। কমিটিকে কিভাবে বৈধ বললেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলিনি এ কমিটি বৈধ। আমি বলেছি ভালো কর্মীর উপর তথা ভালো সংগঠকের উপর দায়িত্বটা পড়ছে, এজন্যই করোনার সময়ে সবচেয়ে বেশী ত্রাণ বিতরণ হইছে সোনারগায়ে। আজ যে মিটিং ডাকছে, সেখানেও লোকের যে উপস্থিতি তা প্রমাণ করে যে এ কমিটির লোকেরা সংগঠনের ভালো করবে। বৈধ-অবৈধ সেটাতো বুঝবে সেন্ট্রাল।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ