আজ শুক্রবার, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফটোসেশনে সীমাবদ্ধ বিএনপির রাজনীতি !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
পরিকল্পিতভাবে ফটোসেশনের রাজনীতি করছে বিএনপি। কর্মসূচী পালনকালে ফটোসেশন কমপ্লিট করেই যে যার অবস্থান থেকে সরে যায়। যাতে করে সিনিয়র নেতারা পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে দেখতে পারেন যে তারা আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

বিগত দিনগুলোতে আন্দোলনের নামে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী শুধু ফটোসেশন করে গিয়েছেন। আর নেতাদের দেখিয়েছেন যে তারা আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বিষন্ন মনে দৈনিক সংবাদচর্চাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি রাজিব।

রাজিব বলেন, এখন তো আর হরতাল নেই। আমরা এমনও দিন গেছে ৪৮ঘন্টা হরতাল দিয়েছি। কিন্তু তখন আমাদের নেতাদের ফুটেজ ছিলো ৫মিনিটের। অর্থ্যাৎ পুলিশ প্রশাসনকে কোনরকম ম্যানেজ করে রাজপথের যেকোন একটি জায়গায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে সাংবাদিকদের মাধ্যেমে ৫মিনিটের ফুটেজ কিংবা ফটোসেশন করে যে যার অবস্থান থেকে চলে যায়। কিন্তু সাংবাদিকরা পত্র-পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেলের সাধারণ মানুষদের সামনে উপস্থাপন করেন যে বিএনপির যেকোন স্তরের নেতারা কর্মসূচীর দিন ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন। এই দৃশ্য আবার দেখে দলের হাইকমান্ড। তাহলে কি দাড়ালো? সিনিয়র নেতার খুশী, জনগণ ও দেখলো। তার মানে তারা রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা সবসময়ই পালন করে থাকেন।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে তিনি আরও বলেন, এই ফটোসেশনের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে তার সাথে বন্ধ করতে হবে ফেইসবুকের রাজনীতি। ফেসবুক আসলে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম। কিন্তু রাজনীতিকে আপনি কখনোই ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেননা। প্রত্যেকটা নেতাকে যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব তার নিজের। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে আমি কি আসলেই আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা কর্মসূচীতে সক্রিয় ছিলাম কিনা। দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দেশে যে অনিয়ম চলছে তার বিরুদ্ধে আমার দলযে কর্মসূচী দিলো আমি কি তা পালন করছি। সেটা নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। দেশের মানুষের অধিকারের জন্য আমার যে প্রতিবাদ তাতে আমি কতটুকু সক্রিয় বা কতটুক সফলতা অর্জন করলাম। সেই জিনিসটার উপরেই যেকোন দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

বিএনপির বর্তমান প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে রাজিব বলেন, আমি কি দেশের মানুষের স্বার্থে কিছু করতে পারলাম কিংবা আমার দলের দেয়া নির্দেশ মানতে পারলাম? হ্যা পারলাম কিন্তু তা সবই লোক দেখানো। কারণ আমি রাজপথে ঠিকই ছিলাম কিন্তু দল কর্মসূচি দিয়েছিলো ৪৮ঘন্টা আর আমি ছিলাম ৫মিনিট, যথেষ্ট। কেন যথেষ্ট? কারণ ওই ৫মিনিট রাজপথে থাকর কারণে দেশের মিডিয়ার মাধ্যমে সব জায়গায়ই প্রচার হয়ে যাচ্ছে যে আমি দেশের মানুষের স্বার্থ হাসিলের জন্য বা দলের কর্মসূচী পালন করছি। যেকোন কারনেই আমি আমার দলের মধ্যে অনেকটাই আলোচিত-সমালোচিত। আপনি আপনার নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য কাজ করবেন। হ্যা এজন্যই রাজনীতি। আপনি রাজপথে থাকলেন কিন্তু তা যদি হয় লোক দেখানো তাহলে কেমন রাজনীতি করেন আপনি?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ বলেন, যে এই কথাটি বলেছেন তিনি তো আমার দলেরই একজন নেতা। তার কথার উপরে তো আমি বক্তব্যে দিতে পারি না। হয়তোবা সে কাউকে দেখেছে যে কেউ রাজপথে ফটোসেশনের রাজনীতি করে তাই তিনি এই কথা বলেছেন। তাই এ বিষয়ে আমার আর কিছুই বলার নেই।
মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালামের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, হ্যা এটা ঠিক যে অনেক নেতাকর্মীই রাজপথে ফটোসেশনের জন্য আসে তবে এ কথাটা সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ দলের স্বার্থে সবসময়ই আমরা রাজপথে ছিলাম। এবং সবসময়ই দলের জন্য নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছি। আর সে বিষয়টি সবাই দেখেছি। দলের স্বার্থে আমরা কি করিনি। রাজপথে থেকে হামলা মামলা খেয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই ফটোসেশনের রাজনীতি করে থাকে। আবার অনেক নেতাকর্মীই লোক দেখানো রাজনীতি করে থাকেন। কিন্তু আমরা সবসময়ই আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।

মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ভাই আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।
মহানগর যুবদলের সভাপতি ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুর আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, আমার প্রশ্ন বিএনপি কি আছে নাকি? যে বলেছে না’গঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে ফটোসেশনের রাজনীতি করে তিনি অনেক সিনিয়র। মুরব্বীদের নিয়ে কোনও মন্তব্যে করতে চাইনা আমি। কারণ আমি যুবদলের কর্মী। আর যুবদল কখনোই রাজপথে ফটোসেশন করতে আসেনা। যুবদল সবসময়ই রাজপথে ছিলো। এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ