আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফেসবুকে ভুয়া আইডির প্রেমের ফাঁদে ফতুল্লায় প্রাণ গেল মাদ্রাসা ছাত্র

ফেসবুকে ভুয়া আইডির প্রেমের ফাঁদে ফতুল্লায় প্রাণ গেল মাদ্রাসা ছাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক নারায়ণগঞ্জ : ফেসবুকে ভুয়া একটি আইডির ছবিটি ও প্রোফাইলে লেখা একজন মেয়ের নাম। আর সেই আইডিতেই মগ্ন হয় আবু নাঈম (১৭) নামের মাদ্রাসা ছাত্র। দীর্ঘদিন সেই ভুয়া আইডির ব্যক্তিদের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং করে এক পর্যায়ে ছুটে যান দেখা করতে। তখন বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। মূলত ওই আইডি চালাতো একদল দুর্বৃত্ত। তারা আবু নাঈমকে আটক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সময়ে ধস্তাধস্তিতে প্রাণ যায় তার।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় প্রাণ হারানো মাদ্রাসা ছাত্র আবু নাঈম। ওই ঘটনায় সুমন নামের এক যুবক গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।

গ্রেফতারকৃত সুমন ওরফে রাফা (১৮) ঝালকাঠির নলছিটির কুশংগাল এলাকার মনির হোসেনের ছেলে। সে ফতুল্লার নন্দলালপুর উত্তর মহল্লার শাহ আলমের বাড়ীর ভাড়াটিয়া।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে জুডিয়িশাল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের আদালতে সুমন হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিজের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফতুল্লা মডেল থানায় গণমাধ্যম কর্মীদের ওসি কামালউদ্দিন আদালতের জবানবন্দীর বরাত দিয়ে জানান, সুমন, ফতুল্লার পিলকুনী গ্রামের জনি (১৮), হৃদয় (১৮) সহ অজ্ঞাত আরো ২০ থেকে ২২ জন সহযোগী বেশ কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়ের নামে ভুয়া আইডি খুলে লোকজনদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং পরবর্তীতে মেয়ের সাথে দেখা করার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়। এ ছাড়াও তাদের জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও দাবি করে তারা।

এরই প্রেক্ষিতে জনৈক জনি ‘ঝরহঃরুধ ঔধযধহ ঞড়ৎধ (ঘঞ)’ নামে ফেইসবুকে একটি ভুয়া আইডি খুলে। উক্ত আইডিতে নাঈমকে ফেসবুকে যুক্ত করে যোগাযোগ শুরু করে। জনি উক্ত ভুয়া আইডির মাধ্যমে ভিকটিমের সাথে দীর্ঘদিন চ্যাটিং (যোগাযোগ) করে আসিতেছিল।

গত ১৬ নভেম্বর জনি, তুরাব ও হৃদয় নামে তিনজন সহযোগী আসামী সুমনের কাছে আবু নাঈমকে ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে মোবাইল ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। আসামী সুমন প্রস্তাবে রাজী হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯ নভেম্বর বিকেলে জনি, আবু নাঈমকে নন্দলালপুরস্থ কাকলী ডাইংয়ের পাশে ডেকে আনার জন্য তার সহযোগী হৃদয়কে পাঠায়। তখন মো. সুমনসহ তার ২০ থেকে ২২ জন সহযোগী নন্দলালপুরস্থ কাকলী ডাইংয়ের গলির ভিতর অবস্থান করতে থাকে।

সন্ধ্যায় নাঈম গলিতে আসামাত্র আসামী ও তার সহযোগীরা নাঈমকে ধরে এবং এলোপাথারিভাবে কিলঘুষি ও লাথি মারে। এক পর্যায়ে নাঈম মাটিতে পড়ে গেলে তাদের সহযোগী সিফাত তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে নাঈমের বুক এবং পিঠে উপুর্যপরি আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। পরে তার মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যায় আসামীরা।

এর আগে ১৯ নভেম্বর রাত ৮টায় ফতুল্লার পাগলা নন্দলালপুর এলাকায় আবু নাঈমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আবু নাঈম মুন্সিগঞ্জের চরডুমিয়ার ব্যবসায়ী মনসুর আহম্মেদের ছেলে। তারা ফতুল্লার পিলকুনি জোড়া মসজিদ এলাকায় নানার বাড়ির সম্পদ পেয়ে বাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।

ওসি আরো জানান, ঘটনার পর অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা হয়েছিল। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত বাকিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ