আজ সোমবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশের সামনে ডিম ব্যবসায়ীকে পেটালো ছাত্রলীগ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
ডিম ব্যবসায়ীসহ ছেলে ও স্ত্রীকে ৩ দফায় পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। গত ৪ জুন রাতে শহরের ২ নং রেলগেইট এলাকায় ডিম দিতে দেরি হওয়ায় ডিম বিক্রেতাকে ছাত্রলীগ নামধারীরা তিন দফায় মারধর করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন ডিম বিক্রেতার স্ত্রী নারর্গিস হক।

ডিম বিক্রেতার ছেলে আহত পরশ জানায়, একজন ক্রেতা এসে ডিম চায় ডিম দিতে কিছুক্ষন সময় দেড়ি হওয়ায় মারধর করে। এসময় তার সাথে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। কিছুক্ষন পর একদল ছাত্রলীগ কর্মী এসে লোহার রট দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। আহত অবস্থায় মাটিতে পরে থাকলে বাবা-মা খবর পেয়ে আসলে পুনরায় আবার পিটিয়ে জখম করে। এসময় ডিম ব্যবসায়ী (বাবকে) মারধর করে ও মাথায় আঘাত করে এবং মায়ের হাতে লোহার বস্তু দিয়ে আঘাত করে জখম করে ও মাকে শ্লীলতাহানি করে। কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে চেষ্টা করেছিল বাচাঁতে তখন হামলাকারীরা বলে উঠে আমরা ছাত্রলীগ আমাদের চিনে না এই শহরে কেউ আছে। পুলিশ ডিম ব্যবসায়ী (বাবকে) বাচাঁতে গেলে এমন কি পুলিশ সদস্যদেরও ধাক্কা প্রদান করে।

তিনি বলেন, দোকানে থাকা ডিমের খাচি ফেলে দেয় ও ডিম বিক্রির টাকা লুট করে। ঘটনার পর হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতে পেরেছে তারা হলো অয়ন ওসমানের পরিচয়ধারী ছাত্রলীগের ফরহাদ ও ছাত্রলীগের নামধারী জিতু, অন্তর ও শুভ। ফরহাকে প্রথমে চিনতে না পারায় মামলায় তাকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে আমাদের আরো একজন স্বজনসহ আমাদেরকে রিক্সায় আরো দফা পিটিয়ে আহত করে। নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায় কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় আমার মা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন এতে ৩ জনের নাম উল্লেখ্যসহ ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চায়ের দোকানদার বাছেদ জানায়, ডিম নিয়ে প্রথমে ঝগড়া করে চলে যায়। এর পর আবার এসে ডিম ফেলে দিয়ে বাবা-ছেলেকে মারধর করে এরপর আবার ১ ঘন্টা পর আরেক দল এসে মারধর করে এসময় পুলিশ তাদের ধরলে তারা ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে পুলিশের সামনেই মারধর করে। এবং পুলিশকেও ধাক্কা দেয়।
ফল ব্যবসায়ী জানায়,অনেক জন লোক এসে ডিমের ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে মারধর করতে থাকে ভয়ে ফলের দোকান বন্ধ করে লুকিয়ে যাই। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডিম ব্যবসায়ীর স্ত্রীর মামলা করেছে বলে শুনেছি।

মামলায় উল্লেখ্য করা হয়, গত ৪ জুন রাতে ২নং রেল গেইট পুলিশ বক্সের পেছনে বে-আইনী জনতা হত্যার উদ্দেশে মারপিট করে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে এবং শ্লীলতাহানি ,চুরি ও ভয়ভীতি প্রর্দশন করার অপরাধে মামলাটি রুজু করা হয়। মামলায় ৩ জনের নাম উল্লেখ্য করা হয় নয়াপাড়া বৌ বাজার এলকার মজিবর মিয়ার ভাড়াটিয়া কবির হোসেনের ছেলে জিতু (২২) ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার অন্তর (২৪) আমহাট্টা-জল্লার পার এলাকার শুভ ও অজ্ঞাত নামা আরো ২০-২৫ জনকে আমলার আসামী করে মামলা করেন নয়াপাড়া এলাকার আহত ডিম ব্যবসায়ীর স্ত্রী নারর্গিস হক।

সদর মডেল থানায় তিনি অভিযোগ করেন, ডিমের দোকানে ভিড় ছিল ১ নং আসামী জিতুকে ডিম দিকে দেরি হওয়ায় আমার ছেলের (পরশ) সাথে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে আসামী জিতু আমার ছেলের ডিমের খাচি ফেলে দিয়ে গালমন্দ করে উত্তেজিত হয়ে চলে যায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে আমি ( মামলার বাদি) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ করে ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসি এমত অবস্থায় আনুমানিক রাত ১ টার দিকে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সাজ্জিত হয়ে জিতু,অন্তর ও শুভসহ ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রলীগ পরিচয় নামধারীরা আমার ছেলে ও স্বামীকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে এসময় আসামী অন্তরের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ডিম বিক্রেতা স্বামীর মাথায় আঘাত করে জখম করে। ছেলে পরশ তাকে বাচাঁতে এলে আসামী জিতুর হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। আমার ছেলে ও স্বামী রাস্তার উপর পরে গেলে জিতু ও অন্তরসহ অজ্ঞতনামা আসামীরা লোহার রড, কাঠের ডাসা, লাঠি দিয়ে আঘাত করে। মারপিট বন্ধ করতে গেলে আসামী জিতু ও অন্তর আমাতে মারধুর করে শ্লীলতাহানির করে। এবং তারা ৩ জন মিলে দোকানে থাকা ৫০ হাজার টাকা বকেয়া তুলে আনা আরো ১ লক্ষ টাকা চুরি করে। এছাড়া দোকানে থাকা আরো ৫০ টাকার ডিম ভেঙ্গে ফেলে। স্থানীরা বাচাঁতে আসলে তাদের প্রান নাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি প্রধান করে।

মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ডিম বিক্রেতাকে নির্মম ভাবে হামলা করা হয়েছে তবে হামলাকারীরা কেউ ছাত্রলীগের নয়। মিছিলে-সমাবেশে আসলে আর ছবি দিয়ে ছাত্রলীগের পরিচয় দিলে কেউ ছাত্রলীগের কর্মী হতে পারে না। পুলিশের উচিৎ ছিল ঘটনার সময় ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের গ্রেফতার করা। হামলাকারী যারাই হোক তাদের বিচার হওয়া দরকার।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি জানায়,এখন অনেকে ছাত্রলীগের নাম বিক্রি করে। ছাত্রলীগ সাজতে চায়। যারা হামলা করেছে তাদের নাম শুনে মনে হচ্ছে আমি তাদের চিনি না। ছাত্রলীগে অয়ন ওসমানের পদ জানতে চাইলে তিনি জানায়,অয়ন ওসমাননের ছাত্রলীগে পদ আছে কি নেই তা জানা নেই তবে তিনি ছাত্রলীগ পরিবারের অন্যতম সদস্য।

সদর মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ কামরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আর ছাত্রলীগ হোক, যুবলীগ হোক অপরাধকারী যেই হোক আইনের আওতায় আনা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী সিদ্দিক জানান, ডিম বিক্রেতাকে পেটানোর ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের সামনে পেটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানায়, যারা অপরাধী তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ