আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফায়ার সার্ভিসের কাউন্সিল প্রয়োজন

Fire Safety and Security Issues in Bangladesh : Challenges and Way Forward’ ‘ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচকরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে ফায়ার কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-২০২০-এর সমাপনী দিবসে  শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০) শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি)-এর মিডিয়া বাজার হলে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, সারা দেশে অগ্নি নিরাপত্তা জোরদারকরণ, নিয়মিত বিরতিতে তা পর্যবেক্ষণ, দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ, এ ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ প্রণয়ন এবং জাতীয় পর্যায়ে অগ্নি নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা দূর করার লক্ষ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ প্রণয়নে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সহযোগিতার জন্য ‘জাতীয় ফায়ার কাউন্সিল’ গঠন করা প্রয়োজন। গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন।

আলোচনার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন। তিনি তাঁর মূল প্রবন্ধে অগ্নি ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান, অগ্নি দুর্ঘটনা, ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধারের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান, দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও সংখা বৃদ্ধির কারণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয়, আইন ও কোডসমূহ মেনে চলার গুরুত্ব, চ্যালেঞ্জ এবং তার প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় আমার অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেই, ফায়ার সার্ভিসে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের এমনভাবে সেবা দিতে হবে, যেন তারা বোঝেন যে তারা তাদের বাড়িতে বসে সেবা পাচ্ছেন।’ তিনি সকলের উদ্দেশে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের জরুরি সেবা গ্রহণের জন্য দিন-রাতের যে কোনো সময়ে ফায়ার সার্ভিসে একটি কল করাই যথেষ্ট।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচকগণ যেসব বিষয়ের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন সেগুলো হলো বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বিএনবিসি আপডেট করে তা এনফোর্স করা, ফায়ার সার্ভিসের জনবল আরো বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটিকে ক্ষমতায়ন করা, ফায়ার কোড করা, বহুতল ভবনের সংজ্ঞার বিভ্রান্তি নিরসন করে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইনের সংজ্ঞা অনুসারে সংজ্ঞায়িত করা, পুরান ঢাকার ক্যামিক্যাল পল্লী স্থানান্তর কাজ গতিশীল করা, অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা, ভবন নির্মাণের সময় গৃহীত ফায়ার সেফটি প্লানের শর্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে নজরদারি করা, ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদানের আগে অগ্নি নিরাপত্তা শর্ত মানা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মতামত গ্রহণ করা, শহরজুড়ে হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা স্থাপন করা, ভবনে স্থাপিত নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা এবং প্রয়োজনে এজন্য আউট সোর্সিং করা, স্থাপত্য বিভাগ থেকে ভবনের ডিজাইন করার সময় অগ্নি নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা ও জায়গা সংরক্ষণ করা, ভবনের নকশা অনুমোদনের মতো বৈদ্যুতিক নকশা অনুমোদনের আইনগত বাধ্যবাধকতা প্রণয়ন, দক্ষ জনবল দ্বারা স্থাপিত সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা, কোড করার ক্ষেত্রে বৈদেশিক কোডের রেফারেন্স না দিয়ে বাস্তবতার আলোকে এবং আমাদের দেশের কথা বিবেচনায় রেখে পরিপূর্ণ এনেক্সারসহ কোড প্রণয়ন করা, গোলটেবিল আলোচনার বিষয়গুলো নথিবদ্ধভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বাস্তবায়নের জন্য প্রেরণ করা, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা মাথায় রেখে নিরাপত্তা শর্ত প্রস্তুত করা ইত্যাদি।

আলোচনা শেষে সকল আলোচকদের বক্তব্যের সার অংশ তুরে ধরেন অনুষ্ঠানের মডারেটর। অনুষ্ঠানের সভাপতি তাঁর সমাপনী বক্তব্যে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ফায়ার সার্ভিসকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সকলকে সবসময় অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন থাকার এবং যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান। সরকারের পাশপাশি এ ক্ষেত্রে সকলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গোলটেবিল আলোচনায় মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ঊঝঝঅই)(ইসাব)-এর চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার হোসেন খান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক দুই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আবু নাঈম মোঃ শাহিদউল্লাহ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আলী আহাম্মেদ খান, পরিচালক লে. কর্নেল এসএম জুলফিকার রহমান ও লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ গ্রিন বিলডিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী আল ইমরান হোসেন, সিভিল এভিয়েশনের আবু সালেহ মোঃ খালেক, এক্সপ্লোসিভ ডিপার্টমেন্ট থেকে ড. মোঃ আব্দুল হান্নান, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ (আইএবি)-এর স্থপতি নবী নেয়াজ খান, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি)-এর প্রকৌশলী এসকে তাজুল ইসলাম, ডেসকোর প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের প্রফেসর মোঃ জিয়াউর রহমান খান, পিডব্লিউডির প্রকৌশলী আশরাফুল হক ও প্রকৌশলী শেখর বিশ্বাস, বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং বোর্ডের প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক ও চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মোঃ আক্কাস আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের খন্দকার অরিব, ফায়ার কনসালটেন্ট প্রকৌশলী হাসমতুজ্জামান, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এমএসটিআইর কর্ণেল হুমায়ূন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমই) এর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ হাতেম, ডিবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রণব সাহা এবং আয়োজন ইসাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ শাহজাহান, মাহমুদুর রশিদ ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ মাহমুদ, সহসভাপতি প্রকৌশলী মোঃ মনজুর আলম, ফায়ার সেফটি এক্সপোর কনভেনার প্রকৌশলী জাকির আহমেদ, সিনিয়র সহসভাপতি জহির উদ্দিন মোঃ বাবর প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ