আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পারুল বিবির স্বপ্ন খুন

আনোয়ার হাসান:

সেই কবে স্বপ্নের চারা রোপণ করেছিলেন পারুল বিবি। নিজের সুখের চিন্তা বাদ দিয়ে ৩ সন্তান কে মানুষ করার দৃঢ় প্রত্যয় গড়েছিলেন এ সংগ্রামী নারী। বাড়ি বাড়ি আরবী পড়িয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। বড় দুই ছেলে মাকে সব সময় সান্তনা দিয়ে বলে, ‘মাগে কত কষ্ট করেছো তুমি। আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো। আমরা আয় করবো, আমাদের বাড়ি হবে, তুমি গাড়িতে চড়বে তখন।’ ছেলেদের এসব কথায় মনের গহীণে সুখের সুর বাজে পারুল বিবির। ভাবেন, আহ! অনেক দিন পর সুখ আসবে। হঠাৎ এক দুঃস্বপ্ন তাঁর সব সুখ চিন্তা কেঁড়ে নিয়েছে। তার দুই যুবক ছেলে সব ছেড়ে চলে গেছে পরপারে। যেখান থেকে আর কোন দিন ফিরে আসবেন না তাঁরা। মা’কে দেখাবেন না আর কোন স্বপ্ন।

শুক্রবার পশ্চিম তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দ্বগ্ধ হয়ে মারা গেছে সাব্বির ও জুবায়ের। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী নূর উদ্দিন ও পারুল বিবি দম্পতির এ দুই ছেলের মধ্যে একজন ডিগ্রী অপরজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সেদিন তারা সহ ছোট ভাই তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র ইয়াসিনও মসজিদে এশা’র নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ইয়াসিন।

পারুল বিবি জানান, আমার মন খারাপ দেখলেই ছেলেরা চিন্তিত হয়ে পড়তো। প্রশ্ন করতো, কী টেনশন করো মা। আমার মুখে ভাত তুলে দিতো ওরা। আর বলতো, আর দুইটা বছর মা। এরপর তোমার সব কষ্ট শেষ। শুক্রবারের পর থেকে এসব কথা বলে বিলাপ করছিলেন তিনি। স্বজনরা তাকে সান্তনা দিলেও কান্না থামেনি এ মা এর। কখনও চাপা কান্না কখনও হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘ তোরা কই গেলিরে বাবারা ? তোরানা কইছিলি আমার কষ্ট শেষ হবে, কই কষ্টতো আরও বাড়লো রে বাবা’।

ছোট্ট ভাই ইয়াসিন জানান, ভাইয়ারা আমাকে খুব আদর করতো। এখনতো ভাইয়ারা আর নেই। কে আমাকে আদর করবে। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছোট্ট ভাইটি কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে নূর উদ্দিন জানান, ওদের উপর খুব আশা ভরসা করেছিলাম। সব আশা শেষ হয়ে গেলো।

এলাকাবাসী জানান, পারুল বিবি খুব কষ্ট করে অনেকটা নিজের জানের উপর করাত চালিয়ে তিন ছেলের লেখাপড়ার খরচ জুগাতেন। বাবা নূর উদ্দিন তার সামান্য আয় থেকে যা পারতেন তা দিতেন। তারা আরও জানান, তার তিন ছেলেই খুব ভালো। সাব্বির ও জুবায়ের খুব বিনয়ী ছিলো। কখনও কারও সাথে মন্দ আচরণ করেনি। এমন ভালো ছেলেদের অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি এলাকাবাসী।

স্বপ্ন দেখা মানুষের অধিকার। পারুল বিবিরও সে অধিকার রয়েছে। ছেলেরা মায়ের কষ্ট অনুভব করে তাকে সুখ স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিল তিল করে ধারণ করা এক মায়ের সব আশা ভরসা থমকে গেছে ৪ সেপ্টেম্বর রাতে ওই মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায়। কিছু মানুষ দায়িত্বে অবহেলা করে এক মায়ের স্বপ্নকে খুন করেছে। যার ক্ষতিপূরণ কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন সচেতন মহল।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ