আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রতিহিংসার শিকার পারভীন ওসমান

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে যে পরিবারটির উত্থান দুই পুরুষ বাদে নিজেদের কর্মকান্ডের কারণেই তাদের সম্মান আজ ভূলুণ্ঠিত। বলা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ নিজের ক্ষতি নিজেই না করে ততক্ষন পর্যন্ত কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার উত্থান ও পতন তারই দৃষ্টান্ত।

ওসমান পরিবারের গোড়াপত্তন হয়েছিল যার মাধ্যমে সেই ওসমান আলী গত শতাব্দীর ৪০ এর দশকে নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখার জন্য সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। লাহোর ভিত্তিতে পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হলে তিনি নারায়ণগঞ্জে বামপন্থী ও অন্যান্য স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

নেতা অনেকেই হয় এবং হ’বে কিন্তু এমন অকাতরে সকলকে ভালবাসা দিতে ও সকলের ভালবাসা দিতে পারে এমন নেতার সংখ্যা বিরল। ওসমান পরিবারের নাসিম ওসমান ছিলেন সত্যিকারের রাজনীতিবিদ। ৩৫ বছর তিনি এ রাজনীতির রন্দে রন্দে প্রবেশ করে জয় করেছেন অজস্র নেতাকর্মী, জনগণের ভালোবাসাকে। তিনি একদিকে ছিলেন ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন অনেক দিকে ছিলেন শিশুসুলভ আচরণ। যেমন শাসন ছিল তেমনি ছিল আদর আর ভালোবাসা। তিনি ছিলেন একজন উদার মনের মানুষ। সহজেই মানুষকে তার কৃতিত্ব দিতে কুন্ঠিত হতেন না। তিনি যেমন ছিলেন সংগ্রামী তেমন ছিলেন গরীব, দুঃখী, কৃষক, শ্রমিকের বন্ধু। জন সমাজের আশা আকাঙ্খা ও বেদনা নৈরাশ্যের যথাযোগ্য প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছেন বলেই নারায়ণগঞ্জবাসী তাঁকে বার বার নির্বাচিত করেছে। কিন্তু বর্তমান ওসমানর পরিবারের খুবই বেহাল দশা। মরহুম নাসিম ওসমান তাঁর পিতার বিয়োগের পর যেভাবে এই পরিবারটিকে ধারন করেছিলেন আজ সেই অবদান শয়ং ওসমান পরিবারের সদস্যরাই অস্বিকার করছে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের প্রবীন রাজনীতিবিদরা।

গত ২ই মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ ২নং রেল গেইট এলাকায় অনুষ্ঠিত মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দীর্ঘ বক্তব্যে মরহুম নাসিম ওসমানের আলোচনা যে কোন সময়ের তুলনায় খুবই কম করেছেন। শামীম ওসমানের ঐ দিনের বক্তব্য বিশ্লেষন করে জানা গেছে, তিনি শামীম ওসমান মরহুম নাসিম ওসমানের অবদানগুলোকে অবহেলা কিংবা অবজ্ঞা করেছেন বলেই মনে করছেন নগরীর জন সাধারণরা। নারায়ণগঞ্জবাসী ও জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মতে এর পূর্বে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান তাঁদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মরহুম নাসিম ওসমানকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেছেন। নারায়ণগঞ্জবাসী ও ওসমান পরিবারের প্রতি তিনি যে সকল অবদান রেখে গিয়েছেন সেই আলোচনাই সর্বদা তাঁরা করে এসেছেন কিন্তু সেই দিনের সমাবেশে শামীম ওসমান ও তার নেতৃবৃন্দরা মরহুম নাসিম ওসমানকে ইচ্ছেকৃত ভাবে অন্ধাকারে রেখেছেন বলেই তাঁরা মনে করেন। অপর দিকে বর্তমান ওসমান পরিবারের ২ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের মধ্যে নারী বিদ্বেশী আচরণ চোখে পরার মতো। মরহুম নাসীম ওসমানের বিয়োগের পর তার সহধর্মীনি পারভীন ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করলেই উপরোক্ত ওসমান পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নারী বিদ্বেশী মনোভাব প্রকাশ্যে চলে আসে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান একটি সভায় মরহুম নাসিম ওসমানের সহধর্মীনি পারভীন ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, বাড়ী উনার নোয়াখালী, তিনি এমপি হতে চান নারায়ণগঞ্জের। সেলিম ওসমানের উক্ত বিতর্কীত মন্তব্যের পরও ওসমান পরিবারের আরেক সদস্য সংসদ শামীম ওসমান কিছুটা নিরব ভূমিকায় ছিলেন।

ওসমান পরিবারের অন্য আরেক সদস্য সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সহধর্মীনি লিপি ওসমান ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ করছেন। লিপি ওসমানের এই রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ করার পিছনে মূল কারিগর হলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেছিলেন লিপি ওসমান। অপর দিকে নারায়ণগঞ্জ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন লিপি ওসমান।

নগরবাসীর মতে যেখানে লিপি ওসমান যে কোন বাধা বিপিত্ত ও বিরোধীতা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির অংশ হয়ে যাচ্ছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের একটি সংস্থা তথা নারায়ণগঞ্জ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সেখানে প্রয়াত জননেতা নাসিম ওসমানের সহধর্মীনি পারভীন ওসমান নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির হাল ধরতে চাইলে সেলিম ওসমান সহ ওসমান পরিবারের অপরাপর সদস্যরা কেন বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে তা কারো বোধগম্য নয়।

অপর দিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মরহুম জননেত প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের সহধর্মীনি পারভীন ওসমান প্রতিহিংসর শিকার। ক্ষমতাসীনরা চাননা পারভিন ওসমান নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির হাল ধরুক। বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির টিকিটে নির্বাচিত হলেও তাঁর শাসন আমলেই জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দরা অবহেলিত। তাঁরা মনে করেন, মরহুম নাসিম ওসমান যেমন করে আগলে রেখেছিলেন নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টিকে ঠিক তেমনি ভাবে তার সহধর্মীনি পারভিন ওসমানও নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টিকে আগলে রাখবেন।

উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রয়াত সংসদ সদস্য মরহুম নাসিম ওসমানের সহধর্মীনি পারভীন ওসমানের সাথে মুঠোফনো যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, অনেক কিছু হচ্ছে আমি কিছু বলি নাই আর বলতেও চাই না। আমার কথা আমি না বল্লেই ভালো হয় কারন আমার কথা বলেছে নারায়ণগঞ্জবাসী এবং বন্দরবাসী। আমি আমার মত আছি কিন্তু নারায়ণগঞ্জের সকলেই সবজানেন। আর আমাকে নির্বাচন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন কিন্তু একটি শক্তি আপনার বিরোধীতা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারীরা সারা বিশ্বে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধী দলের নেত্রীও নারী এবং আমিও একজন নারী কিন্তু এ সকল ঘটনায় আমি চুপ ছিলাম, চুপ করেই থাকতে চাই তবে জবাব দিবে জনগন।

আবহমান কাল থেকে নারীরা নির্যাতিত, নিপিড়িত, লাঞ্চিত এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার পক্ষে কথা বলার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মহিলা আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বুঝে ছিলেন নারী সমাজকে পিছনে রেখে জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি কিছুতেই সম্ভব নয়। নারী জাতিকে সচেতন করার মাধ্যমে অগ্রগতির মূল স্রোতধারার সাথে একীভুত করতে না পারলে নারী জাতির মুক্তি কখনোই সম্ভব নয়। তাই নারী সমাজকে আজ রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ রাজনৈতিক সচেতনতাই অর্থনৈতিক মুক্তির পূর্বশর্ত।

“সংসারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তার পদে পদে কাঁটা। সেই কল্লকাকীর্ণ পথেই হাসি মুখে আনন্দিত হয়ে চলতে হবে, এই তো মানুষের পরীক্ষা, বেদনাকে বোধনায় পরিণত করতে হবে। জীবনে দুঃখ পাবার একটা গভীর প্রয়োজনীয়তা আছে, সেই দুঃসহ তাপের মধ্যেই পরিচয় ঘটে অন্তরতম নিত্য আমি’র সঙ্গে।” “তাছাড়া যে ছোট ছোট সুখ-দুঃখগুলি প্রকান্ড মূর্তি ধরে বুকের উপর লাফালাফি গুরু করে দেয়, বিশ্ব সংসারের বিরাট পটভূমির উপর একবার তাদের ফেলে দেখা এক মুহূর্তে ছায়াবাজীর মত সব মিলিয়ে যাবে।” যাদের সঙ্গে স্নেহের যোগ আছে, মানুষ তাদের কাছে সেই আত্মবিজয়ী সাধনা প্রত্যাশা করে। রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের মতে পারভীন ওসমানকে হেরে গেলে চলবে না। সকল বাধা বিপিত্ত অপেক্ষা করে নারায়গঞ্জবাসীর সেবায় তাকে নিয়োজিত হতে হবে। যে কোন ভাল কাজ করতে হলে প্রথমে বাধা আসবে। অতএব সেই বাধাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

রবীন্দ্রনাথও তাঁর জীবন দর্শনের এক চমৎকার উপমা দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন-
“ভোর বেলায় আমার আকাশের মিতা যখন আমার আলোর ধারায় স্নান করিয়ে দেয়, তখন আমি চেষ্টা করি আমার নিজের থেকে দূরে যেতে। আমাদের মধ্যে দু’টো আমি আছে- দু’টো মানুষ, একজন লোভে ক্ষোভে, শোকে, দুঃখে, আনন্দে বিষাদে সর্বদাই দোদুল্যমান। আর একজন সে বড় ‘আমি’। সে এ সমস্তের অতীত, সে স্থির, আপনাতে আপনি সম্পূর্ণ অথচ ঢাকা পড়ে থাকে বড় সত্তাটাই। এরই বিষয়ে আমি বলেছি- মানুষের দু’টো রূপ। একটা তার বিশেষ রূপ, আর একটা তার বিশ্বরূপ। সেই বিশ্বরূপেই সে অসীমের সঙ্গে এক। আমি যাত্রা করে বেরিয়েছি সেই ছোট আমিটার থেকে দূরে যেতে, তা নাহলে এই ক্ষণিকের সুখ-দুঃখে আবিল তুচ্ছতায় ঢাকা পড়ে যেতে চায় আমার মধ্যে অতীত সেই অমর অজেয় আত্মা। সে বড় ভয়ানক ক্ষতি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ