আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পদ আছে, সভায় নেই!

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাত সদস্যের বসবাস এই নারায়ণগঞ্জে। যাদের মধ্যে ৩জন সাবেক সংসদ সদস্য এবং ৪জন ওই পদে নির্বাচন করেছেন। তারা প্রত্যেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। তবে নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত দলীয় কর্মসূচিগুলোতে বিএনপির ওই প্রভাবশালী নেতার অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি। অবশ্য অতিথি তালিকাতে তাদের নামও দেখা যায়নি।

নির্বাহী কমিটির অনেকেরই অভিযোগ, তারা নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র নেতা হওয়া সত্বেও জেলার নেতারা তাদের কর্মসূচির বিষয়ে মৌখিক ভাবেও অবগত করেন না। তাই সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্র ঘোষিত যে কয়টি কর্মসূচি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে, সেখানে দেখা মেলেনি নির্বাহী কমিটির সদস্যদের।

জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মধ্যে নারায়ণগঞ্জে থাকা সাতজন হলেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করীম, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম, মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোহাম্মদ শাহ্ আলম এবং আজহারুল ইসলাম মান্নান। এর মধ্যে আজহারুল ইসলাম মান্নান সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি হিসেবে তাকে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত একটি কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল। এছাড়া অন্যান্যদের জেলা বা মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, দলীয় ওই সকল কর্মসূচিগুলোতে তাদের দাওয়াত দেন না জেলা ও মহানগর কমিটির বর্তমান নেতারা। এমনকি কর্মসূচি বা দলীয় বিষয়ে তারা নির্বাহী কমিটির নেতাদের সাথে পরামর্শও করেন না।

এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কর্মসূচির বিষয়ে সাবেক সাংসদ বা নির্বাহী কমিটিতে থাকা নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র নেতাদের সাথে কখনই যোগাযোগ করে না। আমরা কেন্দ্রে গিয়ে অংশ নেই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত কর্মসূচির বিষয়ে জেলার নেতারা আমাদের কিছুই জানান না। নিজ জেলায় আমাদের অতিথি হয়ে আসতে হবে বা ব্যানারে নাম থাকতে হবে এমন কিছুর প্রয়োজন নেই। অন্তত কর্মসূচির বিষয়ে অবগত করলেও হতো। কিন্তু বর্তমান আহবায়ক কমিটি আমাদের কাউকে ইনফর্ম বা ইনভাইট কোনটাই করে না। তাদের বিগত সময়ের কর্মকান্ডে প্রতীয়মান হয়েছে তারা গ্রুপিং করে। দলের এই সময়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন, সেই মানসিকতা আহবায়ক কমিটির মধ্যে নেই।’

এদিকে নির্বাহী কমিটির সাত সদস্যকে কর্মসূচির বিষয়ে অবগত না করার বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলোতে অতিথি নির্ধারণ করেন কেন্দ্রীয় নেতারাই। কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচির বিষয়ে যেই নির্দেশনা দেয়, সেই নির্দেশনার বাইরে পা ফেলার সুযোগ নেই। আমাদের কাজ শুধু কর্মসূচি সফল করা। কাউকে অতিথি করার সুযোগ আমাদের নেই।’

তবে কেন্দ্রের দেয়া অতিথি তালিকা ব্যতিত নির্বাহী কমিটির ওই সাত সদস্যকে মৌখিক ভাবে দাওয়াত দেয়া বা অবগত করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, ‘বিধিনিষেধের কোন বিষয় না। সিনিয়র নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা সংবিধান বা গঠনতন্ত্রে নেই, তবে শিষ্ঠাচার রক্ষায় তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করা উচিৎ। জেলা কমিটির যদি কোন কর্মসূচি থাকে, সেখানে আমরা নির্বাহী কমিটি বা সিনিয়র নেতাদের দাওয়াত দেব, তাদের অংশ নেয়ার জন্য আহবান জানাবো। এগুলো আমার দায়িত্ব এবং দলীয় শিষ্ঠাচারের মধ্যে পড়ে। তারা অংশ নিলে আমরা আরো শক্তি পেতাম।’

এদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত নির্বাহী কমিটির সাত সদস্যের মধ্যে পাঁচ জনের সাথেই বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির দূরত্ব দৃশ্যমান। কেবল সোনারগাঁয়ের আজহারুল ইসলাম মান্নান ও রূপগঞ্জের কাজী মনিরের সাথে জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের সু-সম্পর্ক রয়েছে। সেই সু-সম্পর্কের বদান্যতায় সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জে মান্নান এবং কাজী মনিরের পছন্দ মত কমিটি হয়েছে। এছাড়া, বাকি পাঁচজনের সাথে আহবায়ক কমিটির নেতাদের দূরত্ব প্রকাশ পেয়েছে কমিটি গঠন নিয়ে।

এদিকে উভয় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও শোনা যায় বিএনপি অঙ্গণে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির নেতারা বলছেন, নারায়ণঞ্জের সিনিয়র নেতারা বর্তমানে কর্তৃত্ব না পেয়ে আড়ালে চলে গেছেন। নির্বাহী কমিটির অনেকেই আড়ালে থেকেও বলয় তৈরী করতে গিয়ে দলে গ্রুপিং করছেন বলে জেলা বিএনপির একটি পক্ষের অভিযোগ শোনা যায়।

অন্যদিকে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, বর্তমান আহবায়ক কমিটিতে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরই একটি অংশ গ্রুপিংয়ে জড়িয়েছেন। কমিটির নির্দিষ্ট একটি বলয় তাদের ব্যক্তি ইচ্ছের প্রাধান্য দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন করছেন। একারণেই নিজ জেলার স্থানীয় নেতাদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে রাজপথে নামা হচ্ছে না সিনিয়র নেতাদের। তাই দলীয় কর্মসূচিগুলোতে তাদের দেখা মিলছে না।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ