আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশের ফাঁকা গুলি,টাকার অভাবে কিশোর অন্ধের পথে

এম. এ মোমেন:

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনের ঘটনায় পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে কিশোর শাহপরানের বাঁ চোখ আজ অন্ধের পথে। ৮০ হাজার টাকার অভাবে তার এ অবস্থা হতে চলছে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে বাঁ চোখের মণি থেকে গুলি বের করলে শাহপরান আবারও চোখে দেখবেন বলে চিকিৎসকরা আশা করছেন।

২০২১ সালের ৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে পুড়ে ৫৪ শ্রমিকের প্রাণহানি হয়। তখন লাশের অপেক্ষায় থাকা শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পুলিশের ছোঁড়া শর্টগানের গুলি শাহপরানের বাঁ চোখে লাগে। শাহ পরানের চোখ বাঁচাতে তখনই রাজধানীর একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু সে দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায়নি । চিকিৎসকরা বলছেন, শাহপরানের চোখের মণি এখনও ভালো আছে। প্রথম দফায় অস্ত্রোপচারে সম্পুর্ণ সফলতা আসেনি। তবে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে চোখের মণিতে থাকা গুলি বের করা হলে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের ব্যয় হবে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু শাহপরানের বাবা আবুল কালামের পক্ষে এ টাকা জোগান দেয়া সম্ভব নয়।
শাহপরানের বাবা আবুল কালাম চিকিৎসকদের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, শাহপরানের চোখে আবার অস্ত্রোপচার করতে ৮০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু প্রথম দফায় ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকা ঋণ করেছেন। সেই ঋণের টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেননি। তার উপর অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে তাদের থাকতে হয়। টাকার অভাবে আর অস্ত্রোপচার হয়নি। এর পর থেকে শাহপরান এক চোখে গুলি নিয়ে বেঁচে আছে।
আবুল কালামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বারে। ২০১৯ সালে শাহপরান তার পুরো পরিবারের সঙ্গে রূপগঞ্জে আসে। রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকার মোক্তার হোসেনের বাড়ি দেখাশোনার বিনিময়ে অর্ধেক ভাড়ায় বাসা নিয়ে তারা থাকেন। বর্তমানে শাহপরানের পিতা আবুল কালাম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়কের কাজ করেন। তাতে কোনোভাবে সংসার চলে তাদের।
শাহপরানদের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, পুলিশের গুলিতে শাহপরানের এক চোখ হারানোর পর তাঁরা বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলেন না। পুলিশি ঝামেলার শঙ্কায় এলাকার নেতৃস্থানীয় লোকজন অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে তাঁদের মানা করেছেন। তারা এ প্রতিবেদকের সঙ্গেও কথা বলতে চাননি। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর একপর্যায়ে তারা কথা বলেন।
শাহপরান স্থানীয় মুজিবুর রহমান ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ঘটনার সময় কারখানার সামনে দিয়ে সে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিল। এসময় আগুনে মিলের শ্রমিকরা পুড়ছিলেন। মিলের বাইরে আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের আর্তনাত আহাজারি । একপর্যায়ে শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তখন পুলিশের ছোঁড়া ছররা গুলি এসে লাগে তার বাঁ চোখে। তার বড় বোন সোহাগী আক্তার বলেন, বর্তমানে তার চোখের ব্যাথা বেড়েছে। ব্যাথ্যা হলেই ফার্মগেইট ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে তার চিকিৎসা করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু বলেন, গত বছরের ৯ জুলাই দুপুরে কারখানার আগুনের ঘটনায় একসঙ্গে সবগুলো লাশ বের করা হচ্ছিল। তখনই হাজার হাজার শ্রমিক, তাদের স্বজন, এলাকাবাসী এবং কিছু সুযোগসন্ধানী লোক কারখানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তাতে একদিকে যেমন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছিল, অপরদিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পক্ষেও উদ্ধার কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। কেউ কেউ কারখানায় লুটপাটও চালিয়েছে। আমরা তখন লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আর তাতেই লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তখন তারা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তখন শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ি। এতে কোনো কিশোরের চোখ অন্ধ হওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এমনটি হয়ে থাকলে তা অনাকাঙ্খিত। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা খোঁজ নেব।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না। আহত শাহপরানের চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। শাহপরানের সু-চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষ অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ